জাতীয়

ঈদের আগে শ্রমিকের মজুরি-বোনাস-বকেয়া পরিশোধের দাবি

আসন্ন ঈদুল ফিতরের কমপক্ষে এক সপ্তাহ আগে প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক নির্বিশেষে সব শ্রমিকের বকেয়া মজুরি ও বোনাস (উৎসব ভাতা) প্রদান এবং বন্ধ পাটকল-চিনিকল শ্রমিকদের সব পাওনা পরিশোধের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ।

Advertisement

এই দাবিতে দেশব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে শুক্রবার (৭ মে) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত এক সমাবেশ থেকে এ দাবি জানানো হয়।

বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের সহ-সভাপতি মো. খলিলুর রহমানের সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় সদস্য আতিকুল ইসলাম টিটোর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের সহ-সভাপতি শ্যামল কুমার ভৌমিক, বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শাহ আলম ভূইয়া, বাংলাদেশ ওএসকে গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ, বাংলাদেশ হোটেল রেস্টুরেন্ট সুইটমিট শ্রমিক ফেডারেশনের সহ-সভাপতি আখতারুজ্জামান খান, বাংলাদেশ সিএনজি অটোরিকশা চালক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক শেখ হানিফ, ঢাকা পোশাক প্রস্তুতকারী শ্রমিক সংঘের যুগ্ম-আহ্বায়ক মো. মাহাবুব আলম মানিক প্রমুখ।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সরকার ঘোষিত ‘লকডাউনের’ সুযোগে মালিকদের দুরভিসন্ধি, অবহেলা ও মালিক তোষণ নীতির কারণে শ্রমিকরা মজুরি-বোনাস নিয়ে দুর্ভোগের পাশাপাশি ছাঁটাই এবং লে-অফের যন্ত্রণা ভোগ করেছেন।

Advertisement

গার্মেন্টস মালিকরা প্রণোদনা পাওয়ার পরও মজুরি পরিশোধে নানা রকম টালবাহানা করেছেন। গত বছর গার্মেন্টস মালিকরা শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধের জন্য সরকারের কাছ থেকে পাঁচ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনাসহ নানামুখী সুযোগ-সুবিধা আদায় করেও সকল শ্রমিকদের পূর্ণ মজুরি ও বোনাস পরিশোধ করেননি। গার্মেন্টস শিল্প রক্ষার নামে মূলত লগ্নিপুঁজির স্বার্থের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি আনুকূল্যে গার্মেন্টস গত বছরও বন্ধ ছিল না, আর এ বছর গার্মেন্টস লকডাউনের আওতামুক্ত।

উপরন্তু মালিকদের প্রতি সদাশয় সরকার রফতানিমুখী শিল্পের জন্য কর্মঘণ্টা এবং ওভারটাইম সংক্রান্ত শ্রম আইনের ১০১, ১০২ ও ১০৫ নং ধারা ৬ মাসের জন্য স্থগিত করে মালিকদের বেপরোয়া শ্রম শোষণের সুযোগ করে দিয়েছেন। অথচ করোনা পরিস্থিতিতেও শ্রমিকদের হাড়ভাঙা পরিশ্রমের ফলশ্রুতিতে চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই থেকে এপ্রিল) তৈরি পোশাক রফতানি করে ২৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেন মালিকরা, যা গত বছরের তুলনায় ৬ দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি।

শুধু এপ্রিল মাসেই আয় ৩ দশমিক ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা গত এপ্রিলের চেয়ে ৬ গুণ বেশি। তারপরও মালিকরা শ্রমিকদের মজুরি-বোনাস প্রদানে সরকারি প্রণোদনা চেয়ে নানারকম কূটকৌশল ও ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়ে শ্রমিকদের বঞ্চিত করার পাঁয়তারা চালাচ্ছেন।

নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, যাত্রীবাহী লঞ্চ, দূরপাল্লার বাস, হোটেল-রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান লকডাউনের কারণে বন্ধ এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের রিকশা-ঠেলা-দিনমজুর, স-মিল, চাতাল, মুদ্রণ, দোকান কর্মচারী, নির্মাণ, বারকি, দর্জি, স্বর্ণশিল্পি, ক্ষৌরকার, পাদুকা শ্রমিকসহ নিম্নআয়ের কর্মজীবী অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বিভিন্ন পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে করোনার কারণে নতুন করে গত এক বছরে আড়াই কোটি মানুষ বেকার হয়েছেন এবং ৪২ শতাংশ শ্রমিকের আয় আগের তুলনায় কমেছে।

Advertisement

তারা বলেন, এরকম অবস্থায় সরকারের ৩৬ লাখ দরিদ্র পরিবারকে ২৫০০ টাকা নগদ সহযোগিতা যে গত বছরের ন্যায় পক্ষপাতিত্ব, স্বজনপ্রীতি, অনিয়ম ও দুর্নীতিতে শেষ হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। করোনাকালীন সময়ে গরীব মানুষের সংখ্যা বাড়লেও ব্যাপক লুটপাটের ফলে ২০২০ সালে দেশে ১০ হাজার ৫১ জন নতুন কোটিপতির সৃষ্টি হয়েছে।

কিন্তু শ্রমিক ও শ্রমজীবীদের এই দুঃসহ সময়ে না কোন মালিক তাদের সহায়তা করছেন; না তারা পাচ্ছেন সরকারি সহায়তা। এমন কি বন্ধ পাটকল-চিনিকলের শ্রমিকদের বকেয়া পাওনাও পরিশোধ করা হয়নি। শ্রমিক ও শ্রমজীবীদের জীবন ও জীবিকার নিশ্চয়তা বিধান না করে লকডাউন চাপিয়ে দেওয়া সরকারের দায়হীনতার পরিচয় বহন করে।

মালিকদের অবহেলার কারণে ঈদ যেন শ্রমিকদের জন্য আশংকা ও উত্তেজনার বিষয় না হয় সে বিষয়ে নজর রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন নেতৃবৃন্দ। মজুরি-বোনাস নিয়ে যেকোনো জটিলতা সৃষ্টি হলে তার দায় মালিকদেরকে বহন করতে হবে বলে নেতৃবৃন্দ হুঁশিয়ারি দেন।

এফএইচ/এসএস/এএসএম