কক্সবাজার শহরের বৈদ্যঘোনা এলাকার সিরাজুল ইসলাম বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ (পিডিবি)’র একজন নিয়মিত গ্রাহক। এক যুগ আগে পিডিবির মিটার নেয়ার পর বিগত ৬ মাস আগেও তার বিল আসতো ৩৮০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা। শুরু থেকে বিনা পরিদর্শনে করা বিল গত কয়েক মাসে হঠাৎ বেড়ে ৩ হাজার টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। এ বিশাল তারতম্যের কারণে কয়েক বার যোগাযোগ করার পরও বিদ্যুৎ অফিস থেকে কেউ এসে মিটারটি পরিদর্শন করেননি বলে অভিযোগ করেন তিনি। একই এলাকার হারুন রশিদও একই সমস্যার কথা জানান। তার মতে, মিটার নেয়ার পর থেকে ৫’শ থেকে সাড়ে ৫’শ টাকার স্থলে কয়েক মাস ধরে প্রায় ৪ হাজার টাকার মত বিদ্যুৎ বিল দিয়েছে পিডিবি। বিলটি নিয়ে বিদ্যুৎ অফিসে গেলে কর্মকর্তারা পরবর্তী মাসে সমন্বয় করার কথা বলে তাদের করা বিল পরিশোধ করতে বলেন। সংযোগ নিরবিচ্ছিন্ন রাখতে বিল পরিশোধ করা হলেও এখনো মনগড়া বিল দিচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগ। শুধু সিরাজ ও হারুন নয় একই সমস্যায় ভুগছেন শহরের আবাসিক ২৪ হাজার গ্রাহকেরই অধিকাংশই। অনুমান নির্ভর বিদ্যুৎ বিলের অত্যাচারে অতিষ্ঠ সাধারণ গ্রাহকরা। মিটার রিডিংয়ের সঙ্গে বিলের মিল খুঁজে না পেয়ে প্রতিনিয়তই বিদ্যুৎ অফিসে ভিড় জমাচ্ছেন বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীরা। রিডিং না দেখে অস্থায়ী মিটার পরিদর্শকরা দোকানে অথবা অফিসে বসে নিজের ইচ্ছামত রিডিং তুলে দেয়ায় এমনটি হচ্ছে বলে মনে করছেন ভুক্তভোগীরা। রিডিংয়ের সঙ্গে বিলের অমিলের কথা স্বীকার করেছেন পিডিবির একজন প্রকৌশলী। তবে প্রতিদিন বিদ্যুৎ অফিসে জটলা ও জেলা প্রশাসকের কাছে বার বার অভিযোগ করায় সম্প্রতি বেশ কয়েকজন মিটার পরিদর্শক বাড়ি বাড়ি গিয়ে মিটার পরিদর্শন করা শুরু করেছে বলে জানান গ্রাহকরা। কক্সবাজার বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মুনির মাসরুর আহমেদ বলেন, মিটার রিডিংয়ের বিষয়টি নিয়ে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায়ও আলোচনা হয়েছে। এছাড়া মিটার পরিদর্শকরা যে বাড়ি বাড়ি না গিয়ে বিল নির্ধারণ করে সে বিষয়ে বেশ কিছু অভিযোগ এসেছে। এখন মিটার রিডিংয়ের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। গত এক মাস আগেও মিটার রিডিংয়ের সঙ্গে বিলের অমিলের যে সংখ্যা ছিল তা এখন কমে এসেছে। সরকারি মিটার পরিদর্শকের পাশাপাশি অস্থায়ী যে ক’জন মিটার পরিদর্শনের কাজ করছে তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে মিটার পরিদর্শনের জন্য কড়া নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বর্তমানে রিডিং সংগ্রহ এবং বিল নির্ধারণের কাজ চলছে। আগামী দু’এক মাসের মধ্যে এই সমস্যাটি পুরোপুরি কাটিয়ে উঠা যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।বিদ্যুৎ বিতরণ কক্সবাজার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ কক্সবাজারের আওতায় সদরে গ্রাহক রয়েছে ২৯ হাজার। এর মধ্যে আবাসিক গ্রাহকের সংখ্যা ২৪ হাজার। সদরের মিটার পরিদর্শনের জন্য স্থায়ী লোকবল রয়েছে মাত্র ২ জন। তাদের পাশাপাশি মিটার পরিদর্শনের জন্য আরও ৫ জন অস্থায়ী লোকবল নেয়া হয়েছে। কিন্তু এটাও যথেষ্ট নয়। কারণ সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী একজন মিটার পরিদর্শক মাসে মিটার পরিদর্শন করেন ১২’শ টি। সে তুলনায় ৭ জন মিটার পরিদর্শকের জন্য ২৪ হাজার গ্রাহক আকাশসম। তাছাড়া অস্থায়ী মিটার পরিদর্শকরা প্রতি মিটার পরিদর্শনের জন্য পায় মাত্র ১ টাকা ১০ পয়সা। জনবল সঙ্কটের পাশাপাশি এটাও একটা মারাত্মক সমস্যা বলে জানান সংশ্লিষ্ট সূত্র। কক্সবাজার বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের হিসাব মতে, সদরের ২৪ হাজার আবাসিক গ্রাহকের প্রতি মাসে বিদ্যুৎ বিল আসে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে কোনো কোনো গ্রাহক নিজ সচেতনতায় প্রতি মাসে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করলেও অনেকে বকেয়া রেখে দেন। যার কারণে পিডিবিকে আর্থিকভাবে সমস্যায় পড়তে হয়।অপরদিকে, আবাসিক গ্রাহকদের উপর অনুমান নির্ভর বিদ্যুৎ বিল চাপিয়ে দিলেও বাণিজ্যিক ও বড় বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মিটারগুলো নিয়মিত পরিদর্শন করেন পিডিবি কর্তৃপক্ষ। কারণ আবাসিকে গ্রাহক অনুযায়ী বিলের সংখ্যা নগণ্য হওয়ায় এই খাতটি প্রাধান্য পায় না বলে মন্তব্য অনেকের।কক্সবাজার বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জনবল সঙ্কটের কারণে সব মিটার পরিদর্শন করা সম্ভব হচ্ছে না স্বীকার করে বলেন, কক্সবাজার সদরে মিটার থেকে রিডিং সংগ্রহ ও বিল বিতরণের জন্য অনুমোদিত পদ ১০টি। এসব পদের বিপরীতে বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ২ জন। নতুন জনবল নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না বলে স্বল্প সংখ্যক লোক দিয়ে সব মিটার পরিদর্শন সম্ভব হচ্ছে না। তবে গত মাস থেকে রিডিং অনুযায়ী বিলের সমন্বয়হীনতার বিষয়টির উপর জোর দেয়া হয়েছে। এখন থেকে প্রত্যেকটি গ্রাহকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে রিডিং সংগ্রহ করে বিল নির্ধারণ করা হবে। খুব দ্রুত এই সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। এসএস/পিআর
Advertisement