এ যেন রবীন্দ্রনাথের ‘সোনার তরী’ কবিতার দৃশ্যপট, ‘ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই ছোট সে তরী...’। মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া একটি ফেরিতে শুক্রবার (৭ মে) তিল ধারণেরও ঠাঁই ছিল না। এক হাজার ২০০ যাত্রী নিয়ে পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে মাদারীপুরের শিবচরের বাংলাবাজার ঘাটে পৌঁছেছে ফেরিটি।
Advertisement
ঈদের আর সপ্তাহখানেক বাকি। তবে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে সরকারের নির্দেশনায় লঞ্চসহ নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে ট্রেনও। জেলায় জেলায় বাস চলাচল শুরু হলেও বন্ধ দূরপাল্লার বা আন্তঃজেলা বাস চলাচল।
কিন্তু করোনাভীতিকে উপেক্ষা করেই একসঙ্গে ঈদ উদযাপনে নানান কায়দায় নাড়ির টানে ঢাকা থেকে গ্রামে ফিরতে শুরু করেছে মানুষ। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ এক্ষেত্রে ব্যবহার করছে শিমুলিয়া ঘাটকে। ঢাকা থেকে মাইক্রোবাসসহ নানা কায়দায় শিমুলিয়া ঘাটে গিয়ে সেখান থেকে শিবচরের বাংলাবাজারে যাচ্ছে। আর ওই ঘাট থেকে একইভাবে পৌঁছাচ্ছে গন্তব্যে। যদিও এজন্য তাদের ভোগান্তির সীমা থাকছে না।ঢাকার ওষুধ ব্যবসায়ী আকতারুজ্জামান খান। গন্তব্য মাদারীপুরের শিবচরে। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে শিমুলিয়া ঘাটে পৌঁছান তিনি। তবে তিনি কোনোভাবেই ফেরিতে গাড়ি ওঠাতে পারেননি। বাধ্য হয়ে গাড়ি শিমুলিয়া ঘাটে চালকের কাছে রেখে দেন। পরে পরিবার-পরিজন নিয়ে উঠে যান ফেরিতে।
আকতারুজ্জামান খান বলেন, ‘লকডাউনের কারণে পদ্মায় চলাচলকারী লঞ্চ ও স্পিডবোট বন্ধ। তাই ফেরিতে যাত্রীর চাপ অনেক বেশি। ফেরিতে গাড়ি ওঠানোর জন্য দুপুর ১২টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেছি। তবে যাত্রীদের জন্য কোনোভাবেই গাড়ি ফেরিতে ওঠানো সম্ভব হলো না। ফেরির মধ্যে একে অপরের গায়ের সঙ্গে গা লাগিয়ে আসতে হলো।’
Advertisement
তিনি বলেন, ‘প্রায় দেড় হাজার মানুষ ওই ফেরিতে পার হয়েছেন। মানুষের জন্য কোনোভাবেই ফেরিতে গাড়ি ওঠানো যায়নি। তাই গাড়ি চালকের কাছে রেখে আসতে বাধ্য হলাম।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাদারীপুরের শিবচরের বাংলাবাজার ফেরিঘাটে শুক্রবার (৭ মে) সকাল থেকে হঠাৎ করেই ঘরমুখো যাত্রীদের ভিড় অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায়। ঈদের এখনো সপ্তাহখানেক বাকি থাকলেও দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ঘরমুখো যাত্রা শুক্রবার সকাল থেকেই শুরু হয়েছে। বেলা সোয়া ১১টার দিকে শিমুলিয়া থেকে রোরো ফেরি এনায়েতপুরী শুধু যাত্রী নিয়েই শিবচরের বাংলাবাজার ঘাটে এসে ভেড়ে। এসময় ফেরিতে কোনো গাড়ি ছিল না।
ফেরিঘাট সূত্র জানা গেছে, যাত্রীদের চাপের কারণেই শিমুলিয়া থেকে ফেরিটিতে কোনো গাড়ি উঠতে পারেনি। এ ফেরিতে এক হাজার ২০০’র বেশি যাত্রী ওঠেন।
বিআইডব্লিউটিসির বাংলাবাজার ফেরিঘাট সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সকাল থেকেই দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার যাত্রীদের চাপ রয়েছে। হাজার হাজার যাত্রী ঈদের আগেভাগেই বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। নৌরুটে রোরোসহ ১৪টি ফেরি চলাচল করছে। তবে যাত্রীদের সংখ্যা বেশি থাকায় ফেরিতে গাড়ি অপেক্ষাকৃত কম পার হচ্ছে। ফেরিতে গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা থেকে শুরু করে যাত্রীদের বসার জায়গাসহ সর্বত্র ছিল উপচেপড়া ভিড়।
বরগুনাগামী যাত্রী আসমত আলী বলেন, ‘লঞ্চসহ দূরপাল্লার পরিবহন তো বন্ধ। ভেঙে ভেঙে বাড়ি ফিরতে হবে। নৌরুটে শুধু ফেরি চলছে। আজ প্রচুর ভিড় ছিল ফেরিতে। করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউন আর স্বাস্থ্যবিধি—সব হযবরল অবস্থা।’গোপালগঞ্জগামী যাত্রী আব্দুস শুকুর মিয়া বলেন, ‘ফেরি ছাড়া তো আর কোনো নৌযান নাই। এ কারণেই ফেরিতে প্রচুর ভিড় যাত্রীদের। ঈদের আগেই পরিবার নিয়ে বাড়ি যাচ্ছি। সামনে আরও ভিড় বাড়তে পারে।’
Advertisement
বরিশালের যাত্রী ফারজানা আক্তার বলেন, ‘ঈদের আগ মুহূর্তে যাত্রীদের আরও ভিড় বেড়ে যায়। বাস চলে না। ভেঙে ভেঙে বাড়ি যেতে হবে। তাই কয়েকদিন আগেই বাড়ি যাচ্ছি।’
বাংলাবাজার ঘাট সূত্রে জানা গেছে, যাত্রীদের পারাপারের জন্য বিকল্প কোনো নৌযান না থাকায় ফেরিতে যাত্রীদের প্রচুর চাপ রয়েছে। ঘাটে ফেরি ভিড়লেই যাত্রীরা উঠে যাচ্ছেন। এতে করে গাড়ি উঠতে পারছে না ফেরিতে। বাধ্য হয়ে শুধু যাত্রীদের নিয়ে ফেরি চলাচল করছে।
এদিকে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় দূরপাল্লার যাত্রীরা শিবচরের বাংলাবাজার ঘাটে এসে বিপাকে পড়ছেন। মাইক্রোবাস, থ্রি-হুইলার আর মোটরসাইকেলযোগে যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছাতে হচ্ছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে বাড়ি ফেরা যাত্রীদের দুর্ভোগ আরও বেশি। দীর্ঘপথ তাদের কয়েক দফা গাড়ি পাল্টে যেতে হচ্ছে। আর গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া।
এ কে এম নাসিরুল হক/এসআর/এইচএ/এএসএম