মতামত

রোজিনা নির্যাতনে কি উজ্জ্বল হলো সরকারের ভাবমূর্তি?

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই মুহূর্তে সবচেয়ে অস্বাস্থ্যকর জায়গাগুলোর একটি- ফেসবুকে এই মন্তব্য পড়ে যখন আমার মধ্যে উৎকণ্ঠা, অস্বস্তি তৈরি হয় তখন এই ভেবে আমি অন্তত স্বস্তি বোধ করি যে; এখনও আমার মধ্যে ভালো আর মন্দের বোধ কাজ করে। আমার এই বোধটি পূর্ণমাত্রায় ক্রীড়াশীল। খুবই হতাশ হই, বিষণ্ণ বোধ করি যখন অনেক মেধাবী, জ্ঞানী গুণী, বড় পদে থাকা লোকদেরও বোধ লোপ পায়। ভালো আর মন্দ, আলো আর আঁধার, উচিত আর অনুচিতের পার্থক্য করতে তারা ব্যর্থ হন। বড় মায়া লাগে, বড় করুণা হয় তাদের এই অস্বাস্থ্যকর বোধের বিকৃতি দেখে।

Advertisement

মানুষ ধিক্কার দিচ্ছে, ছিঃ ছিঃ করছে, গাল দিচ্ছে, ট্রল করছে তবুও কিছু যায় আসে না আমাদের। বোধটি হয়তো বিলুপ্ত হয়ে গেছে অনেক আগেই। যার জন্য বুঝতে পারছি না, শুনতে পারছি না, দেখতে পারছি না- চোখ-কান থাকার পরও।

সহকর্মী রোজিনার ছবি দেখলাম। শত শত পুলিশে ঘেরা। ক্রিমিনাল আফজাল আর মিঠুকে যখন গ্রেফতার করা হয় তখনও এত পুলিশ দেখিনি। রোজিনা কী এমন অপরাধ করেছে যা জামিন অযোগ্য? রোজিনার করা অনুসন্ধানী প্রতিবেদনগুলোর ক্লিপিং ফেসবুকে ভাসছে। দেখলে বা পড়লে যা বোঝার তা বোঝা যায়। স্বাস্থ্যের ড্রাইভারের যখন প্রায় ১০০ কোটি টাকা পাওয়া যায় তখন তো তাকে তৎক্ষণাৎ পুলিশে দিল না, শাহেদকে যারা ‘মাফিয়া শাহেদ’ বানালো তাদের বিরুদ্ধে তো কেউ টুঁ শব্দটি করলো না। ডিজি তো বহুদিন দিব্যি বহাল তবিয়তে ছিলেন।

রোজিনার অপরাধ এখনও আমার কাছে অবোধগম্য। হয়তো এটি বুঝবার মতো মেধায় আমি উত্তীর্ণ হতে পারিনি। যারা বুঝেছেন আর আমার না বোঝার বোধে হয়তো এক বিশ্ব দূরত্ব। বোধের পার্থক্য।

Advertisement

রোজিনাকে বলা হয়েছে ‘জনৈক সাংবাদিক’। খুব হাস্যকর। রোজিনা দেশে এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পরিচিত। কেন তাকে একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়েছিল ঘণ্টার পর ঘণ্টা? রোজিনার প্রবেশ কী অবৈধ নিষিদ্ধ ছিল? অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড ছাড়া কি ঢুকেছিল রোজিনা?

অতিরিক্ত সচিবের সবকিছুই অতিরিক্ত। ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া রোজিনাকে নির্যাতনের ছবিটি তা বড় অশ্লীল, বীভৎস। ফাইলে এমনকি তথ্য ছিল যা প্রকাশ হলে সরকারের ভাবমূর্তির ক্ষতি হবে এমন প্রশ্নও অনেকের।

রোজিনার ফেসবুক আইডিও ডিলিট করা হয়েছে। কে করলো, কারা করলো, কেন করলো। রোজিনা নিজে? অনেক প্রশ্ন, বিস্মিত হওয়ার মতোই। কেউ কেউ হয়তো ইতোমধ্যে রোজিনার চরিত্র হননের প্রজেক্ট পেয়ে সফল হওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। অনেকে হয়তো তাকে নিজেদের স্বার্থে ‘জামায়াত-বিএনপি’ বলার অভিপ্রায়ে আছেন। আমাদের দেশে সংবাদপত্রকে দেশের শত্রু বলছেন কেউ কেউ, সাংবাদিকতাকে ‘তথ্য চুরি’ বলা হচ্ছে এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে? আমরা কেবল মুখেই বলি সংবাদপত্র রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। কিন্তু বিশ্বাস আর সম্মান করি কজন?

রোজিনা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করবে এমন আশঙ্কা করায় তাকে আটক, হেনস্তা, নির্যাতন। কিন্তু যারা রোজিনাকে নির্যাতনের চূড়ান্ত বন্দোবস্ত করেছে তারা কি সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করলো?

Advertisement

ভাবমূর্তি কী আর কীসে উজ্জ্বল হয় এই বোধটি জন্মাবে কবে? কে বোঝাবে কাকে?

লেখক : সম্পাদক আজ সারাবেলা, সদস্য, ফেমিনিস্ট ডট কম, যুক্তরাষ্ট্র।

এইচআর/জিকেএস