ধর্ম

রোজার ‘ফিদইয়া-কাফফারা’ গরিবরে হক ও এবারের ফিতরা

রোজার ফিতরা, সাদকা, ফিদইয়া ও কাফফারা গরিবের হক। ঈদের দিন নামাজ পড়তে যাওয়ার আগেই তা গরিব-দুঃখী ও অসহায়দের মাঝে বিতরণ করা জরুরি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

Advertisement

‘ফিতরা আদায় করার আগ পর্যন্ত রোজা আসমান ও জমিনের মাঝে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে।'

সুতরাং ঈদের নামাজ পড়তে যাওয়ার আগেই গরিবের এসব হক রোজার ফিতরা, সাদকা, ফিদইয়া ও কাফফারা আদায় করা আবশ্যক। কারা গরিবের এসব হক ফিতরা, সাদকা, ফিদিইয়া ও কাফফারা আদায় করবেন?

> ফিতরা

Advertisement

সম্পদের মালিক স্বাধীন-পরাধীন নারী-পুরুষ দায়িত্বশীল পরিবারের ছোট-বড় সবার পক্ষ থেকে ঈদের নামাজ পড়তে যাওয়ার আগেই ফিতরা আদায় করবেন। সাধারণত এ ফিতরা ঈদের চাঁদ ওঠার পর থেকেই রাতে ও সকালে আদায় করা হয়। তবে কেউ কেউ রমজানের শেষ দিনগুলোতে কিংবা ঈদের দিন ঈদের নামাজের আগে ফিতরা আদায় করে থাকেন।

এ ফিতরা রোজাদারের ভুল-ত্রুটির সংশোধন, সিয়াম সাধনায় সুন্দরভাবে রোজা পালনের কৃতজ্ঞতায় আদায় করা হয়। কেননা ফিতরা গরিব-অসহায়দের অধিকার।

সুতরাং আপনজনদের মধ্য থেকে কিংবা প্রতিবেশির মধ্য থেকে প্রকৃত দরিদ্রদের খুঁজে বের করে তাদের কাছে ফিতরা তুলে দিতে হবে। আপনজন ও প্রতিবেশিদের মধ্যে ফিতরা বিতরণ করা উত্তম। যাতে করে এলাকার প্রকৃত দরিদ্ররা সেখানকার ধনীদের দ্বারা উপকৃত হতে পারে।

> সাদকা

Advertisement

সাদকা তার দানকারীকে পবিত্র ও পরিশোধিত করে। এ সাদকা কেবল সম্পদ দ্বারাই আদায় করতে হবে এমন নয় বরং অন্যের উপকারার্থে কোনো ভালো কাজ সম্পাদন করা অথবা অন্যের সঙ্গে সদাচরণ ও সহযোগিতা করা এমনকি হাসি মুখে কথা বলার মাধ্যমেও সাদকার কল্যাণ ও উপকারিতা পাওয়া যায়। কেননা দান ছাড়াও অন্যান্য সহযোগিতা ও সদাচরণ সাদকার অন্তর্ভূক্ত। হাদিসে এসেছে-

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, 'প্রতিটি ভালো কাজই সাদকা।‘

তবে দান-সাদকা ও সুন্দর আচরণ এবং হাসি মুখে কথাবার্তা হতে হবে মহান আল্লাহর জন্য। লোক দেখানো কোনো সাদকা বা দান, সদাচরণ ও কথাবার্তাই আল্লাহ তাআলা কবুল করবেন না।

সমাজের এক শ্রেণির লোক এমন আছে যারা দারিদ্র্যকে পুঁজি করে মানুষের কাছে হাত পাতাকে নিজেদের অভ্যাস বানিয়ে নিয়েছে। এমনটি ঠিক নয়। এসব পরিস্থিতিতেও কাউকে অপমান করে দান করার চেয়ে বরং ওইসব ব্যক্তির সঙ্গে সুন্দর, অমায়িক ও মার্জিত আচরণের ভাব বিনিময়ও উত্তম সাদকা।

আবার এক শ্রেণির প্রকৃত এমন অভাবি লোক আছে যারা অভাবে থাকা সত্ত্বেও চোখ-লজ্জার কারণে সচরাচর অন্যের কাছে হাত বাড়াতে পারেন না। পবিত্র কুরআনে এমন লজ্জাশীল অভাবি ব্যক্তিদের দান-সাদকা করার ক্ষেত্রে প্রাধান্য দিতে বলা হয়েছে।

> ফিদইয়া

রোজা রাখার ইচ্ছা থাকা শর্তেও অসুস্থতা কিংবা বার্ধক্যজনিত কারণে রমজানের রোজা রাখতে পারেননি, আবার তাদের সুস্থ হওয়ার কোনো সম্ভাবনাও নেই, এমন ব্যক্তিরাই রোজার ফিদইয়া আদায় করবেন। তারা প্রতিটি রোজার বদলে একজন করে দরিদ্র ব্যক্তিকে আহার করাতে হবে। ইসলামের পরিভাষায় এটিকেই ফিদইয়া বলা হয়।

তবে কোনো সুস্থ ব্যক্তি যদি ভ্রমণ, গর্ভধারণ, বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানো কিংবা অন্য কোনো শরিয়তসম্মত কারণে রোজা রাখতে না পারে, তাহলে অন্য সময়ে তা আদায় করে দিতে পারবে। এসব ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির উপর ফিদইয়া দেওয়ার প্রয়োজন নেই।

ফিদইয়া আদায় করা তথা কোনো দরিদ্রকে খাওয়ানোর বিভিন্ন উপায় রয়েছে। সবচেয়ে উত্তম পন্থা হলো- ফিদইয়া যার উপর আবশ্যক, সে নিজে উপস্থিত থেকে গরিব-মিসকিনকে খাওয়াবে। তা সম্ভব না হলে, সে অন্য কোনো বিশ্বস্ত ব্যক্তিকে এ দায়িত্ব দিতে পারে।

> কাফফারা

ইচ্ছা করে কেউ রমজানের রোজা ভেঙে ফেলে কিংবা না রাখলে তাকে রোজার কাফফারা আদায় করতে হবে। আর রোজার কাফফার হলো- যে ব্যক্তি রোজা ভাঙবে তাকে প্রতিটি রোজার জন্য লাগাতার ৬০ দিন রোজা রাখতে হবে।

এবারের ফিতরা

ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ এ বছর ফিতরা মূল্য নির্ধারণ করেছেন সর্বনিম্ন ৭০ টাকা আর সর্বোচ্চ ২ হাজার ৩১০ টাকা। যেভাবে ফিতরার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে তা-ও সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে-

>উন্নতমানের আটা বা গমের ক্ষেত্রে ফিতরা ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম (অর্ধ সা’) বা এর বাজারমূল্য- ৭০ টাকা।

> যবের ক্ষেত্রে (এক সা’) ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজারমূল্য ২৮০ টাকা।

> কিসমিস (এক সা’) ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজারমূল্য ১ হাজার ৩২০ টাকা।

> খেজুরের ক্ষেত্রে (এক সা’) ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজারমূল্য ১ হাজার ৬৫০ টাকা।

> পনিরের ক্ষেত্রেও (এক সা’) ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজারমূল্য ২ হাজার ৩১০ টাকা।

এ ছাড়াও সামর্থ্য অনুযায়ী আরও উন্নতমানের এসব পণ্যের দ্বারাও ফিতরা আদায় করা যেতে পারে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যথাসময়ে যথাযথভাবে গরিবরে অধিকার ফিতরা, সাদকা, ফিদইয়া এবং কাফফারা আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এমকেএইচ