জাতীয় ক্রিকেট লিগের প্রথম রাউন্ডের ম্যাচ খেলেছিলেন সাভারের বিকেএসপিতে। নিজ শহর রংপুরে দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচ খেলতে গিয়েই পেলেন দুঃসংবাদ। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন রংপুর বিভাগের উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান আকবর আলী। যার বড় পরিচয় বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক।
Advertisement
তখন থেকে রংপুরে পরিবারের সঙ্গেই আছেন আকবর। আইসোলেশন শেষে করোনাভাইরাসজনিত জটিলতায় খানিক ভুগতে হলেও, এখন পুরোপুরি সুস্থ আছেন ১৯ বছর বয়সী এ উদীয়মান তারকা। বাবা-মায়ের সঙ্গে রংপুরেই কাটাবেন ঈদের সময়টা। তবে ঈদের পরপরই প্রিমিয়ার লিগ খেলতে চলে আসবেন ঢাকায়।
ঈদ নিয়ে নিজের পরিকল্পনা, বর্তমান অবস্থা ও ক্রিকেটীয় কিছু পছন্দ-অপছন্দ নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন আকবর আলী
জাগো নিউজ : কেমন আছেন?
Advertisement
আকবর : আলহামদুলিল্লাহ্! ভালো আছি।
জাগো নিউজ : বাড়িতেই নিশ্চয়?
আকবর : হ্যাঁ, করোনা পজিটিভ হওয়ার পর থেকে বাড়িতেই (রংপুর) আছি। প্রথমে তো আইসোলেশনে থাকতে হয়েছে। পরে লকডাউন শুরু হয়ে গেলো। তাই বাড়ি থেকে আর ঢাকায় যাওয়া হয়নি।
জাগো নিউজ : করোনা পরবর্তী জটিলতাগুলো কী আছে এখনও?
Advertisement
আকবর : শুরুর দিকে শরীর একটু দুর্বল ছিল। তবে এখন বেশ ভালো। প্রথম যখন করোনা নেগেটিভ হলাম, এরপরও কিছুদিন দুর্বলতা ছিল। তবে এখন সমস্যা নেই কোনো।
জাগো নিউজ : তাহলে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ শুরু (৩১ মে থেকে) হলে প্রথম থেকেই খেলতে পারবেন?
আকবর : জ্বী! জ্বী! ইনশাআল্লাহ্ খেলতে পারব।
জাগো নিউজ : করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার পর ফিটনেস ট্রেনিং বা অনুশীলন করতে পেরেছেন?
আকবর : ঠিক সেভাবে পূর্ণাঙ্গ অনুশীলন নয়। এখানে নিজেকে নিরাপদ রেখে যতটা সম্ভব করা যায় চেষ্টা করেছি। হালকা অনুশীলন, ফিটনেস ট্রেনিং করেছি। বাসায় থেকে বা রংপুরের মাঠে যতটুকু সম্ভব আর কি।
জাগো নিউজ : ঈদের পর ঢাকায় ফিরবেন কবে? কোনো পরিকল্পনা করেছেন?
আকবর : এটা আসলে নির্ভর করছে আমাদের কখন ডাকা হয়। সিসিডিএম এ বিষয়ে আমাদের জানাবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে ২০ তারিখ ঢাকায় যাওয়ার ব্যাপারে মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।
জাগো নিউজ : বাড়িতেই তো ঈদ করবেন, কিভাবে কাটাবেন?আকবর : এখন তো আসলে তেমন কিছু করার নেই। পরিস্থিতিটাই এমন। বাইরে বের হওয়া বা তেমন কিছু না করাই ভালো। চেষ্টা থাকবে বাসায় থেকেই কাছের আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে যতটুকু আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়া যায়। বাস্তবতা মেনে নিয়ে সবাই সতর্ক থাকাই মঙ্গল।
জাগো নিউজ : করোনাকালীন ঈদটা একদিক থেকে বাসার সবার সঙ্গে বেশি বেশি সময় কাটানোর সুযোগ করে দিচ্ছে...,
আকবর : এটা একদম ঠিক বলেছেন। বাসায় এখন সবার সাথে সময় কাটানো হচ্ছে। আবার ধরেন, অন্য দিক থেকে চিন্তা করলে, ঈদের মধ্যে ঠিক কতক্ষণ আসলে বন্দী থাকা যায়! একঘেঁয়েমি বা একপ্রকার ক্লান্তিও চলে আসে। কিন্তু এখন আসলে এটাই বাস্তবতা। সবারই সতর্ক থাকা উচিত।
জাগো নিউজ : এলাকায় বন্ধুবান্ধব আছে নিশ্চয়ই। তাদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হবে?আকবর : হ্যাঁ, তা তো আছেই। এখনও ধরেন টুকটাক হয়। তবে যেটা বললাম, মাস্ক-ক্যাপ পরে যতটা পারি নিজেকে নিরাপদ রেখে বিকেলের দিকে অল্প কিছুক্ষণের জন্য নদীর ধারে বা পার্কে হাঁটতে বের হওয়া পড়ে মাঝেমধ্যে। এই তো এভাবেই যাচ্ছে। গত ঈদটাও আমরা এভাবেই কাটালাম। তো এবার এতটা খারাপ হবে না আশা করি। কারণ গতবার তো একটা অভিজ্ঞতা হয়েছেই যে কীভাবে কী করতে হবে। তো যেটা বললাম, নিজেকে যতটা নিরাপদ রাখা যায়।
জাগো নিউজ : পরিবার ছাড়া বাড়ির বাইরে ঈদ করার কোনো স্মৃতি আছে কী?
