জাতীয়

হাসপাতালে ৮০ শতাংশ শয্যা খালি তবুও দুশ্চিন্তায় বিশেষজ্ঞরা

রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে ৮৪ শতাংশ সাধারণ শয্যা ও ৭৫ শতাংশ ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) শয্যা বর্তমানে রোগীশূন্য। এরপরও দুশ্চিন্তায় স্বাস্থ্য ও রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা। আগামী এক দুই সপ্তাহের মধ্যে ফের করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন তারা। করোনার সংক্রমণরোধে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে ও পরে গ্রামে যাওয়া ও ঈদ শেষে শহরে ফিরে আসা লাখো মানুষের জনস্রোতের কারণে ফের সংক্রমণ ও মৃত্যু বৃদ্ধির এই আশঙ্কা তাদের।

Advertisement

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি ৪২টি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে মোট সাধারণ শয্যা পাঁচ হাজার ২৪১টি (১৫টি সরকারি হাসপাতালে শয্যা তিন হাজার ৪৪০ এবং বেসরকারি ২৭টিতে এক হাজার ৮০১টি)। সরকারি হাসপাতালে বর্তমানে দুই হাজার ৭৪৫টি শয্যা এবং বেসরকারি হাসপাতালে এক হাজার ৬৭০টি শয্যা খালি। শতাংশের হিসাবে সরকারি হাসপাতালের ৮০ শতাংশ এবং বেসরকারি হাসপাতালে ৯৩ শতাংশ সাধারণ শয্যা রোগীশূন্য।

এ ছাড়া সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ৮৫৫টি আইসিইউ (সরকারি ৩৭৪ ও বেসরকারি ৪৮১টি) শয্যার মধ্যে বর্তমানে মোট ফাঁকা রয়েছে ৬৩৮টি। এর মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ২৪৭টি ও বেসরকারি হাসপাতালের ৩৯১টি শয্যা খালি রয়েছে। শতাংশের হিসাবে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে আইসিইউ শয্যা ৭৫ শতাংশ খালি। এর মধ্যে সরকারিতে ৬৬ শতাংশ এবং বেসরকারিতে ৮১ শতাংশ আইসিইউ শয্যা খালি। তবুও কেন করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু নিয়ে শঙ্কিত স্বাস্থ্য ও রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা, জনমনে এ প্রশ্ন উঠতেই পারে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র ও রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের (সিডিসি) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম ঈদে যারা গ্রামে গেছেন তাদেরকে ঈদের আগের মতো গাদাগাদি করে শহরে ফিরে না এসে এক দুই সপ্তাহ পর ফিরে আসার অনুরোধ জানান। রোববার (১৬ মে) করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কিত ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমরা করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মাঝামাঝি আছি। একসঙ্গে লাখো মানুষ ফিরে আসলে সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়বে। দেশে চলমান টিকাদান কার্যক্রম আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে শেষ হচ্ছে। বিভিন্ন উৎস্য থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা সংগ্রহের চেষ্টা চলছে।’

Advertisement

করোনার সংক্রমণ রোধে এ মুহূর্তে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই বলেও মন্তব্য করেন এই কর্মকর্তা।

গত কয়েকদিন টানা সংক্রমণ ও মৃত্যু সংখ্যা কমে এসেছে। সর্বশেষ রোববার করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৩৬৫ জন ও মৃত্যু ২৫ জনে নেমে এসেছে। মাসখানেক আগে সর্বোচ্চ আক্রান্ত সাত হাজার ছাড়িয়ে যায় ও মৃত্যু শতক ছাড়ায়। বর্তমানে রাজধানীসহ সারাদেশে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের বেশিরভাগ শয্যা ফাঁকা রয়েছে। তবে এতে আত্মতুষ্টিতে ভোগার সুযোগ নেই। ঈদের আগে যেভাবে মানুষ বাড়ি ফিরেছে তাতে সংক্রমণ বাড়তেই পারে।

এর আগে ঈদের দিন ঢামেক হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ড পরিদর্শনকালে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, ‘সারাদেশে করোনা চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক শয্যা, আইসিইউ ও আইসিইউ সমতূল্য শয্যা, হাই ডিপেনডেনসি শয্যা, হাইফ্লো নাজেল ক্যানুলা, অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ও অক্সিজেন সিলিন্ডারের মজুদ রয়েছে। তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেখা গেছে, করোনার সংক্রমণ অব্যাহতভাবে বাড়তে থাকলে নির্দিষ্ট সময় পর অতিরিক্ত রোগীর চাপে হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে এদেশে এমনটা হওয়া অমূলক নয়। তাই সবাইকে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানাচ্ছি।’

এমইউ/ইএ/জিকেএস

Advertisement