আন্তর্জাতিক

ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ২৪৪ চিকিৎসকের মৃত্যু

ভারতে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা সংক্রমণ কিছুটা কমেছে। কিন্তু মৃত্যুর সংখ্যা চার হাজারেরও বেশি। স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ব্যাপক হারে চাপ বেড়েছে। এ চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। প্রতিনিয়ত প্রাণও হারাচ্ছেন তারা। ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন এক বিবৃতিতে বলেছে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর থেকে ভারতে করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৪৪ জন চিকিৎসক। তাদের মধ্যে একদিনে সর্বোচ্চ ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

Advertisement

তবে কোন দিন এই রেকর্ড মৃত্যু হয়েছে, তা বলা হয়নি বিবৃতিতে।

এবার মৃতদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ হলেন- ডা. আনাস মুজাহিদ। দিল্লির সরকারি জিটিবি হাসপাতালে জুনিয়র রেসিডেন্ট ছিলেন ২৫ বছরের আনাস। করোনা ধরা পড়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই ইন্ট্রাক্রেনিয়াল হ্যামরেজ (স্কালের মধ্যে ব্লিডিং) হয়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই প্রাণ হারান এই তরুণ।

করোনাভাইরাসে মৃত চিকিৎসকদের মধ্যে প্রবীণতম হলেন- ভারতের বিশাখাপত্তনমের অধ্যাপক সত্যমূর্তি। তার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ে ৬৯ জন চিকিৎসক মারা গেছে বিহারে। উত্তরপ্রদেশ (৩৩), দিল্লি (২৬)।

Advertisement

অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতিতে জানানো হয়, ভারতে করোনার প্রথম ধাক্কায় (গত বছর) প্রাণ হারিয়েছিলেন ৭৩০ জন চিকিৎসক।

মৃতদের মধ্যে মাত্র ৩ শতাংশ কোভিড-১৯ টিকা নিয়েছিলেন। কেন চিকিৎসকরাই নেননি টিকা? সেই প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে।

এদিকে ভারতে গত ২৪ ঘণ্টায় ২ লাখ ৮১ হাজার ৩৮৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। গত ২১ এপ্রিলের পর দেশটিতে এই প্রথম ২৪ ঘণ্টায় ৩ লাখের নিচে করোনা রোগী শনাক্ত হলো। ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে করোনায় মারা গেছেন ৪ হাজার ১০৬ জন।

সবশেষ এই তথ্য নিয়ে ভারতে করোনায় সংক্রমিত মোট শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৪৯ লাখ ৬৫ হাজার ৪৬৩। করোনায় দেশটিতে মোট মারা গেছেন ২ লাখ ৭৪ হাজার ৩৯০ জন।

Advertisement

ভারতে শনিবার ৩ লাখ ১১ হাজার ১৭০ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এদিন দেশটিতে করোনায় মারা যান ৪ হাজার ৭৭ জন। শুক্রবার শনাক্ত হয় ৩ লাখ ২৬ হাজার জন। এদিন মারা যান ৩ হাজার ৯৮০ জন। বৃহস্পতিবার শনাক্ত হয় ৩ লাখ ৪৩ হাজার। এদিন মারা যান ৪ হাজার মানুষ।

গত মার্চের মাঝামাঝিতে ভারতে এক দিনে শনাক্ত করোনা রোগীর সংখ্যা ছিল ২০ হাজারের কাছাকাছি। তারপর দেশটিতে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে সংক্রমণ। গত ৩ এপ্রিল ভারতে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দুই কোটির মাইলফলক ছাড়ায়।

গত ৩০ এপ্রিল ভারতে প্রথম এক দিনে চার লাখের বেশি মানুষের করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে। তারপর একাধিক দিন দেশটিতে চার লাখের বেশি রোগী শনাক্ত হয়।

৭ মে ভারতে প্রথম এক দিনে চার হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। তারপর একাধিক দিন দেশটিতে চার হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ গত ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুর দিকে আরম্ভ হয়। ভারতে করোনার সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করায় দেশটি তার সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্যগত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। অক্সিজেন, জরুরি ওষুধ, হাসপাতালে শয্যার অভাবসহ নানা গুরুতর সংকটে দেশটির স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম।

দেশটিতে করোনা রোগীর সংখ্যা ব্যাপকভাবে বাড়তে থাকায় চাপ সামাল দিতে হাসপাতালগুলো হিমশিম খাচ্ছে। হাসপাতালে পাওয়া যাচ্ছে না শয্যা। অনেকের অবস্থা গুরুতর হলেও হাসপাতালে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন না।

ঘরে রেখে তাদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাবে রোগীদের মৃত্যুর খবর আসছে। এমন পরিস্থিতিতে ভারতের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা।

এমআরএম/এএসএম