মুখের মেছতার দাগ নিয়ে অনেকেই উদ্বিগ্ন থাকেন। কারণ এটি সারানোর জন্য কার্যকরী কোনো উপায়ের সন্ধান জানেন না অনেকেই। আর তাইতো বিভিন্নজনের পরামর্শে একের পর এক কেমিকেলযুক্ত প্রসাধনী ব্যবহারের ফলে মেছতার দাগ আরও গাঢ় হয় ত্বকে। মেছদার দাগ মুখের সব সৌন্দর্যই যেন নষ্ট করে দেয়।
Advertisement
প্রথমেই জেনে নিন মেছতা কী? চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায়, মেছতাকে বলা হয় মেলাজমা অথবা কোলাজমা। এটি একটি প্রচলিত ত্বকের সমস্যা। মেছতা হলে ত্বকে হালকা বাদামি রঙের দাগ পড়ে। মুখ-কপালসহ বুকেও হতে পারে মেছতা।
যেসব কারণে মেছতা হয়ে থাকে- মেছতা হওয়ার বিভিন্ন কারণের মধ্যে অন্যতম হলো জিনগত বিষয়। যেমন- পরিবারের কারো থাকলে পরবর্তী বংশধরদের মধ্যে মেছতা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। দ্বিতীয়ত, নারীদের ক্ষেত্রে মেছতা হওয়ার একটি বড় কারণ জন্মনিয়ন্ত্রক ওষুধ খাওয়া। এ ছাড়াও গর্ভাবস্থায় অদিকাংশ নারীর মুখে মেছতা পড়তে দেখা যায়।
এমনকি মেনোপোজাল অবস্থাতেও হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি নেওয়ার ফলে অনেক নারীর মুখে মেছতার দাগ দেখা যায়। এ ছাড়াও আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো, সানস্ক্রিন চাড়া সূর্যের আলোর সংস্পর্শে আসা। এ কারণেই মূলত এদেশের বেশিরভাগ নারীর মেছতা হয়ে থাকে।
Advertisement
মেছতার প্রকারভেদও আছে- ত্বকের লেয়ার অনুযায়ী মেছতা দুই ধরনের হতে পারে। ত্বকের ওপরের লেয়ারে যদি হয়ে থাকে; তাহলে এটি এপিডার্মাল মেলাজমা। আর ডার্মাল লেয়ারে যদি হয়ে থাকে, তাহলে একে ডার্মাল মেলাজমা বলা হয়। মেলার এরিয়াতে হলে মেলার মেলাজমা বলা হয়। এ ছাড়াও সূর্যের আলো পড়ে এ রকম যেকোনো স্থানে মেছতা হতে পারে।
মেছতা একবার হলে তা একেবারে দূর করা সম্ভব নয়। তাই বাজারের বিভিন্ন ধরনের কেমিকেলযুক্ত প্রসাধনীতে ভরসা না রেখে বরং ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করুন। ঘরোয়া উপায়ে প্রাকৃতিক বিভিন্ন ভেষজ রূপচর্চা ব্যবহারের ফলে ত্বকের কোনো পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হয় না। আর নিয়মিত ব্যবহারের ফলে এসময় মেছতার মতো দাগও সেরে যায়। জেনে নিন রান্নাঘরের তেমনই ৩ উপাদান সম্পর্কে-
হলুদ: সবার রান্নাঘরেই হলুদ থাকে। রান্নায় ব্যবহারের পাশাপাশি রূপচর্চা এমনকি শারীরিক বিভিন্ন সমাধান আছে হলুদে। হলুদে থাকা কার্কিউমিন ত্বকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ-বলে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। কার্কিউমিনে ইউভি প্রতিরক্ষামূলক গুণাবলী আছে- একটি হলো, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অন্যটি অ্যান্টি-মুটাগেন। এ দুটি উপাদানই প্রদাহ কমায়।
এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, কার্কুমিন টাইরোসিনেজ এবং মেলানিন উত্পাদন বাঁধা দেয়। এরা উভয়ই মেছতার দাগের জন্য দায়ী। অন্য আরেকটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, কার্কুমিনে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যগুলো গভীর কালো দাগ দূর করতে সক্ষম।
Advertisement
অ্যালোভেরা জেল: ত্বক-চুল এমনকি স্বাস্থ্রের জন্যও অত্যন্ত উপকারী এক উপাদান হলো অ্যালোভেরা। এটি কেবল ত্বকের রোদে পোড়া দাগ দূর করে না বরং মেছতার দাগও ভ্যানিশ করতে পারে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, গর্ভবতী নারীদের মুখে পড়া প্রাথমিক মেছতার দাগ কমাতে বিশেষভাবে অবদান রেখেছে অ্যালোভেরা।
প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং ইউভি-প্রতিরক্ষামূলক গুণাবলী আছে অ্যালোভেরায়। এ ছাড়াও অ্যালোভেরা প্রাকৃতিকভাবে ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, মেছতার ফলে ত্বক শুষ্ক হয়ে ওঠে। এ সমস্যার সমাধানে অ্যালোভেরা দারুন কাজে দেয়। নিয়মিত অ্যালোভেরার জেল ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি মুখের মেছতার দাগ সহজেই দূর করতে পারবেন।
লেবুর রস
লেবুর রসে প্রাকৃতিক ব্লিচিং এজেন্ট আছে, এটি সবারিই জানা। ত্বকের যেকোনো কালচে দাগ হালকা করে দিতে পারে লেবু। তবে সরাসরি মুখে লেবুর রস ব্যবহার করবেন না। এর সঙ্গে যেকোনো ফেসমাস্ক ব্যবহার করতে পারেন। এ ছাড়াও হলুদের গুঁড়োর সঙ্গে লেবুর রস ও মধু মিশিয়েও ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাবেন।
মেছতা প্রতিকারে ঘরোয়া টোটকা ব্যবহারের পাশাপাশি আরও যেসব বিষয় মেনে চলা জরুরি-
>> ত্বক নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে।
>> বেশি বেশি পানি পান করতে হবে
>> অতিরিক্ত মিষ্টিজাতীয় খাবার খাবেন না।
>> জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়া বন্ধ করুন।
>> রোদে বের হওয়ার আগে অবশ্যই সানস্ক্রিন ক্রিম ব্যবহার করুন।
সূত্র: কসমোপলিটন/ক্লিয়ারিফিক্স
জেএমএস/জেআইএম