বিশেষ প্রতিবেদন

মিটার না দেখেই বিদ্যুৎ বিল!

মো. সানু একজন ব্যবসায়ী। তিনি রাঙামাটি শহরের বনরূপা এলাকার বাসিন্দা। বিদ্যুৎ বিভাগের বিরুদ্ধে বিলে অনিয়মের অভিযোগ তুলে বলেন, মিটার আছে কিন্তু বিদ্যুৎ বিভাগের রিডাররা কোনো সময় রিডিং দেখতে যান না। তিনি অভিযোগ করে বলেন, রিডিং না দেখেই ধরিয়ে দেয়া হয় অতিরিক্ত টাকার বিদ্যুৎ বিল। ফলে প্রতি মাসে দিতে হচ্ছে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল। এছাড়া অনেক সময় বিল পৌঁছানো হয় পরিশোধের সময় চলে যাওয়ার পর। এতে বিল পরিশোধ করা সম্ভব হয় না। পরে দেখা যায় সংযোগ কেটে দেয়া হয়েছে। এরপর পুনঃসংযোগ নিতে গিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগে কর্মরত লোকজনকে দিতে হয় মোটা অংকের ঘুষ ও জরিমানা। এভাবে প্রতিনিয়ত নানা হয়রানি ও বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে লোকজন।শহরের চম্পকনগরের বাসিন্দা মুজিবুল আলম বলেন, লাইনে বিদ্যুতের সমস্যা দেখা দিলে একশ’ বার ফোন করলেও বিদ্যুৎ অফিস কর্ণপাত করে না। এছাড়া গড়বিল ধরিয়ে দেয়। বিলে কোনো সামঞ্জস্য নেই। কোনো মাসে ৭শ’ আবার কোনো মাসে ১২শ’ টাকার বিল দেয়া হয়।শহরের ফরেস্ট কলোনির বাসিন্দা কামাল হোসেন বলেন, মিটার না দেখেই প্রতি মাসে মনগড়া বিল দেন বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন। শহরের বনরূপা চৌমুহনী এলাকার ব্যবসায়ী হৃদয় ও ঠিকাদার কুদ্দুছ বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। কিন্তু অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার নেই। তাদের বিলে বিশাল ঘাপলা। ঠিকমতো রিডিং চেক করে না। এছাড়া রয়েছে লোডশেডিং আর বিরক্তিকর লো ভল্টেজ।শহরের ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকা রিজার্ভবাজারের তাহের ক্লথ স্টোরের মালিক আমান বলেন, প্রতি মাসে তার মিটার রিডিংয়ের চেয়ে অনেক বেশি বিদ্যুৎ বিল দেয়া হয়ে থাকে। ফলে দিতে হচ্ছে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল।  এভাবে রাঙামাটি বিদ্যুৎ বিভাগের বিরুদ্ধে বিলে অনিয়ম ও ঘাপলা নিয়ে গ্রহকদের অভিযোগের শেষ নেই। যেসব গ্রাহকের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে তারা সবাই এক বাক্যে বলেছেন এতে চরম হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করেছে রাঙামাটি বিদ্যুৎ বিভাগ। এ বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রতন কুমার পাল বলেন, অভিযোগ অনেক আসে। তবে কোনো কোনো অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে দেখা যায় তা সঠিক নয়। ফলে কারও বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয় না।মিটার রিডিং না দেখে গ্রহকদের কাছে গড়বিল দেয়ার অভিযোগের বিষয়টি স্বীকার করে নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, মিটার রিডিং দেখার জন্য এলাকাভিত্তিক রিডার দায়িত্বে রয়েছেন। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আছে যে, তারা এলাকায় না গিয়ে মিটার রিডিং চেক না করেই গড় হিসাব দাখিল করে থাকেন। কিন্তু এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কারও বিরুদ্ধে লিখিত ও প্রামাণিক অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে না। বিষয়টির ব্যাপারে গ্রাহকদের আরও সচেতন হওয়া উচিত। তাই জনগণের সহযোগিতায় সুনির্দিষ্ট অভিযোগ প্রমাণ করা গেলে দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া যাবে। তিনি বলেন, রিডাররা ঘরে ঘরে গিয়ে মিটার রিডিং চেক না করে হিসাব দিচ্ছে। ফলে বিলে গড় ও গজামিল হচ্ছে। এক্ষেত্রে রাজস্ব ক্ষতির আশঙ্কাও আছে। কেননা একদিকে যেমন অধিক বিল হলে গ্রাহকদের লোকসান অন্যদিকে কম বিল হলে রাজস্ব ক্ষতি। কিন্তু মাঝখানে ফায়দা লুটছে অসৎ কর্মচারীরা। মিটার রিডিং চেকিংয়ের জন্য রিডারদের আলাদা বিল দেয়া হয়। তারা প্রতি মাসে মিটার রিডিং চেকিং দেখিয়ে পুরোটা বিল তুলে নিচ্ছে। সেজন্য অভিযোগ প্রমাণিত হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া যাবে।রাঙামাটি বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রতন কুমার পাল বিদ্যুৎ চুরির অভিযোগ প্রশ্নে বলেন, নানা ঘাপলা ও ফাঁক-ফোকরের কারণে যথেষ্ট বিদ্যুৎ চুরি হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে রাঙামাটিতে বিদ্যুৎ খাতে লোকসান প্রায় ৩০ ভাগ। এই লোকসানের মধ্যে ১২ ভাগই বিদ্যুৎ চুরি হয়ে যাওয়ার কারণে হচ্ছে। বাকি লোকসান লাইনে ত্রুটি ও ট্রান্সফরমার বিকল হয়ে গেলে সেগুলো মেরামতসহ বিভিন্ন খাতে ব্যয় হওয়ায় হচ্ছে। লোকজন সচেতন হলে বিদ্যুৎ চুরি রোধসহ দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা সম্ভব হবে।তিনি আরও বলেন, রাঙামাটি বিদ্যুৎ বিভাগে লোকবল খুব কম। নেই প্রয়োজনীয় যানবাহন। এসব সঙ্কটের কারণে সঠিক তদারকি ও ব্যবস্থাপনা সম্ভব হয় না। ফলে এখানে বিদ্যুতে লোকসান যাচ্ছে।এসএস/পিআর

Advertisement