দেশজুড়ে

আজও অবহেলিত বাজুয়ার বধ্যভূমি

স্বাধীনতার ৪৪ বছরেও নির্মিত হয়নি খুলনা জেলাধীন দাকোপ উপজেলার বাজুয়া বধ্যভূমির স্মৃতিসৌধ। যাদের রক্তের বিনিময়ে ১৯৭১ সালে দেশ শত্রুমুক্ত হলো, তাদের সম্মানে কিছু করতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন এলাকার একাধিক প্রবীণ ব্যক্তি। আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা যতীন্দ্রনাথ গাইন জাগো নিউজকে বলেন, বাজুয়াতে যারা দেশের জন্য প্রাণ দিল তাদের স্মরণে আজও আমরা একটা স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করতে পারলাম না। আগামী প্রজন্ম কিভাবে তাদের কথা স্মরনে রাখবে?সূত্রে জানা যায়, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হলে, বাগেরহাট জেলার ভাগা, পিপুল বুনিয়া, নদীরহুলা, গোনাবেলাই থেকে শত শত সাধারণ মানুষ রাজাকারদের অত্যাচারে পশুর নদী পার হয়ে ভারতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাজুয়া স্কুলে আশ্রয় নেন। তাদের সঙ্গে প্রচুর সোনা-গহনা এবং নগদ অর্থ ছিল। খবর পেয়ে পাকসেনাদের দালাল স্থানীয় লাল মিঞা আশ্রয় নেওয়া শরনার্থীদের সঙ্গে এক জরুরী সভা করে বলেন, তোমাদের কোনো ভয় নেই তোমরা এখানে থাক। আমি তোমাদের সহায়তা করবো। এই কথা বিশ্বাস করে শরনার্থীরা স্কুলে অবস্থান করতে থাকেন। অতঃপর লাল মিঞা পাক সেনাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের হত্যা করতে সহায়তা করেন। ১৯৭১ সালের ১১মে দুপুর আনুমানিক ২টায় সবাই স্নান সেরে দুপুরের খাওয়া কেবল শুরু করেছে। হঠাৎ গানবোর্ড থামিয়ে পাকসেনারা গুলিবর্ষণ করে অসহায় নিরীহ শরনার্থীদের উপর। শরনার্থী এবং স্থানীয় বাজুয়া বাজারের তিনজনসহ শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয় সেদিন। সঙ্গে সঙ্গে লুট করা হয় তাদের কাছে থাকা সমস্ত সম্পদ। সেদিন যারা প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন তারা ভারতে গিয়ে আর দেশের মাটিতে ফিরে আসেননি। আর তখন থেকেই বধ্যভূমিটি অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে ছিল। স্থানীয় কিছু যুব সমাজকর্মী উদ্যোগ নিয়ে বধ্যভূমিটিতে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ এবং দেশের অন্যান্য শহীদদের সঙ্গে বাজুয়ার শহীদদের স্মরণ করার জন্য বধ্যভূমিটি রক্ষার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।এ বিষয়ে কথা হয় স্মৃতিসৌধ নির্মাণ কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক অসিত সরকারের সঙ্গে। তিনি বলেন, স্থানীয় যতীন্দ্র নাথ গাইন, কালিপদ শীল, বিষ্ণুপদ রায়, সুভাষ গাইন এবং ভাগার প্রত্যক্ষদর্শী প্রয়াত অমল মজুমদারের কাছ থেকে এই বধ্যভূমির ইতিহাস সংগ্রহ করেছেন। তিনি বলেন, সরকারি সহায়তার অভাবে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা আজও সম্ভব হয়নি। অধ্যাপক জানান, খুলনা-১ এর সাবেক সাংসদ ননীগোপাল মণ্ডল ১১ মে ২০১৩ সালে স্মৃতিসৌধের উদ্বোধন করেন এবং ৩৫ হাজার টাকা বরাদ্দ করেন স্মৃতিসৌধ নির্মাণে। আহ্বায়ক আরও জানান তিনি নিজে ১০ হাজার টাকা দিয়েছেন এবং তার বন্ধুদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ চলছে স্মৃতি সৌধ নির্মাণের জন্য। তবে সরকারি সহায়তা পেলে অতি দ্রুত নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারবেন বলেও জানান তিনি।আলমগীর হান্নান/এমজেড/পিআর

Advertisement