এ বছর পুরো রমজানজুড়ে ছিল করোনার কারণে সরকারের জারি করা কঠোর বিধিনিষেধ (লকডাউন)। এ সময় নিত্যপণ্যের বেচাকেনা হলেও বাজারে চাঙ্গাভাব ছিল না একদমই। চলাচলে বিধিনিষেধ থাকায় দেশের অন্যতম বৃহৎ পাইকারি পণ্যের মোকামগুলোতে ছিল চরম ক্রেতা সংকট।
Advertisement
এমন পরিস্থিতিতে কাঙ্ক্ষিত ব্যবসা করতে পারেননি নিত্যপণ্য ব্যবসায়ীরা। অন্যান্য পণ্য মজুত রাখা গেলেও এখন বড় শঙ্কা রমজানের বাড়তি পণ্য নিয়ে। আমদানি করা এসব পণ্য বিক্রি করতে না পেরে বড় লোকসানের আশঙ্কায় ভুগছেন তারা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, রমজানে তেল, চিনি, ছোলা, ডাল ও খেজুরের বাড়তি চাহিদা থাকে। এজন্য প্রতি বছর রমজানের আগে এসব পণ্য বেশি পরিমাণে আমদানি করা হয়। এর মধ্যে তেল এবং চিনি অবশিষ্ট থেকে গেলে পরবর্তীতে বিক্রি করতে খুব একটা সমস্যা হয় না। তবে রোজা শেষে ছোলা, খেজুর ও ডালের চাহিদা একদম কমে যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই পণ্যগুলো অবিক্রিত থেকে যায়। এ বছর প্রচুর ছোলা, খেজুর ও ডাল মজুত রয়ে গেছে।
ট্যারিফ কমিশনের হিসাব অনুযায়ী, রোজার মাসে ছোলার চাহিদা ৮০ হাজার টন। সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান না পাওয়া গেলেও ব্যবসায়ীরা বলছেন, রমজানে তাদের আমদানি ও মজুত মিলে প্রায় লাখ টনের বেশি ছোলা বাজারে ছিল। এখনো যার অর্ধেক পরিমাণ বিক্রি হয়নি।
Advertisement
এ বিষয়ে চকবাজার এসএম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ফজলুল হক বলেন, ‘এখন যে ছোলা রয়ে গেছে, সেটা আর বিক্রি হবে না। এর মধ্যে রোজার শেষে পাইকারিতে ছোলার দাম ৬০ থেকে কমে ৪৮-৫০ টাকায় নেমে গেছে। এখন ক্রেতারা ছোলার দিকে ফিরেও তাকাবে না।’
কয়েকজন ব্যবসায়ীর ভাষ্য, এ রমজানে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ১০ হাজার টন মসুর ডাল ও ছোলা বিক্রি করেছে। তাতে বাজারে ছোলার চাহিদা কমেছে। একইভাবে মজুত রয়েছে মসুর ও খেসারি ডালও।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পাইকারি ডাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শফি মাহমুদ বলেন, ‘লকডাউনের কারণে এ বছর ডালের ব্যবসায়ীরা মুনাফা দূরের কথা, পুঁজি হারিয়েছে। অর্ধেক বিক্রি হয়েছে বাকিটা রয়ে গেছে। এ ছোলা-ডাল এখন কী হবে?’
তিনি আরও বলেন, ‘ছোলা মজুদ রাখলে পোকা ধরে যায়। বৃষ্টি শুরু হলে আবহাওয়ার কারণে কোনোভাবে রক্ষা করা যায় না। তখন বিক্রিও হয় না। ধীরে ধীরে ওজন কমে যায়।’
Advertisement
অবিক্রিত খেজুর নিয়েও একই ধরনের তথ্য দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। রমজান মাসে দেশে খেজুরের আনুমানিক চাহিদা ৪০ হাজার টন। তবে দেশে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার টনের বেশি খেজুর আমদানি হয়েছে। এছাড়া, এখনো বন্দরে কিছু খেজুর খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে, যেগুলো ঠিক সময়ে পৌঁছায়নি। তাছাড়া একটি জাহাজ শ্রীলঙ্কায় এখনো আটকে রয়েছে, সেটিতেও বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের খেজুর রয়েছে।
বাংলাদেশ ফল আমদানিকারক সমিতির সহ-সভাপতি শামসুল হক বলেন, ‘বাজারে যে খেজুর ছিল তার দুই-তৃতীয়াংশ বিক্রি হয়েছে। আর বন্দরে এবং জাহাজে ১০ লাখ টনের মতো খেজুর রয়ে গেছে। সব মিলিয়ে খুব খারাপ অবস্থা ব্যবসায়ীদের।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিভিন্ন কোল্ড স্টোরেজে এসব খেজুর রাখা আছে। বিক্রি না হলেও প্রতিদিনের ভাড়া গুণতে হচ্ছে। লকডাউনে সব শেষ হয়ে গেছে।’
ব্যবসায়ীরা জানান, শুধু রমজানেই খেজুরের চাহিদা থাকে। বাকি ১১ মাসে মোট খেজুরের ২০-২৫ শতাংশও বিক্রি হয় না। প্রতি বছর রমজানের আগেভাগেই খেজুর আমদানি শেষ করা হয়। এ বছরও বাজার ধরতে রমজানের আগেই আমদানি করা হয়েছে। কিন্তু লকডাউনের কারণে এলোমেলো হয়ে গেছে তাদের হিসেব-নিকেশ। রোজা শেষ হয়ে এলেও অনেক ব্যবসায়ীর খেজুর রয়ে গেছে।’
রাজধানীর সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা বলেন, ‘রমজানের আগে থেকেই পণ্য বেচাকেনার হিড়িক থাকে পাইকারি মোকামে। এ বছর ঠিক সে সময় থেকে বিধিনিষেধের কারণে বেচাকেনা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। আবার বিক্রি না থাকলেও পরিবহন ব্যয়, গুদামে পণ্য নিতে শ্রমিকের খরচ বেড়েছে। সব মিলিয়ে অধিকাংশ ব্যবসায়ী লোকসানে পড়েছেন।’
এনএইচ/এসএস/এমআরআর/এমকেএইচ