মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে জমজমাট হয়ে উঠেছে রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে বেচাকেনা। সকাল থেকে লকডাউনের মধ্যে সরকার ঘোষিত সময়সীমা পর্যন্ত ক্রেতা-বিক্রেতার উপস্থিতিতে মুখরিত রয়েছে মার্কেটগুলো। তবে পাইকারি মার্কেট হিসেবে পরিচিত রাজধানীর বঙ্গবাজারে ঈদের আগ মুহূর্তে পাইকারি ক্রেতার চাপ কম থাকলেও খুচরা ক্রেতাদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।
Advertisement
বঙ্গবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী দোকানদাররা জানান, মূলত ২৫ রমজানে মধ্যে তাদের বিক্রি শেষ হয়ে যায়। তারপরও যদি লকডাউন না থাকতো তাহলে এখন পর্যন্ত মার্কেটে খুচরা ব্যবসায়ীর আনাগোনা থাকতো। কিন্তু এবার লকডাউন থাকার কারণে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা খুচরা ব্যবসায়ীরা একবারই তাদের মালপত্র কিনে নিয়ে গেছেন। তাই দোকানদাররা দোকান খোলা রাখলেও এখন আর খুব বেশি পাইকারি বিক্রি হচ্ছে না। তবে, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার খুচরা ক্রেতারা আসছেন। তাতে এসব দোকানে চাঁদ রাত পর্যন্ত ভালোই বিক্রি হবে বলে আশা তাদের।
বঙ্গবাজারের এনেক্সকো টাওয়ারের ফুলবাড়িয়া মার্কেটের ব্যবসায়ী আল আমিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘করোনার আগে যেখানে দম ফেলার সময় থাকত না সেখানে গত বছর তো দোকান একদিকে দিয়ে খুলতাম আবার অন্যদিক দিয়া বন্ধ করতাম। কিন্তু এবার দোকানে বিক্রি হোক না হোক এখনো দোকান খুলে বসে আছি। সরকার যদি পরিকল্পনা করে আমাদেরকে আরও আগে মার্কেট খোলার অনুমতি দিতো তাহলে আরও বেশি বেচাকেনা হতো। এখন যা হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ্। তবে, গত বছরের তুলনায় বিক্রি একটু বেড়েছে।’
তিনি বলেন, ‘মানুষের হাতে তো টাকা কম। কারও কারও চাকরি নাই, আয় রোজগার না থাকলে কী আর কেউ কেনাকাটা করতে আসে। এই মার্কেটে মূলত সবাই পাইকারি দোকানদার, আমাদের বেচা-বিক্রি মূলত শেষ হয় ২৫ রমজানে। কিন্তু যারা আমাদের থেকে জিনিসপত্র কিনে নিয়ে বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় দোকানে বিক্রি করে থাকেন তাদের চাহিদা অনুযায়ী আমরা আবার জিনিস পাঠিয়ে থাকি। কিন্তু এবার যে কারবারি একবার মাল নিয়ে গেছে সে আর আসে নাই, মনে হয় তাদেরও বিক্রি কম। আবার লকডাউনের কারণে গাড়ি চলে না। ভাড়া বেশি। তাই তারা চাইলেও আসতে পারে না।’
Advertisement
