বিশেষ প্রতিবেদন

ইউলুপ-ইউটার্ন ব্যবহারে চালকরা অভ্যস্ত হলে সড়কে যানজট কমে যাবে

রাজধানীর যানজট কমাতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) তরফ থেকে নানা উদ্যোগ বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর মধ্যে ‘ইউলুপ’ ও ‘ইউটার্ন’ প্রকল্পগুলোর প্রকৃত সুফল পাচ্ছে নগরবাসী। যদি চালক-যাত্রীসহ সংশ্লিষ্টরা ইউলুপ-ইউটার্নের যথাযথ ব্যবহার জানেন, তবে যানজট আরও কমে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

Advertisement

ডিএনসিসির উদ্যোগে নির্মিত ১০ ইউটার্ন খুলে দেয়া হয়েছে গত ৩ এপ্রিল। এগুলো নির্মিত হয়েছে উত্তরা রাজলক্ষ্মীর সামনে, উত্তরা র‌্যাব-১ অফিস, ফ্লাইং ক্লাব কাওলা, বনানী ওভারপাস, বনানী আর্মি স্টেডিয়ামের সামনে, বনানী চেয়ারম্যান বাড়ি, মহাখালী আমতলী, মহাখালী বাস টার্মিনালের সামনে, তেজগাঁও নাবিস্কো মোড় এবং সাতরাস্তার বিজি প্রেস এলাকা। এর আগে থেকে চালু আছে রামপুরা ও মেরুল বাড্ডায় নির্মিত দুটি ইউলুপ।

চালু হওয়া ইউটার্ন-ইউলুপগুলো নিয়ে চালক, পথচারী ও পরিবহন বিশেষজ্ঞদের মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। তারা বলছেন, এই উদ্যোগগুলো সেই সড়কে কার্যকর যেখানে যানবাহনের চাপ কম, এবং যে সড়ক প্রচুর চওড়া।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) এ সংক্রান্ত প্রকল্পের উদ্যোক্তা, পরিকল্পনা ও নকশাকারী হিসেবে রয়েছেন প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম। তিনি বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাইফুল হক মিঠু।

Advertisement

জাগো নিউজ: যানজট নিরসনে সড়কে ইউটার্ন-ইউলুপ কতটা কার্যকর?

কামরুল ইসলাম: সড়কে যানজট কমাতে এই ইউলুপ-ইউটার্ন যথেষ্ট কার্যকর। ইতোমধ্যে যেসব যায়গায় হয়েছে, সেখানকার যানজট কমেছে। এটার একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো যানজট নিরসনে এই পদ্ধতি দ্রুত কাজ করে। এতে স্ট্রাকচারাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার বা বড় ধরনের নির্মাণ প্রয়োজন হয় না। যেসব স্পটে ঘন ঘন যানজট হয়, সেখানে ইউলুপ-ইউটার্ন ব্যবহার করা যেতে পারে।

জাগো নিউজ: বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে প্রত্যেকটি ব্যস্ত রাস্তায় ইউটার্ন নির্মাণ কতটা বাস্তবসম্মত?

কামরুল ইসলাম: বড় স্থাপনা নির্মাণ করতে হয় না বিধায় এতে খরচ অনেক কম। আর টেকসই হওয়ায় এর রক্ষণাবেক্ষণ খরচও কম। অনেক উন্নত দেশ রাস্তায় ইউটার্ন ব্যবহার করে যানজট নিয়ন্ত্রণে সফলতা পেয়েছে।

Advertisement

জাগো নিউজ: অনেকেই বলছেন ইউটার্ন বা ইউলুপ নির্মাণের পরও সড়কগুলোতে যানজট থাকছে।

কামরুল ইসলাম: কোনো বিষয়ে মন্তব্য করতে গেলে আগে সে বিষয় সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। তারপরে মন্তব্য করাই শ্রেয়। প্রসারিত রাস্তায় স্বাচ্ছন্দ্যে চলা যায়। ইউলুপে সফলতা আসছে। নিয়ম মেনে গাড়ি চালালে ইউলুপে যানজট লাগার কোনো সম্ভাবনা থাকে না। আর নতুন ইউটার্নকে যদি প্রচলিত ইউটার্নের মতো মনে করে অন্য সব গাড়িকে থামিয়ে দিয়ে কোনো গাড়ি একা ঘুরতে চায়, তাহলে ব্যতিক্রমধর্মী ফলাফল আসতে বাধ্য। এর মধ্য দিয়ে অন্য গাড়িকে না থামিয়েও যে নির্বিঘ্নে ঘোরা যায়, এ বিষয়টিতে ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হবেন চালকরা।

জাগো নিউজ: টার্ন নিতে আসা গাড়িগুলোর একটা বড় অংশ বাম লেনে চলে আসে, এর ফলে যেমন অন্য গাড়ির গতি কমে যাচ্ছে, তেমনি যানজটও তৈরি হয়। এ সমস্যাটির সমাধান কী?

কামরুল ইসলাম: প্রচলিত ইউটার্নের সঙ্গে নতুন ইউটার্নগুলোকে এক করা যাবে না। ঘোরার সময় রাস্তার একদম বাঁ দিকে গিয়ে চলমান সমস্ত গাড়িকে থামিয়ে দিয়ে একা ঘোরার যে পুরনো অভ্যাস সেটা পরিত্যাগ করতে হবে। ইউটার্নে এসব না করেও ঘোরা যায়। চালকরা ধীরে ধীরে এতে অভ্যস্ত হবেন।

জাগো নিউজ: সিটি করপোরেশন থেকে কী ধরনের সহায়তা পেয়েছেন?

কামরুল ইসলাম: ২০১৫ সাল থেকে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে কাজ করছি। সিটি করপোরেশনের প্রতি লিখিত নির্দেশনা ছিল পদ্ধতিটি বাস্তবায়নের জন্য আমাকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতে। তারা আমাকে যথেষ্ট সাহায্য করেছে।

জাগো নিউজ: বাকি ইউটার্ন বা লুপগুলোর কাজ শেষ হতে আর কতদিন লাগবে?

কামরুল ইসলাম: এখন বেশ কয়েকটির নির্মাণকাজ চলমান আছে। সবার সহযোগিতা পেলে আর দুই থেকে তিন মাসের মধ্যেই নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবে বলে আশা করছি।

জাগো নিউজ: সড়কে শৃঙ্খলা আনতে ইউটার্ন-ইউলুপ ছাড়া আর কী কী পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে?

কামরুল ইসলাম: সড়কে শৃঙ্খলা আনতে শুধু ইউটার্ন-ইউলুপে ভরসা করলে চলবে না। সবাইকে ট্রাফিক নিয়ম মেনে গাড়ি চালানোতে বাধ্য করতে হবে। এক সড়কে একইসঙ্গে উচ্চগতি ও ধীরগতির যানবাহন নিরুৎসাহিত করতে হবে। ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে পথচারীদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে ফুটওভার ব্রিজগুলোতে চলন্ত সিঁড়ি লাগাতে হবে। গণপরিবহনের ফিটনেস যাচাই করার পাশাপাশি চালকের দক্ষতা যাচাই করতে হবে নিয়মিত।

এসএম/এইচএ/জেআইএম