আকবর : হ্যাঁ! একবার করতে হয়েছে, ইংল্যান্ডে ছিলাম। ২০১৯ সালে ঈদের সময় আমাদের ইংল্যান্ড ট্যুর ছিল। সেবার ঈদের আমেজটা সেভাবে অনুভব করতে পারিনি। ঈদের দিনই একটা ম্যাচ ছিল। মাঠের পাশেই ঈদের নামাজের আয়োজন ছিল। আমরা নামাজ পড়ে সরাসরি মাঠে নেমে গেছি খেলতে।
জাগো নিউজ : যুব বিশ্বকাপ জেতার এক বছরের বেশি হয়ে গেলো। এই এক বছর ও এর আগের ১৮-১৯ বছরের মধ্যকার পার্থক্যটা কেমন মনে হয়?
আকবর : সত্যি বলতে, আমি তো তেমন পার্থক্য দেখি না। সব একইরকম মনে হয় আমার কাছে। আমি আগে যেমন ছিলাম, এখনও একই আছি, সেটা হোক বাসায় কিংবা আমার এলাকায়। না না! পার্থক্য একটা আছে। বিশ্বকাপ জেতার পর থেকে ঈদগুলো করতেছি পুরোপুরি ম্যাড়ম্যাড়ে ঈদ। লকডাউনে সব বন্দী, এটাই পার্থক্য (হাসি)।
জাগো নিউজ : বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে আপনি শেষদিকে নেমে বেশ কয়েকটি ক্যামিও ইনিংস খেলেছেন। আবার যুব বিশ্বকাপ ফাইনালে ধরে খেলে শেষ পর্যন্ত ম্যাচ জিতিয়ে বের হয়েছেন। এই দুইটা রোলের মধ্যে কোনটা বেশি উপভোগ করেন?
আকবর : না না! কেউ যদি মনে করে যে, আমি রয়ে-সয়ে খেলার ব্যাটসম্যান, তাহলে সেটা ভুল ধারণা। আমি এজ লেভেল থেকেই সাধারণত শুরু থেকে মেরে খেলে থাকি। তবে অবশ্যই, যখন ওভার বেশি থাকে, তখন শেষ পর্যন্ত খেলার চেষ্টা থাকে সবসময়। হাতে সময় থাকলে, ওভার বেশি থাকলে, লম্বা ইনিংস খেলাটাই উপভোগ করি। শুধু আমি না, বিশ্বের যে কোনো ব্যাটসম্যানই বেশিক্ষণ ব্যাটিংটাই উপভোগ করবে।
জাগো নিউজ : ব্যাটসম্যান, উইকেটকিপার এবং অধিনায়ক- তিনটি মিলে একটা প্যাকেজ ক্রিকেটার আপনি। মুশফিকুর রহীম, মহেন্দ্র সিং ধোনি বা কুমার সাঙ্গাকারাসহ এমন প্যাকেজ ক্রিকেটারদের সফলতার অনেক গল্প আছে। এখন এই তিনটা থেকে কোনোটা বাদ দিলে নিজের মধ্যে কোনো অপূর্ণতা আসবে বলে মনে হয়?
আকবর : আমি কখনও এভাবে চিন্তা করিনি। টিম ম্যানেজম্যান্ট থেকে আমাকে অধিনায়কত্ব দেয়া হয়, তাহলে এটা পুরোপুরি আলাদা একটা দায়িত্ব। যখন ফিল্ডিংয়ে থাকি, শুধু তখনই কিন্তু আমি অধিনায়ক। কারণ ব্যাটিংয়ের সময় উইকেটে সবাই নিজের ডিসিশন মেকার। আর কিপিংয়ের কথা বললে, শুধু ফিল্ডার হিসেবে অর্থাৎ স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবেও অনেক ম্যাচ খেলেছি আমি। তাই এটা আমার কাছে আলাদা কোনো গুরুত্ব বহন করে না। দলের যেটা চাহিদা থাকে, আমাকে যে দায়িত্ব দেয়া হয়, সেভাবেই খেলতে চেষ্টা করি। আমার কোনোটাতেই আপত্তি নেই। আমি সবগুলোই উপভোগ করি।
জাগো নিউজ : আপনার সোশ্যাল মিডিয়ায় নাম দেয়া ‘আকবর দ্য গ্রেট’। আবার বিশ্বকাপ জেতার পর অনেকেই বলে ‘ক্যাপ্টেন কুল আকবর’, আপনার নিজের কোনটা ভালো লাগে?
আকবর : এখানে একটা বিষয়। বিশ্বকাপ জেতার আগে থেকেই কিন্তু সোশাল মিডিয়ায় আকবর দ্য গ্রেট দেয়া। এটা যেহেতু নিজের দেয়া, তাই এটাই বেশি ভালো লাগে।
জাগো নিউজ : ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ শুরুর তারিখ তো হয়েছে। এবারের আসরে আপনার নিজের কোনো ব্যক্তিগত লক্ষ্য?
আকবর : না! আমি যখন যেখানে সুযোগ পাবো, দল আমার কাছ থেকে যা চাইবে, তা-ই দেয়ার চেষ্টা করব। এসএএস/আইএইচএস/এমএস