অর্থনীতি

লুবনানের সাড়ে ৪ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগে মামলা

ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদফতর পোশাক বিপণনকারী লুবনান ট্রেড কনসোর্টিয়াম লিমিটেডের বিরুদ্ধে তদন্ত করে প্রায় ৪ কোটি ৬০ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটন করেছে। ভ্যাট ফাঁকির সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ভ্যাট আইনে মামলাও দায়ের করা হয়েছে।

Advertisement

বুধবার (১৯ মে) নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের (মূল্য সংযোজন কর) মহাপরিচালক ড. মইনুল খান এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি জানান, প্রতিষ্ঠানটির মূলত তিনটি ব্র্যান্ড হলো : রিচম্যান আ্যাপারেলস, ইনফিনিটি মেগা মল ও লুবনান এথনিক উইয়ার। রাজধানীর বড় বড় শপিংমলসহ সারা দেশে ১০৮টি বিপণী কেন্দ্র রয়েছে তাদের।

একজন গ্রাহকের ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ থাকায় সহকারী পরিচালক মো. মাহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে ভ্যাট গোয়েন্দার একটি গোয়েন্দা দল রাজধানীর বাড্ডায় প্রতিষ্ঠানটির কারখানা এবং অফিসে অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানকালে প্রতিষ্ঠানের উপস্থিত প্রতিনিধির সহযোগিতায় বিভিন্ন কক্ষ তল্লাশি করে ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে প্রতিষ্ঠানটির মোট ১০৮টি শাখার জমাকৃত মূসকের সারসংক্ষেপের হিসাব (রিটার্ন অনুযায়ী), বাড়ি ভাড়ার চুক্তিপত্র, সিএ ফার্মের অডিট রিপোর্ট, কর্পোরেট চালানের কপি ও আমদানি এলসি সমূহের তথ্যসহ আনুষঙ্গিক বাণিজ্যিক দলিলাদি জব্দ করা হয়।

Advertisement

সরেজমিনে একই সঙ্গে অন্যান্য নির্ভরযোগ্য দফতর থেকে প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট সংক্রান্ত দলিলাদি সংগ্রহ করা হয়। দীর্ঘ তদন্ত শেষে ভ্যাট গোয়েন্দা দল প্রতিষ্ঠানটির মূসক ফাঁকির প্রমাণ পেয়েছে।

তিনি আরও জানান, ভ্যাট গোয়েন্দার তথ্য অনুসারে, তদন্ত মেয়াদে বিক্রয়মূল্যের বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটি ৩৯ কোটি ৮২ লাখ ৫৮ হাজার ৫৬৭ টাকা ভ্যাট পরিশোধ করেছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির প্রদেয় ভ্যাটের পরিমাণ ছিল ৪১ কোটি ৫৮ লাখ ১৫ হাজার ৯৯৫ টাকা। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির অপরিশোধিত ভ্যাট বাবদ ১ কোটি ৭৫লাখ ৫৭ হাজার ৪২৮ টাকা ফাঁকির তথ্য উদঘাটিত হয়।

বিক্রয়মূল্যের বিপরীতে প্রযোজ্য এই ফাঁকি দেয়া ভ্যাটের উপর ভ্যাট আইন অনুসারে ফেব্রুয়ারি/২০২১ পর্যন্ত ৯৫ লাখ ২০ হাজার ৯২৯ টাকা সুদ আদায়যোগ্য হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, তদন্ত মেয়াদে প্রতিষ্ঠানটির স্থান ও স্থাপনার ভাড়ার বিপরীতে ৪ কোটি ৪০ লাখ ৫১ হাজার ৩৬৮ টাকা পরিশোধ করেছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির প্রদেয় ভ্যাট এর পরিমাণ ছিল ৪ কোটি ৪১ লাখ ৬৫ হাজার ৮০ টাকা। এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির অপরিশোধিত ভ্যাট বাবদ ১,১৩,৭১২ টাকার ফাঁকি উৎঘাটন করা হয়।

Advertisement

এই ফাঁকির উপরও ভ্যাট আইন অনুসারে মাস ভিত্তিক ফেব্রুয়ারি/ ২০২১ পর্যন্ত ৭৫,০১৮ টাকা সুদ হিসেবে প্রযোজ্য হবে।

এছাড়া, তদন্ত মেয়াদে সিএ ফার্মের রিপোর্ট মোতাবেক উৎসে ভ্যাট ৩ কোটি ২১ হাজার ৩৭ হাজার ৯৮৫ টাকা পরিশোধ করেছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির প্রদেয় ভ্যাটের পরিমাণ ছিল ৪ কোটি ৯৪ লাখ ১৪ হাজার ৭০০ টাকা। এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির অপরিশোধিত ভ্যাট বাবদ ১ কোটি ৭২ লাখ ৭৬ হাজার ৭১৫ টাকা ফাঁকির উৎঘাটিত হয়।

উৎসে কর্তনের উপর প্রযোজ্য এই ফাঁকি দেয়া ভ্যাটের উপর ভ্যাট আইন অনুসারে ফেব্রুয়ারি/ ২০২১ পর্যন্ত ১৪ লাখ ৬৫ হাজার ৬৪০ টাকা সুদ আদায়যোগ্য হবে।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্ণিত তদন্ত মেয়াদে প্রতিষ্ঠানটির সর্বমোট অপরিশোধিত ভ্যাটের পরিমাণ ৩ কোটি ৪৯ লাখ ৪৭ হাজার ৮৫৪ টাকা এবং সুদ বাবদ ১ কোটি ১০ লাখ ৬১ হাজার ৫৮৭ টাকাসহ ৪ কোটি ৬০ লাখ ৯ হাজার ৪৪২ টাকা পরিহারের তথ্য উদঘাটিত হয়।

তদন্তে আরও দেখা যায় যে, প্রতিষ্ঠানটি সরকারের ভ্যাট ফাঁকির উদ্দেশ্যে নানান ধরনের অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছে, যা ভ্যাট আইন অনুসারে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এসব অনিয়মের মধ্যে রয়েছে মাসিক রিটার্নে অসত্য তথ্য প্রদান করা এবং ভুয়া ভ্যাট চালান ইস্যু করা।

এসব অনিয়ম ও ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ এনে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদফতর এ সংক্রান্ত একটি মামলা দায়ের করেছে।

তদন্তে উদ্ঘাটিত পরিহারকৃত ভ্যাট আদায়ের আইনানুগ পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের জন্য প্রতিবেদনটি কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, ঢাকা উত্তরে প্রেরণ করা হবে।

এমএএস/এমএইচআর/এমএস