ঈদসহ অন্যান্য ধর্মীয় উৎসব ও লম্বা ছুটিতে রাজধানী ঢাকা ছাড়ার ধুম পড়ে। গত বছর থেকে শুরু হওয়া করোনা মহামারিতে উৎসব হয়েছে সীমিত তবে প্রিয়জনদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করতে ঢাকার ছাড়ার প্রবণতা কমেনি এতটুকু।
Advertisement
চলতি বছর করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারি কঠোর বিধিনিষেধের আওতায় বন্ধ গণপরিবহন। তারপরেও থেমে নেই ঈদ যাত্রা। গত একসপ্তাহে ঢাকা ছেড়েছেন কয়েক লাখ মানুষ। পায়ে হেঁটে, ব্যক্তিগত গাড়ি ভাড়া করে, মোটরসাইকেল, পিকআপ ভ্যান, পণ্যবাহী ট্রাক এমনকি আবর্জনা বহনকারী গাড়িতে করে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে শহর ছাড়ছেন নগরবাসী।
ছোট ছোট এসব যানবাহনে ঝুঁকি নিয়ে মানুষ ঢাকা ছাড়ছেন। ঠেলাঠেলি ও ভিড় করে বাড়ি ফেরার এই তাগাদায় করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের আশংকা তৈরি হচ্ছে বলেও দাবি করছেন কেউ কেউ।
বুধবার (১২ মে) সন্ধ্যায় দেশের আকাশে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যায়নি। তাই শুক্রবার (১৪ মে) বাংলাদেশে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও অফিস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঈদের আগের বৃহস্পতিবারও (১৩ মে) ঘরমুখো মানুষের ভিড় হতে পারে। সড়কপথে যানজটে ঘরমুখী মানুষ ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। অন্যদিকে মঙ্গলবার, বুধবার দেশের প্রধান দুই ফেরিঘাটে যাত্রীর ব্যাপক চাপ দেখা গেছে। এছাড়া গাবতলী, আবদুল্লাহপুর, সায়েদাবাদসহ ঢাকার বিভিন্ন বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, ঘরমুখো মানুষ কোনো বাধা মানছেন না। প্রশাসনকে ম্যানেজ করে চলছে দূরপাল্লার বাস। সামর্থবানরা ব্যক্তিগত গাড়ি ভাড়া করে বাড়ির উদ্দেশ্যে ছুটছেন। আর নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষ কাঁধে ব্যাগ, বস্তা মাথায় নিয়ে হাঁটছেন মাইলের পর মাইল। ছোট শিশু, বৃদ্ধ মানুষের ভোগান্তি ছিল চোখে পড়ার মতো। যাত্রীরা বলছেন, ছোট গাড়িতে ভেঙে ভেঙে তারা বাড়ি ফিরছেন। এ জন্য তাদের পাঁচ থেকে ছয় গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে।
Advertisement
জনস্রোত ঠেকাতে চেকপোস্টে ট্রাফিক পুলিশ তাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছেন বলে পুলিশ সদস্যরা জানিয়েছেন। তবে মানুষের সহযোগিতা ছাড়া গ্রামে ফেরা মানুষের ঢেউ ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না বলেও জানিয়েছেন তারা।
জানতে চাইলে ট্রাফিক পুলিশ সদস্য সজিব আহমেদ জাগো নিউজকে জানান, ভাড়ায়চালিত এসব পরিবহন আটকাতে পুলিশ সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। তবে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছুটছেন মানুষ।
বুধবার দেড় থেকে দুই হাজার টাকায় মোটরসাইকেলে গাবতলী থেকে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়ার ভাড়া হাঁকতে দেখা যায় চালকদের। এছাড়া বেশি ভাড়া দিয়ে পিকআপ ভ্যান, ট্রাকে করে যাত্রীদের পাটুরিয়া ফেরিঘাটে যেতে দেখা যায়। আন্তঃজেলা বাস বন্ধের নির্দেশনা অমান্য করে ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোতে বাস চলতে দেখা গেছে।
স্বাভাবিক সময়ে ৮০ থেকে ১০০ টাকা ভাড়া হলেও গাবতলী ও আমিরবাজার থেকে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়ায় জনপ্রতি ৩০০ টাকা করে যাত্রীদের কাছ থেকে নিতে দেখা যায়। বাসে ওঠার আগেই হেলপার ও স্ট্যান্ডে থাকা দালালরা ভাড়া মিটিয়ে অগ্রিম টাকা নিয়ে যাত্রীদের বাসে তুলছেন। ডি লিংক, ঠিকানাসহ এসব বাসে উঠে দেখা যায়, প্রতি আসনেই নেয়া হয়েছে যাত্রী। অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে জেলার মধ্যে বাস চালানোর নিয়ম না মেনে বাসগুলোতে দাঁড়িয়ে যাত্রী নিতে দেখা যায়।
Advertisement
বাসে থাকা যাত্রী ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি কামরুল জানান, ফেরি পার হলেই পাবনার বাস পাওয়া যাবে। অন্য জেলার গাড়ি পাওয়া যাবে। এজন্য বেশি ভাড়া দিয়েই বাসে উঠেছেন তিনি। বাস না পেলে ভেঙে ভেঙে বাড়িতে যেতে হবে।
যাত্রীদের ভোগান্তি ও সরকারের সিদ্ধান্তহীনতা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন পোস্ট করছে নেটিজেনরা। এনিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এ প্রসঙ্গে সরকারের সমালোচনা করে মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের বলেছেন, ‘অপরিকল্পিত লকডাউন সফল হয় না। সব কিছু চালু রেখে শুধু গণপরিবহন বন্ধ করে সড়কে নৈরাজ্য সৃষ্টি করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে সবাই ঈদের ছুটিতে বাড়ি ছুটেছেন, কয়েকগুণ বেশি খরচ করে অসহনীয় দুর্ভোগ পোহায়ে গন্তব্যে পৌঁছেছে সাধারণ যাত্রীরা। সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষায় সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ।’
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘সরকার চাইছে করোনা সংক্রমণ কমাতে আর এই লোকগুলো চাইছে নিজের জীবন বাঁচাতে। গরিব মানুষ ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে বাড়িতে যাচ্ছে। তাছাড়া কর্মহারা যারা হয়েছেন তারাও তো বাসায় যাবে। ফিতরা, জাকাত পাবে একারণে তারা যাবেই। এটা তো মানবিক বিষয়, যারা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তাদের আরও ভাববার অবকাশ ছিল।’ তিনি বলেন, ‘যত সিট তত পদ্ধতিতে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে গণপরিবহন চালু করা দরকার ছিল। এটা আমাদের দাবি ছিল। সরকার কারও কথা আমলে নেয়নি। ফলে কী হয়েছে তা আমরা দেখেছি। লকডাউনে কোনো কিছু বন্ধ করা যায়নি আবার ঘর মুখো মানুষের স্রোত ঠেকানে গেল না। এত গাদাগাদি করে এবারে ঈদযাত্রা হওয়ায় করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের আশংকা তৈরি হলো।’
এসএম/এমআরআর/এমকেএইচ