ঢাকা: বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেছেন, টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে দরকার এসএমই ব্যাংকিং। আমরা চাই, ব্যাংকগুলো নতুন ব্যবসায়িক মডেল হিসেবে ‘এসএমই ব্যাংকিং’-কে অগ্রাধিকার দিক। নিজেরা মুনাফা করুক, এসএমই উদ্যোক্তাদেরও বেড়ে ওঠার সুযোগ করে দিক।বুধবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে এসএমই অর্থায়ন মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।এ সময় এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ ইহসানুল করিম, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহকারি মুখপাত্র এএফএম আসাদুজ্জামান, এসএমই বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মাসুম পাটোয়ারিসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।গভর্নর বলেন, দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় প্রতিবছরই বর্ধিত হারে এসএমই, কৃষি ও নারী উদ্যোক্তা খাতে ঋণ প্রদান করছে। সহায়ক জামানত প্রদানে অপারগতা, ব্যবসা ব্যবস্থাপনায় দক্ষতার অভাব, ঝুঁকি মোকাবেলায় সীমিত সামর্থ্য, ব্যবসায়িক সাফল্য সম্পর্কিত তথ্য সংরক্ষণ ও প্রদানে সীমাবদ্ধতা ইত্যাদি চ্যালেঞ্জ মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা অর্থায়নে বড় বাধা। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়ক নীতিমালা ও ক্রমাগত উৎসাহে ব্যাংকগুলো মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের অর্থায়নে এগিয়ে এসেছে। নারী উদ্যোক্তা, সৃজনশীল উদ্যোক্তা ও প্রতিবন্ধী উদ্যোক্তাদেরও ঋণ প্রদান করছে আমাদের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। আগে নারী উদ্যোক্তারা ব্যাংকে যেতে ভয় পেতেন, সেখানে এখন তারা ঋণের শর্তাবলী নিয়ে ব্যাংকারদের সাথে দরকষাকষি করতে পারছেন। ব্যাংকিং খাতে এ অামুল পরিবর্তনের যে সূচনা হয়েছে তাতে বাংলাদেশ সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশাপাশি ব্যাংকারদের নিজেদের ঐতিহ্যগত অবস্থান থেকে বেরিয়ে এসে এসএমই ব্যাংকিংয়ের মতো উন্নয়নমুখী ব্যাংকিং সেবা সম্প্রসারণে প্রশংসনীয় উদ্যোগও রয়েছে। ব্যাংকারদের এ পরিবর্তনকে অবশ্যই স্বীকৃতি দেয়া প্রয়োজন।আতিউর রহমান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকিং খাতে এসএমই-বান্ধব পরিবেশসহ নতুন উদ্যোক্তা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং নারীর ক্ষমতায়নে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এজন্যে পৃথক এসএমই বিভাগ খোলা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ভিত্তিক এসএমই ঋণ বিতরণ কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। গত চার বছরে (২০১০-২০১৩) মোট ১৮ লাখ ৩৫ হাজার এসএমই উদ্যোক্তাকে ২ লক্ষ ৬২ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। যার মধ্যে ৯০ হাজার নারী উদ্যোক্তাকে ৯ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে। চলতি বছরে এসএমই ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৮ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা। বছরের প্রথম ছয় মাসে বিতরণ করা হয়েছে ৪৭ হাজার ১৬১ কোটি টাকা, যা মোট লক্ষ্যমাত্রার ৫৩ শতাংশ। দেশের অঞ্চলভিত্তিক অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর জন্যে ক্লাস্টারভিত্তিক এসএমই ঋণ বিতরণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ১৬ কোটি মানুষের ছোট্ট আমাদের এই বাংলাদেশ। আমরা যদি আমাদের এ বিশাল জনশক্তিকে কর্মে নিয়োজিত করতে পারি তাহলে এ জনসংখ্যাধিক্য আমাদের জন্যে আশীর্বাদ হয়ে উঠবে। বিগত দু’দশক ধরে খাদ্য উৎপাদন, দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জনে আমরা ব্যাপক সাফল্য লাভ করেছি। সামাজিক বিভিন্ন সূচকেও আমাদের অগ্রগতি উৎসাহব্যঞ্জক। অতি সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের নতুন ব্যবসা শুরুর সহায়ক পরিবেশ বিষয়ক সূচকেও আমাদের ১২ ধাপ উন্নয়ন ঘটেছে। বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ২০ লাখ নতুন চাকরিপ্রার্থী শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে। এর মধ্যে অর্ধেক দেশে ও বিদেশের শ্রমবাজারে চাকরি পাচ্ছে। আমাদের সরকারি-বেসরকারি খাত ও বিদেশের শ্রমবাজার ক্রমবর্ধমান এ কর্মসংস্থান চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। তাই কর্মসংস্থান সৃষ্টি আমাদের জন্যে একটি চ্যালেঞ্জ এবং এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের যথোপযুক্ত কৌশল অবলম্বন করতে হবে।
Advertisement