স্থলবন্দর বেনাপোল দিয়ে আসা ৩৮৮ বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীকে যশোরের হোটেলেই ঈদ উদযাপন করতে হবে। সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধির অংশ হিসেবে তারা ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে এই হোটেলগুলোতে অবস্থান করছেন। তবে ঈদের দিন তাদের সেমাই, পোলাও, মাংসসহ উন্নতমানের খাবার সরবরাহের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
Advertisement
যশোরের জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ১ মে এবং পরবর্তীতে বেনাপোল বন্দর দিয়ে দেশে ফেরা বাংলাদেশিদের ঈদের দিন হোটেলেই থাকতে হবে। ৩০ এপ্রিল দেশেফেরত আসাদের কোয়ারেন্টাইন শেষ হবে সম্ভাব্য ঈদের দিন (১৪ মে)। এখন পর্যন্ত আসা যাত্রীদের হিসেবে ঈদের দিন হোটেলেই থাকতে হচ্ছে ৩৮৮ জনকে। ঈদের দিন (১৪ মে) ছুটি মিলছে ১০১ জনের। ঈদ একদিন আগে উদযাপিত হলে (চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ১৩ মে) এদেরও হোটেলেই হবে ঈদ।
যশোরের জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, গত ১৪ দিনে (২৬ এপ্রিল থেকে ৯ মে) পর্যন্ত বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে দেশে প্রবেশ করেছে ২ হাজার ৬৬৬ জন বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী। এদের মধ্যে যশোর জেলায় অবস্থান করছেন এক হাজার ১৭৬ জন। এরমধ্যে যশোর শহরের বিভিন্ন হোটেলে ৪৬৪ জন, বেনাপোলে হোটেলে ৪৩৮জন, গাজীরদরগায় ১৪০জন, যশোর বক্ষব্যাধি হাসপাতালে ৯৯জন, অন্যান্য ক্লিনিকে তিনজন ও যশোর জেনারেল হাসপাতাল করোনা ইউনিটে পজিটিভ ১৩জনসহ ৩২ জনকে রাখা হয়েছে।
ভারত ফেরত রোগীদের কোয়ারেন্টাইনে রাখার জন্য যশোর জেলায় ২৯টি হোটেল রিকুইজিশন করেছে জেলা প্রশাসন। এর মধ্যে শহরের ১৬টি হোটেল রয়েছে। এগুলো হলো- যশোর শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কের থ্রি-স্টার মানের আবাসিক, হোটেল জাবির ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল ওরিয়ন, হোটেল হাসান ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল সিটি প্লাজা, হোটেল ম্যাগপাই, হোটেল আরএস, হোটেল মনিহার, হোটেল সোনালী, হোটেল শাহরিয়ার, হোটেল সিটি, হোটেল বলাকা, হোটেল নয়ন, হোটেল নিউওয়ে, হোটেল ম্যাক্স, হোটেল প্রিন্স।
Advertisement
এছাড়াও বেনাপোলে নেয়া হয়েছে আরও ১৩টি হোটেল। এগুলো হলো- রজনীগন্ধা, পোর্টভিউ, অ্যারিস্টোকেট, জুয়েল আবাসিক, চৌধুরী হোটেল, নিশাদ হোটেল, ফ্রেশ হোটেল, নাহিদ হোটেল, হোটেল সানসিটি, মৌ হোটেল, হোটেল সিটি, বেনাপোল পর্যটন ও রহমানিয়া হোটেল। পাশাপাশি রয়েছে ঝিকরগাছার গাজীর দরগাহ মাদরাসা।
সূত্র আরও জানায়, গত ৩০ এপ্রিল বিশেষ অনুমতি নিয়ে বেনাপোল বন্দর দিয়ে দেশে প্রবেশ করা পাসপোর্টযাত্রীদের মধ্যে ৬১ জন যশোরের হোটেলে, ২৬ জন বেনাপোলের হোটেলে এবং ১৪ জন গাজীর দরগাহ মাদরাসায় রয়েছেন। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ৩০ রমজান হলে ১৪ মে ঈদের দিন সকালে তারা প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন থেকে মুক্তি পাবেন। আর ১৩ মে ঈদ হলে এদের ঈদও কাটবে হোটেলে।
এছাড়া ১ মে থেকে এখন পর্যন্ত আগত সকল পাসপোর্ট যাত্রীকেই হোটেলে কোয়ারেন্টাইনের মধ্যেই ঈদ অতিবাহিত হবে। গত ১ মে থেকে ৯ মে পর্যন্ত আসা ৩০১ জন পাসপোর্ট যাত্রী রয়েছেন যশোরের হোটেলে, ৮৩ জন রয়েছেন বেনাপোলের হোটেলে এবং ৪ জন রয়েছেন গাজীর দরগাহে। সবমিলিয়ে ৩৮৮ জন হোটেল কোয়ারেন্টাইনেই ঈদ উদযাপন করবেন। একইসঙ্গে এর পরে যারা আসবেন তারাও যুক্ত হবেন এই কাতারে।
যশোরের জাবির হোটেল, হোটেল হাসান ও ওরিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জেলা প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা মুনা আফরিন জানান, নির্দেশনা অনুযায়ী প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে ১৪ দিন অতিবাহিত করতে হবে। ফলে ঈদের আগে যাদের কোয়ারেন্টাইন সম্পন্ন না হবে, তাদের ঈদ হোটেলেই কাটাতে হবে।
Advertisement
যশোরের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহমুদুল হাসান জানান, ১ মে বা তারপরে বেনাপোল বন্দর দিয়ে আসা পাসপোর্টযাত্রীদের মধ্যে যারা হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে আছেন তাদেরকে ঈদ হোটেলেই উদযাপন করতে হবে। নিজেদের, স্বজনদের এবং মানুষ ও দেশের প্রয়োজনেই ঈদের দিনও তাদেরকে হোটেলে থাকতে হবে। শুধু তারা নয়, কোয়ারেন্টাইন বা করোনা প্রতিরোধ কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, কর্মচারীদেরও কিন্তু বাইরেই ঈদ করতে হবে। ফলে কোয়ারেন্টাইনে যারা আছেন, সুস্থ স্বাভাবিকভাবে বাড়ি ফিরে গেলে পরের ঈদ স্বজনদের সঙ্গে উদযাপন করতে পারবেন।
যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী সায়েমুজ্জামান বলেন, ‘হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে থাকা পাসপোর্টযাত্রীদের জন্য ঈদের দিন সেমাই, পোলাও, মাংসসহ উন্নতমানের খাবার সরবরাহের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসন থেকে কোয়ারেন্টাইনে থাকা বাংলাদেশিদের এই খাবার সরবরাহ করা হবে। হোটেল সিটিপ্লাজা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের হোটেলে থাকা পাসপোর্টযাত্রীদের তারাই এ খাবার সরবরাহ করবে। এছাড়া অন্যান্য হোটেলের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’
মিলন রহমান/এসজে/জিকেএস