আল আমিন বলেন, ‘আমাদের দোকান থেকে যারা বাকিতে জিনিস নেন তারা টাকা দিয়ে আবার মাল নিতে আসেন। কিন্তু এবার যে বাকি দিলাম তারা টাকাও দিতে আসছে না। আমাদের এখন বাকি না উঠলে হাতের পুঁজি শেষ হয়ে যাবে তাই সামনে ব্যবসায় সমস্যা হতে পারে।’
রাজধানীর শেখের টেকের বাসিন্দা জহির, ইকবাল ও খাইরুল বঙ্গবাজারে এসেছেন পাইকারিতে পোশাক কিনতে। অনলাইনে অর্ডার নিয়ে খুচরায় পোশাক বিক্রি করেন এই তিন তরুণ উদ্যোক্তা। ভরদুপুরে ঘুরছিলেন বঙ্গবাজারের বিভিন্ন মার্কেট ও দোকানে। হকার্স মার্কেটে কথা হলে তারা জানালেন, অনলাইনে পাওয়া অর্ডারের জিন্স প্যান্ট ও থ্রি-পিস কিনতে এসেছেন। ঈদকে সামনে রেখে প্রচুর অর্ডার পেয়েছেন। সে অনুযায়ী এখন পোশাক খোঁজার পালা।
মার্কেটের প্রবেশ পথে আরেক উদ্যোক্তা আসিফ বললেন, জুতসই পাইকারি মূল্যে পোশাক কিনতে বঙ্গবাজারের বিকল্প নেই। এখান থেকে কিনলে বিক্রি করে কিছুটা লাভ থাকে।
কেবল লাভই নয়, কম মূল্যে ভালোমানের পোশাক পেতে বছরব্যাপী এই মার্কেটে ভিড় করেন সর্বস্তরের ক্রেতারা। দেশি ক্রেতার পাশাপাশি বিদেশিরাও একবার হলেও ঢুঁ মারেন এই বঙ্গবাজারে। সারা বছর তো থাকেই, ঈদকে কেন্দ্র করে এ মার্কেটে বেচাকেনা শুরু হয় রমজানের এক মাস আগে থেকেই। রমজানে পুরোদমে জমে ওঠে বিকিকিনি। কিন্তু এবারে লকডাউনে নেই সেই আগের মতো বিক্রি।
Advertisement
জানা গেছে, বঙ্গবাজার হকার্স মার্কেটসহ তিনটি বাজার নিয়ে ২০০৪ সালে বঙ্গ কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়। অন্য বাজারগুলো হলো- গুলিস্তান হকার্স মার্কেট, মহানগর হকার্স মার্কেট এবং আদর্শ হকার্স মার্কেট। ভবনটির তিনতলা পর্যন্ত আছে ছোট-বড় মিলিয়ে আড়াই হাজারের বেশি দোকান।
বঙ্গবাজারে সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রায় সব দোকানের সামনে ক্রেতার ভিড়। তবে এখন যারা কেনাকাটা করছেন তারা বেশিরভাগই পাইকার নন, ব্যক্তিগত জিনিসপত্র কিনতে আসা খুচরা ক্রেতা।
জানা গেছে, প্রিন্টেড শাড়ি ৫৫০-৮৫০ টাকা, প্রিন্টেড টু-পিস ৪৮০-৫৮০ টাকা, থ্রি-পিস ৫৫০-৬৫০ টাকা, হাতে কাজ করা থ্রি-পিস ৮৫০-১০৫০ টাকা, ক্যাটালগ থ্রি-পিস ৭৫০-১২৫০ টাকা, আমদানিকৃত থ্রি-পিস ১০০০-১৪৫০ টাকা, পাঞ্জাবি ৪৫০-৫৫০ ও ৭৫০ টাকা, কাজ করা সাদা পাঞ্জাবি ৫৫০-৯৫০ টাকা, সালোয়ার-কামিজ মান ও কাজ ভেদে ৪৫০-১১৫০ টাকা, প্যান্ট (জিন্স) ৪৫০-৯০০ টাকা, প্যান্ট (গ্যাবাডিন) ৪৫০-৯৫০ টাকা, টি-শার্ট ১৫০-৩৫০ টাকা, হাফ হাতা শার্ট ৩৫০-৪৫০ টাকা, ফুল হাতা শার্ট ৫০০-৭৫০ টাকা, ফতুয়া ৩৫০-৫৫০ টাকা এবং শিশুদের পোশাক ৩৫০-৮৫০ টাকার মধ্যে কেনা যাচ্ছে।
এমনটা চিত্রই পাওয়া গেল বঙ্গবাজারের বিভিন্ন দোকান ঘুরে। তবে দরকষাকষি করে না কিনলে ঠকতে হবে।
এফএইচ/এমআরআর/এমকেএইচ