বিশ্বের সব দেশের রাস্তায় কমবেশি বিভিন্ন ধরনের যানবাহন দেখা যায়। বাস, প্রাইভেট কার, সিএনজি, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহন প্রায় সব দেশের রোস্তাতেই চলাচল করে। তবে জানলে অবাক হবেন, বিশ্বের এমন একটি শহর আছে যেখানে শুধু সাইকেলই ভরসা। সেই শহরে নেই কোনো যানবাহনের ধোঁয়া। পরিবেশ দূষণমুক্ত এ শহরটি সব দেশের কাছেই আইডলে পরিণতে হয়েছে!
Advertisement
ডেনমার্কের কোপেনহেগেন শহরে অন্যান্য যানবাহনের চেয়ে সাইকেলের সংখ্যা বেশি। এমনও দেখা যায় যে, কারও হয়তো ২-৩টি গাড়ি আছে; তবুও তিনি সাইকেলে চলাচল করেন। কারণ সাইকেলবান্ধব নগরীর রাস্তাগুলো বেশ মসৃণ। সবাই গাড়ির চেয়ে সাইকেল চালিয়েই বেশ আনন্দ পান সেখানে।
তথ্য অনুযায়ী, কোপেনহেগেনে ৬ লাখ ৭৫ হাজার সাইকেল এবং ১ লাখ ২০ হাজার গাড়ি আছে। যার অর্থ হলো, ৬ ভাগের ৫ ভাগ মানুষই সেখানে সাইকেল ব্যবহার করেন। ১৯৭০ সালে প্রথম রেকর্ড করা হয়, কোপেনহেগেনে গাড়ির চেয়ে সাইকেলের সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। ২০১৬ সালের তথ্যানুযায়ী, কোপেনহেগেনের সাইক্লিস্টরা মোট ১.৪ মিলিয়ন কিলোমিটার সাইকেল চালায়। ২০০৬ সালের পরে এটি আর ২২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
সাইকেল ব্যবহারের কারণ কী?
Advertisement
ডেনমার্কের মতো উন্নত দেশে সাইকেল ব্যবহার করার কারণ কী? সেখানে সাইক্লিংয়ের জনপ্রিয়তার প্রধান কারণ হলো শহর জুড়ে সাইক্লিং সুপার হাইওয়ে এর্বং উদ্ভাবনী সেতুগুলো সবই সাইকেলবান্ধব। সাইক্লিস্টদের জন্য নিরপদ এক স্থান হলো কোপেনহেগেন।
পাশাপাশি শহরকে কার্বনমুক্ত করার চেষ্টায় সাইকেলবান্ধব নগরী গড়ে তুলেছেন সেখানকার কাউন্সিলর। যাতায়াত খরচ বাঁচানো থেকে শুরু করে সাইকেল চালানোর বেশ কিছু স্বাস্থ্যগত উপকারিতাও আছে। সাইক্লিং একটি দুর্দান্ত ব্যায়াম। নিয়মিত সাইকেল চালালে পেশি শক্ত হয়, হাড়ের ঘনত্ব বাড়ে এবং কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি কমে।
সেখানকার অর্থমন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতিবার কেউ কোপেনহেগেনে ১ কিলোমিটার সাইকেল চালালে ৪.৮০ ক্রোন বা প্রায় ৭৫ মার্কিন সেন্ট অর্থনৈতিক লাভ হয় শহরের। আর যদি কেউ এই যাত্রাটি সাইকেলে না গিয়ে গাড়িতে যান; তাহলে প্রতি কিলোমিটারে লাভ হয় ১০.০৯ ক্রোন বা প্রায় ১.৫৫ ডলার।
এই লাভগুলো একাধিক উত্স থেকে হিসাব করে বের করেছেন কর্তৃপক্ষ। দ্রুত যাতায়াত, যানজট কমানো এবং শাররিক অসুস্থতা কমাতে ডেনমার্কের সাইক্লিং দূতাবাস সাইকেল চালানোর পক্ষে বিভিন্ন প্রচারণা করে থাকে। সেখানকার সব সাইকেলের দোকানগুলো প্রায় এক তৃতীয়াংশ কমে ক্রেতাদের কাছে সাইকেল বিক্রি করেন।
Advertisement
সাইকেলবান্ধব শহর গড়তে ২০১৭ সালে কোপেনহেগেন অঞ্চলে ৩.৯ কিলোমিটার নতুন পথ, ৬০০ কিলোমিটার সবুজ সাইক্লিং রুট এবং ৫টি নতুন সুপার সাইকেল পথ উদ্বোধন করা হয়। অতিরিক্ত হিসাবে, সাড়ে ৩ হাজার নতুন পার্কিং স্ট্যান্ড স্থাপন করা হয়েছে এবং ১২,৯০০ পরিত্যক্ত বাইক সংগ্রহ করা হয়েছে।
বর্তমানে ডেনমার্কের মতোই প্যারিস, চীনেও সাইকেল ব্যবহার বেড়েছে। চীনের জিয়ামেন শহর সাইকেলের জন্য একটি ৭.৬ কিলোমিটার এলিভেটেড স্কাইওয়ে তৈরি করেছে। নেদারল্যান্ডসেও মানুষের চেয়ে বেশি সাইকেল আছে। এমনকি সেখানে সাইকেল চালানোর সময় মোবাইল ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে সরকার।
জেএমএস/জেআইএম