বিশেষ প্রতিবেদন

শ্যামপুরে রাসায়নিক গুদাম নির্মাণ কবে শেষ হবে?

দুই বছরের বেশি সময় আগে পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর শ্যামপুরের উজালা ম্যাচ কারখানার জায়গায় রাসায়নিক গুদাম নির্মাণ শুরু করে শিল্প মন্ত্রণালয়। কিন্তু এখনো এই গুদাম নির্মাণের কাজ শেষ হয়নি। বাকি কাজ শেষ করতে আরও পাঁচ থেকে ছয় মাস লাগবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। গুদাম নির্মাণের কাজ শেষ হলে কবে নাগাদ পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক গুদাম সরানো হবে তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না।

Advertisement

বাংলাদেশ কেমিক্যাল অ্যান্ড পারফিউমারি মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের অভিযোগ, গুদাম নির্মাণের কাজ শেষ হলেও কোন প্রক্রিয়ায় স্থানান্তর কার্যক্রম শুরু হবে, কতো সংখ্যক গুদাম এবং কোন কোন গুদাম স্থানান্তর করা হবে, তা এখনো নির্ধারণ করেনি শিল্প মন্ত্রণালয়। এই কাজগুলো করতে অন্তত এক বছর সময় লাগবে। কারণ শিল্প মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের কথার সঙ্গে কাজের মিল নেই। তারা অনেক ধীরগতির।

পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক গুদাম সরিয়ে নিতে এক যুগের বেশি সময় ধরে আলোচনা চলছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এসব গুদাম স্থানান্তর প্রক্রিয়াই শুরু হয়নি। ফলে আবাসিক ভবনে রাসায়নিক দোকান এবং গুদাম থেকে সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ডে মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেই চলছে।

২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ওয়াহেদ ম্যানশনে আগুনে মারা যান ৭১ জন

Advertisement

সবশেষ গত ২২ এপ্রিল দিবাগত রাত সোয়া ৩টায় পুরান ঢাকার আরমানিটোলার হাজী মুসা ম্যানশন নামের একটি আবাসিক ভবনের নিচতলায় রাসায়নিক গুদামে আগুন লাগে। এই ঘটনায় ভবনটিতে বসবাসরত এক নারীসহ ছয়জনের মৃত্যু হয়। এছাড়া ভবনের আরও ২২ জন বাসিন্দা আহত হন।

এর আগে রাসায়নিকের গুদাম থেকে পুরান ঢাকায় দুটি বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ২০১০ সালের ৩ জুন নিমতলীর একটি ভবনে আগুনে ১২৪ জনের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনার ৯ বছর পর ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ওয়াহেদ ম্যানশন নামের একটি ভবনে আগুনে মারা যান ৭১ জন।

শ্যামপুর রাসায়নিক গুদামশিল্প মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, উজালা ম্যাচ কারখানার মালিক বাংলাদেশ রাসায়নিক শিল্প করপোরেশন (বিসিআইসি)। দীর্ঘদিন ধরে এই কারখানা বন্ধ ছিল। ফলে এখানে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছিল ট্রাক স্ট্যান্ড।

এসব রাসায়নিক সামগ্রীই অগ্নিকাণ্ডকে ভয়াবহ রূপ দেয়

Advertisement

চুড়িহাট্টার অগ্নিকাণ্ডের পর কারখানার জায়গায় অস্থায়ীভাবে ৫৪ গুদাম নির্মাণে একটি প্রকল্প নেয় শিল্প মন্ত্রণালয়। এতে ব্যয় ধরা হয় ৭৯ কোটি ৪১ লাখ ৫১ হাজার টাকা। ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর এই রাসায়নিক গুদামের নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০২০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কাজ করেছে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেড।

উজালা ম্যাচ কারখানাটি শ্যামপুর বাজার সংলগ্ন ৬ দশমিক ১৭ একর জমির ওপর ছিল। এখন এই কারখানার চারপাশ টিন দিয়ে ঘেরা। প্রধান ফটকে লেখা ‘অস্থায়ী ভিত্তিতে রাসায়নিক দ্রব্য সংরক্ষণের জন্য গুদাম নির্মাণ প্রকল্প’।

দুই বছর ধরে চলছে রাসায়নিক গুদাম নির্মাণকাজ

ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, কারখানার সব স্থাপনা গুঁড়িয়ে সেখানে পৃথক ৩১টি রাসায়নিক গুদাম তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৩টি গুদাম পলেস্তারা করা হচ্ছে। বাকি গুদামগুলো নির্মাণে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে।

বাংলাদেশ কেমিক্যাল অ্যান্ড পারফিউমারি মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আরিফ হোসেন মাসুদ বলেন, ‘পুরান ঢাকায় দেড় হাজারেরও বেশি রাসায়নিকের দোকান এবং গুদাম রয়েছে। এরমধ্যে শ্যামপুরে ৬ দশমিক ১৭ একর জমিতে ৫৪টি রাসায়নিক গুদাম তৈরি করতে প্রকল্প নিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত অবকাঠামোর নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। এখন যে গতিতে তারা কাজ করছে ২০২২ সালের আগে এই স্থানান্তর প্রক্রিয়া সম্ভব হবে না।’

পুরান ঢাকা থেকে কবে নাগাদ শ্যামপুরে রাসায়নিকের গুদাম সরবে, বলতে পারছে না কেউ

শ্যামপুরে রাসায়নিক গুদাম নির্মাণ প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ লিয়াকত আলী বলেন, ‘করোনা মহামারির কারণে এক বছরের বেশি সময় ধরে কাজের গতি কমে গেছে। ফলে যথাসময়ে কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। আশা করি আগামী চার-পাঁচ মাসের মধ্যে বাকি কাজ শেষ হবে।’

জানতে চাইলে শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার জাগো নিউজকে বলেন, ‘গুদাম নির্মাণের কাজ শেষ হলে পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক গুদাম স্থানান্তরের কাজ বাস্তবায়ন করবে ঢাকা জেলা প্রশাসন। তবে এখন পুরান ঢাকার যেসব বাড়ির নিচে রাসায়নিক গুদাম রয়েছে সেগুলো অপসারণের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের।’

এমএমএ/জেডএইচ/এমকেএইচ