ধর্ম

হিন্দুদের ভোটেই গ্রামপ্রধান হলেন হাফেজ আজিম

হাফেজ আজিমুদ্দিন খান। কুরআনের হাফেজ ও আলেম। হিন্দুদের ভোটে গ্রামের পঞ্চায়েত কমিটির প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। ভারতের অযোধ্যায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এ অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে অযোধ্যা জেলার রুদৌলি বিধানসভা কেন্দ্রের মাভাই ব্লকের রাজানপুর গ্রামের হিন্দু বাসিন্দারা। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়া, হিন্দুস্থান টাইমস।

Advertisement

যে অযোধ্যায় মুসলিমদের হাজার বছরের মুসলিম ঐতিহ্য স্থাপনা ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল, সেখানের একটি গ্রামের সব হিন্দুরা একমাত্র মুসলিম পরিবারের প্রধান হাফেজ আজিমকে পঞ্চায়েত প্রধান হিসেবে নির্বাচিত করেছেন।

ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর এক প্রতিবেদনে জানায়, অযোধ্যা জেলার একটি গ্রাম রাজানপুর। গ্রামের সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুরা তাদের পঞ্চায়েত প্রধান হিসেবে একজন হাফেজে কুরআনকে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত করেছেন।

ওই গ্রামের একমাত্র মুসলিম পরিবার এই আলেম হাফেজ আজিমের পরিবার। পুরো গ্রাম থেকে পঞ্চায়েত প্রধান হওয়ার ভোটে ৭ জন হিন্দুসহ মোট ৮জন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। অর্থাৎ হাফেজ আজিম ছাড়া বাকি ৭ জনই হিন্দু।

Advertisement

অথচ ভোট গণনার পর দেখা যায়, সর্বাধিক ২০০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন হাফেজ আজিম। আর তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী পেয়েছেন ১১৬ ভোট। ৮৪ ভোট বেশি পেয়ে তিনি পঞ্চায়েত প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন।

হিন্দুস্থান টাইমস আরও জানায়, এ নির্বাচনের হিন্দু প্রার্থীরা চমৎকার ও লোভনীয় অনেক সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েও জিততে পারেনি। হিন্দুপ্রার্থীরা গ্রামবাসীদের পেনশন এবং প্রধানমন্ত্রীর গ্রাম যোজনার আওতায় প্রত্যেকে একটি করে বাড়ি দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও গ্রামবাসীরা হাফেজ আজিমকেই প্রধান হিসেবে বেছে নেন।

হাফেজ আজিম গ্রামটির একমাত্র মুসলিম পরিবার। তিনি পেশায় একজন কৃষক। শিক্ষা জীবনে তিনি মাদ্রাসায় আলিম এবং হাফেজ ডিগ্রী অর্জন করেন। প্রায় ১০ বছর পড়াশোনা শেষে পারিবারিক কৃষি পেশায় যোগ দেন তিনি।

হাফেজ আজিমের অনুভূতি

Advertisement

পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আলোচনায় আসা হাফেজ আজিম গণমাধ্যমকে জানান, গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে এ বিজয় আমার ঈদ উপহার।

গ্রামবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, এ গ্রামের প্রায় সবাই হিন্দু। তারা আমার ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখেছেন বলে আমি তাদের ওপর কৃতজ্ঞ।

গ্রামবাসীর বক্তব্য

রাজানপুর গ্রামের বাসিন্দা শেখর সাহু জানান, পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থীরা কে কোন ধর্মের তা দেখে আমরা ভোট দেয়নি। আমরা এই ভেবে ভোট দিয়েছি যে, কিসে আমাদের ভালো হবে।

আমরা কট্টর হিন্দু। কিন্তু আমরা আমাদের গ্রাম প্রধান হিসেবে একজন আলেমকে বেছে নিয়েছি। কারণ আমাদের দেশে হাজার বছর ধরে যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত চলে আসছে; সেটিকেই আমরা পাথেয় মনে করেছি এবং প্রাধান্য দিয়েছি।

এদিকে হাফেজ আজিম বিজয়ী হওয়ায় অযোধ্যা মসজিদ ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক আখতার হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, এ জয় ভারতবর্ষের বহুত্ববাদের প্রকাশ। হাফেজ আজিমের এ জয় শুধু রাজানপুর গ্রামের হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি উদাহরণ নয়, এটি এ ঐতিহাসিক অযোধ্যা নগরী এবং ভারতবর্ষের সম্প্রীতির এক অনন্য উদাহরণ। এ বিজয় আমাদের দুই ধর্মের মানুষকে হাতে হাত রেখে সব অন্ধকার দূর করে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।

এমএমএস/জেআইএম