রাঙামাটির বরকল উপজেলা সদরে মহাপনির্বাণগত বৌদ্ধ আর্যপুরুষ মহাসাধাক শ্রীমৎ সাধানানন্দ মহাস্থবির বনভান্তের উত্তরসূরী সাধকপ্রবর ধর্মীয়গুরু শ্রীমৎ ধর্মতিয্য মহাস্থবিরকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে মিছিল সহকারে বিক্ষোভ করেছেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা। সোমবার সন্ধ্যার দিকে বরকল বিজিবি জোনের নৌযান ঘাটে ঘটনাটি ঘটে বলে জানান স্থানীয়রা। তবে অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেছে বিজিবির বরকল জোন কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।অভিযোগে জানা যায়, বরকলের ছোটহরিণার থেগামুখ ও উজ্যাংছড়ি থেকে ফেরার পথে বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ (বিজিবি) বরকল জোনের ২২ ব্যাটালিয়নের নৌযান ঘাটে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের বোট থেকে নামিয়ে তল্লাশির নামে লাঞ্ছিত করা হয়। ওই সময় ঘটনার প্রতিবাদে কয়েক শতাধিক বৌদ্ধ নারী ও পুরুষ বিজিবির জোনের সামনে মিছিল ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন।তল্লাশির সময় সঙ্গে থাকা বৌদ্ধ ভিক্ষু ও ভক্তরা জানান, রাঙামাটি সদরের রাঙাপানি সাধনাপুর ভাবনা কেন্দ্রের অধ্যক্ষ সাধক ধর্মতিষ্য মহাস্থবির স্বশিয্যে বরকলের ভুষণছড়া ইউনিয়নের থেগামুখে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যান। তার সঙ্গে ছিলেন শিয্য সম্বোধী রত্না স্থবির, শান্তজ্যোতি ভিক্ষু, শীলাবিশ্ব ভিক্ষু, বিনয় রক্ষিত ভিক্ষু, নাগসেন ভিক্ষু, সুদক্ষ শ্রমণ ও করুণাতিষ্য শ্রমণসহ আটজন বৌদ্ধ ভিক্ষু। পরে থেগামুখ থেকে একই ইউনিয়নের মরা থেগামুখ এলাকায় বুদ্ধ আলো ধর্মশালায় এবং বড় উজ্যাংছড়ি শাখাবন বিহারে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দেন তারা। অনুষ্ঠান শেষে সোমবার বিকেলে রাঙামাটি সদরে ফেরার পথে বরকল জোনের নৌযান ঘাটে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পরিবহনকারী স্পিডবোট থামিয়ে এবং বোট থেকে নামিয়ে তল্লাশির নামে প্রায় দুই ঘণ্টা আটক করে ধর্মীয়গুরু ধর্মতিয্য মহাস্থবিরসহ বৌদ্ধ ভিক্ষুদের লাঞ্ছিত করেন বিজিবির সদস্যরা। ওই সময় ঘটনার খবর পেয়ে শ’শ’ সমর্থক বৌদ্ধ নর-নারী জড়ো হয়ে ঘটনার প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এ বিষয়ে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের সঙ্গে থাকা ভক্ত ও রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য বিজয় রঞ্জন চাকমা ও বরকল উপজেলার সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রায়সোনা চাকমা জানান, তল্লাশির সময় সঙ্গে থাকা বুদ্ধমূর্তিগুলোর ভেতরে কোনো স্বর্ণ কিংবা অবৈধ মালামাল আছে কিনা মাটিতে আঘাত করে করে দেখেন বিজিবির কয়েকজন সদস্য ও গোয়েন্দা লোকজন। এমনকি বরকল বাজারের স্বর্ণ দোকানদার লিটন শীলের কাছে নিয়ে বুদ্ধমূর্তিগুলোতে স্বর্ণ আছে কিনা পরীক্ষা করানো হয়। দোকানদার কোনো স্বর্ণ না থাকার কথা বললে বুদ্ধমূর্তিগুলো মাটিতে ফেলে রাখেন বিজিবির সদস্যরা। এছাড়াও ভিক্ষুদের সঙ্গে রাখা খাবারপাত্রসহ বিভিন্ন দানীয় মালামাল তল্লাশির নামে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের অপদস্থ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে বরকল জোনের পক্ষে বিজিবি সূত্র জানায়, নিরাপত্তাজনিত কারণে নিয়ম মাফিক তল্লাশি করা হয়েছে। ওই সময় বৌদ্ধ ভিক্ষুদের প্রতি যথোপযুক্ত সম্মান জানানো হয়েছে। তাদেরকে কোনো রকম লাঞ্ছনা বা অপমান করা হয়নি।সুশীল প্রসাদ চাকমা/এমএএস/আরআইপি
Advertisement