লকডাউন কাকে বলে, কীভাবে তা প্রয়োগ করতে হয়, জানতে এবার সত্যি সত্যি সরকারের বিভিন্ন দফতরের কর্তাদের মনে হয় বিদেশ পাঠানোর প্রয়োজন পড়েছে। পুকুর খনন করা শিখতে বা আজগুবি আরও অনেক কারণে তাদের বিদেশ যাওয়া নিয়ে জনগণের মধ্যে হাস্যরস ছড়িয়ে পড়েছিল। ব্যঙ্গ কৌতুক কম হয়নি। বাতিল হয়েছে সেসব যাত্রা। এবার জনগণ নিজেরাই জোর করে কর্তাদের উড়োজাহাজে তুলে দেবে। সরকার না চাইলেও নিজেরাই হয়তো চাঁদা তুলে খরচের ব্যবস্থা করবে। কারণ করোনার এক বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও লকডাউনের প্রকৃতচিত্র থেকে জনগণ শুধু বঞ্চিতই হচ্ছে। প্রথম ঢেউ, দ্বিতীয় ঢেউ জীবন দিয়ে মোকাবিলা করেও খাঁটি লকডাউন দেখার সাধ মিটলো না।
Advertisement
সাধারণ ছুটির পর এলো নিষেধাজ্ঞা তারপর লকডাউন। সব বন্ধ এমন ধারণা ছিল লকডাউন সম্পর্কে, কিন্তু দেখা গেল ‘ওপেন আপ’কেই স্থানীয় ভাবে মনে হয় আমরা লকডাউন ভাবছি। শুরু থেকেই দেখে আসছি যে মন্ত্রীর করোনার স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কথা বলা উচিত, দিকনির্দেশনা দেয়া উচিত, তিনি দিচ্ছেন না বা দেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না। দিচ্ছেন বিপরীত এক বা একাধিক জন। বিপণি-বিতান খোলা রাখা বা গণপরিবহন চালু রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসার কথা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা যে সুপারিশ দেবেন, সেই মতো নির্দেশনা ও বাস্তবায়ন হওয়ার কথা। কিন্তু দেখা গেছে স্বাস্থ্য বিভাগ ও মন্ত্রী প্রকাশ্যেই বলেছেন, তারা অনেক সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানেন না। কমিটির সমন্বয়ক জানেন না বৈঠক হচ্ছে কি হচ্ছে না। এমন এক খোলামেলা সমন্বয়হীনতার মধ্য দিয়েই অতিবাহিত হচ্ছে আমাদের করোনাকাল।
ঈদে মানুষ শহর ছাড়বেই। করোনাকালের দুই ঈদে আমাদের অভিজ্ঞতা হয়েছে। আমরা উঁচুতলার মানুষদের আটকানোর চেষ্টা না করে, কাছা বেঁধে নেমে পড়ি গরিব ঠেকাতে। কিন্তু সেই কাছা বাঁধাটাও ছিল অভিনয়। কাজের কাজ হওয়ার মতো কোনো নকশা ছিল না। ঈদের আগেই রোজা চলাকালীন লকডাউনে রাজধানীজুড়ে ছিল যানজট। মহাসড়কের গণপরিবহন আঁধারে যাত্রী বহন করেছে। লকডাউন রেখেই খুলে দেওয়া হয়েছে বিপণি-বিতান । একে তামাশা ছাড়া আর কি বলা যায়? মানুষকে ঘরে থাকতে বলে সব উন্মুক্ত করা হলো । এভাবে আমরা লকডাউনের সংজ্ঞাটাই ভুলে গেছি। সংশয়েও আছি-আমরা যেটা দেখছি এটাই সত্যিকারের লোকডাউন? বিদেশেরটা তবে অন্য কিছু? এই সংশয় কাটাতে কর্তাদের বিদেশ যেতেই হবে। না হলে ভুল লকডাউনের ফাঁদে পড়ে করোনার একের পর এক ঢেউতে আমরা বিপর্যস্ত হতেই থাকবো। অগোছালো থাকবে সরকারি বেসরকারি অফিসের কাজ, ব্যবসা-বাণিজ্য। এতে ধনী গরিব সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দেশ অর্থনৈতিক মন্দা চক্রে পড়ে যাবে । ফলাফল- আমরা জীবন-জীবিকা দুই-ই হারিয়ে বসতে পারি। তাই লকডাউন কাকে বলে এবং উদাহরণসহ আমরা সেটি জানতে ও বুঝতে চাই।
লকডাউনের যদি এমন লীলাখেলাই চলতে থাকে, তাহলে করোনাকালজুড়ে একমাত্র লকডাউনে থাকা বিদ্যায়তন বা শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে ভাবতে হবে। শিক্ষার্থীদের যাতায়াত বিদ্যায়তন ছাড়া সর্বত্রই । তবে কেন তাদের শিক্ষা জীবন বিপর্যস্ত হবে? কলেজের উঠানে পা না রেখে একটি ব্যাচ কলেজ জীবনই শেষ করে ফেললো। কলেজ নিয়ে তাদের ব্যক্তি জীবনে কোনো অভিজ্ঞতাই যোগ হলো না । স্কুলে যাদের শিশু বা প্রথম শ্রেণির মাধ্যমে প্রবেশের কথা ছিল, তারা সেই সুযোগটি পায়নি। উচ্চ শিক্ষার ভর্তি প্রক্রিয়াও বিলম্বিত হচ্ছে । এমন বিলম্ব প্রায় সব খাতে, সবার ব্যক্তি জীবনকে প্রভাবিত করছে। কিন্তু করোনা সহসা ছেড়ে যাচ্ছে না আমাদের। তাই লকডাউনে সীমিত জীবন ব্যবস্থা, লকডাউন মুক্ত। সীমিত যাপন, এসব কিছুরই একটি জাতীয় পরিকল্পনা করা উচিত। তড়িঘড়ি করে নয়। সময় নিয়েই কাজটি করতে হবে। এবং পরিকল্পনাটি অবশ্যই হওয়া উচিত স্বাস্থ্য বিভাগের নেতৃত্বে। অন্যরা তাদের সহযোগিতা করবে মাত্র। এই যে প্রত্যাশা করলাম, এটি পূরণ হওয়ার জন্য যে সমন্বয় প্রয়োজন, সেটুকুও আমরা হওয়ার সক্ষমতা অর্জন করেছি কিনা সন্দেহ আছে। তাই শুরু থেকেই বলে আসছি, তামাশা নয় সত্যি বলছি, আমাদের মনে হয় করোনাকাল ব্যবস্থাপনার প্রশিক্ষণের প্রয়োজন আছে!
Advertisement
লেখক : গণমাধ্যমকর্মী।
এইচআর/এমকেএইচ