নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর ৭ খুন মামলার চার্জশিটে মারাত্মক ত্রুটি রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। তবে মামলার স্বার্থে তা প্রকাশ না করে আদালত জানান, এটা বললে মামলায় অন্যরকম কিছু একটা হয়ে যেতে পারে। নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটির অধিকতর তদন্ত চেয়ে করা রিট আবেদনের শুনানিতে মঙ্গলবার হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এই মন্তব্য করেন।তিনি বলেন, এই চার্জশিট দেখে বুঝতে পেরেছি এতে মারাত্মক ক্রুটি রয়েছে। আমরা মামলার স্বার্থে তা বলবো না। রিটকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল বাসেত মজুমদার এবং রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে আদালত বলেন, আপনারা এই ত্রুটি খুঁজে বের করবেন। মঙ্গলবার হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি আমির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রিট আবেদনের ওপর শুনানি করে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ৬ ডিসেম্বর রোববার পর্যন্ত মুলতবি করেন।আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল বাসেত মজুমদার ও অ্যাডভোকেট মন্টু ঘোষ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যার্টনি জেনারেল মনিরুজ্জামান কবির।আদালত বলেন, সাত খুনের মামলার বিচারের দিকে দেশের মানুষ তাকিয়ে আছে। এই মামলার রেজাল্ট কি হয়, মানুষ তা দেখতে চাই।বেলা সোয়া তিনটার সাত খুনের অধিক তন্তের রিট শুনানির সময় আদালত আব্দুল বাসেত মজুমদারকে বলেন, আপনিতো সাত খুনের পরে নারায়ণগঞ্জ গিয়ে মানববন্ধন করেছিলেন। আমরা তো মনে করেছিলাম মানববন্ধন করেই দ্বায়িত্ব শেষ। আইনজীবী আব্দুল বাসেত মজুমদার বলেন, সাত খুনের মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনের সঙ্গে যারা ছিলেন তাদের নাম বাদ দেয়া হয়েছে। আদালত বলেন, পুলিশ চাইলে সম্পূরক চার্জশিট দিতে পারে।বাসেত মজুমদার বলেন, আমি একটা লোকের নাম বললাম, তাকে ছাড়া আরও পাঁচ জনের নাম বাকি আছে। তিনি বলেন, আমরা যখন হত্যা মামলার কোন আসামিকে ধরি তখন তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, নূরহোসেন দেশের বাইরে ছিলেন, নূর হোসেনের বেলা তা হয়নি। আমরা চার্জশিটের রওপর নারাজি দিয়েছিলাম আদালত তা খারিজ করেছেন। তখন আদালত বলেন, এটা বিচারক ঠিকই করেছেন, পুলিশ চাইলে সাপ্লিমেন্টারি (সম্পূরক) চার্জশিট দিতে পারেন। তখন আদালত বলেন, ‘ভালোভাবে চিন্তা ভাবনা করে দেখেন, হান্ড্রেট পারসেন্ট অ্যাসিভ করতে গিয়ে যেন কারাগারে থাকা আসামিরা বেনিফিট নিতে না পারে’।পরে আদালত এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী রোববার দিন ঠিক করেন।নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনায় নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটির করা মামলায় অধিকতর তদন্ত চেয়ে করা আবেদনের শুনানি গত ২৯ নভেম্বর শুরু হয়। মঙ্গলবার ছিল রিট শুনানির দ্বিতীয় দিন।গত বছরের ২৭ এপ্রিল দুপুরে কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অপহরণ করা হয়। ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ছয়জনের এবং ১ মে অপরজনের লাশ পাওয়া যায়। নিহত অপর পাঁচজন হলেন- নজরুলের বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, চন্দন সরকারের গাড়িচালক মো. ইব্রাহীম। এ ঘটনায় নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম ফতুল্লা মডেল থানায় নূর হোসেন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন মিয়া, হাসমত আলী, আমিনুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন ও ইকবাল হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এ ছাড়া চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল একই ঘটনায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে একই থানায় আরেকটি মামলা করেন।এফএইচ/এসএইচএস/আরআইপি
Advertisement