জাগো জবস

পরিশ্রম করে ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন হাছিনা

সাজেদুর আবেদীন শান্ত

Advertisement

হাছিনা বেগমের জন্ম পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার হাজরাডাঙ্গার আঠারোগ্রামে। এক ভাই-এক বোনের মধ্যে হাছিনাই বড়। তার নানার কোনো ছেলে না থাকায় তাদের সঙ্গেই থাকতেন নানা-নানি। হাছিনার বাবা-মা কৃষিকাজের ওপরই নির্ভরশীল। হাছিনা তখন স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছেন। নানা বার্ধক্যজনিত কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন। মৃত্যুপথযাত্রী হঠাৎ আবদার করে বসেন, তিনি নাতি জামাই দেখে যেতে চান। পাত্র খোঁজা শুরু হয়। এরমধ্যে সে বোদা উপজেলার চন্দনবাড়ি ইউনিয়নের কুমারপাড়ায় খালার বাড়ি ঘুরতে যায়। সেখানে তাকে দেখে একটি পরিবার বিয়ের প্রস্তাব দেয়।

২০০৯ সালে কুমারপাড়ার আবুল হোসেনের সঙ্গে বিয়ে হয়। বাল্যবিবাহের কবলে পড়ে পড়াশোনাও আর হলো না। বিয়ের মাস ছয়েক পর নানা আফসার মন্ডল মারা যান। বিয়ের পর তিনি শ্বশুরবাড়িতে চলে যান। তাদের কোনো ভিটা ছিল না। অন্যের জমিতে থাকতেন। ঠিকঠাক খেতে পারতেন না তিন বেলা। এক বেলা খেতেন, এক বেলা অনাহারে থাকতেন। কাপড়-চোপড়েরও কষ্ট ছিল অনেক।

বিয়ের এক বছর পর তিনি বুঝতে পারেন, তাকে কিছু একটা করতে হবে। বাবার বাড়িতে থাকতে মায়ের সাথে হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল পালনের অভিজ্ঞতা ছিল। সেইসঙ্গে মায়ের মত করে নকশি কাঁথা সেলাইয়ের কাজটুকুও শিখেছিলেন। একটি কাঁথা সেলাই করলে পাঁচশ টাকা পাওয়া যায়। যেই ভাবা; সেই কাজ। শুরু করলেন গরু এবং ছাগল পালন। নিজের নয়, বর্গা নিয়ে। এরপর হাঁস-মুরগিও করলেন আস্তে আস্তে কাঁথা সেলাইয়ের টাকায়। বর্গা (আদি) নেওয়া গরু-ছাগল থেকে নিজের গরু এবং ছাগল হলো। এভাবেই একটু একটু করে স্বচ্ছলতার মুখ দেখেন তিনি।

Advertisement

হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল পালন করে ২ বছর আগে নিজেদের জন্য জায়গা কিনেছেন। সেখানে নতুন বাড়ি করেছেন। পশু পালনের মাধ্যমে জমি ইজারা নিয়েছেন প্রায় দেড় বিঘা। স্বামী-স্ত্রী সমানভাবে পরিবারের উন্নতির জন্য কাজ করছেন। বাড়ির উঠানে ও ক্ষেতে আলু, রসুন, পেঁয়াজ, নাপা শাক, লাউ, শিমসহ নানা ধরনের সবজি চাষ করেন। সেগুলো থেকে নিজেদের খাওয়া হয় আবার বিক্রিও করা যায়।

বাড়ির চারদিকে বিভিন্ন ফলের গাছ এবং সুপারি গাছ লাগিয়েছেন। শুধু সুপারির চারা বিক্রি করেই হাছিনা বছরে আয় করেন ১০ হাজার টাকার উপরে। স্বামী বাইরে কাজ করেন। তিনি বাড়িতে এবং নিজের ফসল চাষে পরিশ্রম করেন। শ্বশুর, শাশুড়ি ও একটি মেয়ে নিয়ে বাড়িতে ব্যস্ত সময় পার করেন তিনি। তিনি মনে করেন, দু’জনে মিলে কাজ করলে সংসারে উন্নতি হবে।

এ ব্যাপারে হাছিনা বেগম বলেন, ‘আমি বাড়িতে কাজ করি আর স্বামী বাইরে কাজ করন। বাড়িতে হাঁস পালন করে বিক্রি করেছি গরু কিনব বলে। বর্তমানে আমার ৪টি ছাগল ও ২০টি মুরগী আছে।’

পরিশ্রম সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে আরও কিছু জমি করতে চাই। যাতে অন্যের জমিতে বা বাড়িতে কাজ করতে না হয়। বেশি করে নার্সারি, হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল পালন করতে চাই। এখন আমার অভাব নেই। কোনো রাতে না খেয়ে থাকতে হয় না।’

Advertisement

‘ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়’—হাছিনা বেগম তার একটি উদাহরণ সৃষ্টি করা নারী। তিনি ভাগ্য পরিবর্তনের কারিগর। করোনাকালে তাকে না খেয়ে থাকতে হয়নি। পুষ্টি উন্নয়নে অবদানের জন্য জাপানভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ড থেকে অর্জন করেছেন ‘হাঙ্গার ফ্রি প্রাইজ-২০২০’। প্রাইজ মানির অর্থটিও তিনি জমি কেনার কাজে লাগিয়েছেন।

হাছিনা বিশ্বাস করেন, পরিশ্রম না করলে নিজের উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব নয়। গত দু’বছর ধরে তিনি হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ডের পুষ্টি বিষয়ক উঠান বৈঠকে মাসে দু’দিন অংশগ্রহণ করেন। এতে তিনি পুষ্টি, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, নিরাপদ সবজি উৎপাদন ও রান্নার পদ্ধতি সম্পর্কে সচেতন হয়েছেন।

লেখক: ফিচার লেখক ও গণমাধ্যমকর্মী।

এসইউ/জিকেএস