বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ফিভার ক্লিনিকের করোনা পরীক্ষা কেন্দ্রের প্রবেশদ্বারের সামনে বসে আছেন ষাটোর্ধ্ব আবদুল বাতেন। তার বাড়ি কুমিল্লার তিতাস থানার গৌরীপুরে। পাশেই দাঁড়িয়ে আছেন তার স্ত্রী ও এক তরুণ। তাদের হাতে কয়েকটি ব্যাগ, এক্স-রে ও এমআরআইসহ বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট।
Advertisement
করোনা পরীক্ষার জন্য বিএসএমএমইউতে এসেছেন আবদুল বাতেন। কিন্তু প্রবেশদ্বারে কর্তব্যরত নিরাপত্তারক্ষী দেয়ালে টানানো বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট দেখিয়ে তাদের অনলাইনে নিবন্ধন (রেজিস্ট্রেশন) করে আসতে বলছেন।
এ সময় বৃদ্ধ আবদুল বাতেন নিরাপত্তারক্ষীকে বলেন, ‘বাবা, আমি লিভারের রোগী। কুমিল্লা থেকে সকালে এসে আউটডোরে ডাক্তার দেখাইছি। ডাক্তার বলেছেন, করোনা টেস্ট ছাড়া ভর্তি করবে না। করোনা টেস্ট করার একটু সুযোগ দাও।’ কিন্তু নিরাপত্তারক্ষীর একই কথা, ‘আমার কিছুই করার নেই।’
বুধবার (১৯ মে) দুপুরে এ দৃশ্য দেখা যায়। এ সময় বৃদ্ধের স্ত্রী জাগো নিউজকে বলেন, তার স্বামী জটিল লিভারের রোগী। চিকিৎসক বলেন, অপারেশন করাতে হবে। এ কারণে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। তবে করোনার রিপোর্ট ছাড়া রোগী ভর্তি বা অপারেশন করা হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন চিকিৎসক।
Advertisement
তিনি আরও বলেন, অনলাইনে সিরিয়াল দেয়ার বিষয়টি তারা জানতেন না। আন্তঃজেলা পরিবহন চলাচল বন্ধ থাকায় তারা দুই বার বাস বদলে এসেছেন। ঢাকায় তাদের থাকার জায়গা নেই। আজ করোনা পরীক্ষা না করাতে পারলে খুব বিপদে পড়ে যাবেন তারা।
বৃদ্ধ আবদুল বাতেনের মতো জটিল ও দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত অসংখ্য রোগী করোনা পরীক্ষা করাতে এসে এমন নানা ধরনের ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। বিশেষ করে স্বল্পমূল্যে বিএসএমএমইউসহ সরকারি হাসপাতালগুলোতে বিভিন্ন জটিল ও দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্তদের ভিড় বেশি হয়। কিন্তু এ ধরনের জটিল রোগীদের জন্য দ্রুত করোনা শনাক্তের কোনো নিয়ম বা নির্দেশনা নেই।
সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, জটিল ও দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত ও বয়স্ক রোগীদের অনলাইন নিবন্ধন প্রয়োজন হবে না। তারা স্পটেই নিবন্ধনের সুযোগ পাবেন। কিন্তু করোনা পরীক্ষার জন্য বিএসএমএমইউয়ের আউটডোরের চিকিৎসক লিখে দিলেও, তা করাতে এসে ভোগান্তিতে পড়েন আবদুল বাতেন।
শুধু বিএসএমএমইউ নয়, সরকারি প্রায় প্রতিটি হাসপাতালে নামমাত্র (১০০ টাকা) মূল্যে করোনা পরীক্ষা করাতে এসে প্রতিদিন অসংখ্য জটিল ও দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত রোগীকে নানা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সেখানে অনলাইন নিবন্ধনের বাধ্যবাধকতা না থাকলেও নির্দিষ্ট সংখ্যক রোগীকে সিরিয়াল দেয়া হয়। সিরিয়ালের টোকেন পাওয়ার ক্ষেত্রেও নয়-ছয়। এক শ্রেণির দালাল এ নিয়ে ব্যবসা জমিয়ে বসেছে।
Advertisement
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীসহ সারাদেশে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বর্তমানে ৪৭৮টি করোনা পরীক্ষার ল্যাব রয়েছে। তার মধ্যে সরকারি পর্যায়ে রয়েছে ৩৯৯টি ও বেসরকারি পর্যায়ে ৭৯টি।
২০২০ সালের ৮মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। তখন শুধু স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) আরটি-পিসিআর ল্যাবটিই ছিল একমাত্র ভরসা। এক বছরেরও বেশি সময় পর প্রায় ৫শ ল্যাবরেটরি স্থাপিত হলেও সরকারিভাবে ভোগান্তিবিহীন করোনা পরীক্ষার সুযোগ মিলছে না। বেসরকারিভাবে পরীক্ষা করানো গেলেও খরচ অনেক বেশি।
এমইউ/এমএসএইচ/এএসএম