রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শতবর্ষী গাছ না কাটার দাবিতে বেলা ও সমমনা বেসরকারি ছয় সংগঠন এবং একজন স্থপতির পক্ষ থেকে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
Advertisement
বৃহস্পতিবার (৬ মে) নোটিশ পাঠানোর বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন বেলার আইন সমন্বয়কারী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ কবীর।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব (স্থানীয় সরকার বিভাগ), প্রধান বন সংরক্ষক, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক ও গণপূর্ত অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলীকে নোটিশে বিবাদী করা হয়েছে।
লিগ্যাল নোটিশ প্রেরণকারী সংগঠনগুলো হলো- বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফরমস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি), নিজেরা করি, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), আইন ও শালিস কেন্দ্র (আসক) এবং স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন
Advertisement
ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মূল ও প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য বিনষ্ট করণ হতে বিরত থাকতে, এ উদ্যানের শতবর্ষী ও বিলুপ্তপ্রায় পাখিদের আশ্রয়স্থল বৃক্ষগুলোকে না কাটতে এবং ইতোমধ্যে কর্তন করা বৃক্ষগুলোর জায়গায় একই প্রজাতির তিন গুণ বৃক্ষ রোপণের দাবি জানিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এই আইনি নোটিশ পাঠানো হয়।
সংগঠনসমূহ উল্লেখিত দাবির পাশাপাশি স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে মূল কাঠামোর আগের রূপে ফিরিয়ে এনে ঐতিহ্য রক্ষারও দাবি জানিয়েছে।
নোটিশে বলা হয়, সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ”সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ (তৃতীয় পর্যায়)” শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য গণপূর্ত অধিদফতর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিদ্যমান বেশকিছু শতবর্ষী বৃক্ষ কেটে ফেলছে। শতবর্ষী এসব বৃক্ষসমূহ বিলুপ্তপ্রায় পাখির আবাস্থল। যদিও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গৃহীত মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কিছু গাছ কর্তন করা হলেও প্রায় ১০০০ (এক হাজার) গাছ লাগানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে মর্মে উল্লেখ করেছে।
কিন্তু পুরোনো শতবর্ষী বৃক্ষ নিধন করে লাগানো নতুন গাছ কখনোই উদ্যানের পরিবেশ রক্ষায় একই ভূমিকা পালন করবে না, ফলে পুরানো এবং বিলুপ্তপ্রায় পাখির আশ্রয়স্থল ও আবাসের স্থান ধ্বংস করে বায়ু দূষণের শীর্ষে থাকা মহানগরীকে আরও নাজুক অবস্থায় ফেলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
Advertisement
এতে বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পিত এবং গণপূর্ত অধিদফতর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের পরিবেশগত ছাড়পত্র নেই। উদ্যানের সবুজকে ধ্বংস করা প্রকারান্তরে উদ্যানকে ধ্বংস করার ও তার শ্রেণি পরিবর্তনের শামিল যা ২০০০ সালের ৩৬ নম্বর আইনের (জলাধার সংরক্ষণ আইন) পরিপন্থী।
একই আইন অনুযায়ী উদ্যান হিসেবে চিহ্নিত ও ব্যবহৃত কোনো ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যাবে না বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য হস্তান্তরও করা যাবে না।
নোটিশে আরও বলা হয়েছে, তাছাড়া উদ্যানের সবুজ ধ্বংস করে এহেন নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যে এ উদ্যানকে রক্ষায় বেলা কর্তৃক দায়েরকৃত একটি রিট মামলায় (নং ১৮৫৯/ ২০০৮) হাইকোর্টের দেয়া রায়েরও পরিপন্থী। আইন ও আদালতের রায়ের সঠিক প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য অটুট রাখতে ও এ উদ্যানের শতবর্ষী বৃক্ষসমূহ রক্ষার্থে সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে এই নোটিশ পাঠানো হয়েছে বলেও জানানো হয়।
এর আগে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাছ কাটা বন্ধে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। তিনিও বৃহস্পতিবার এই নোটিশ পাঠিয়েছেন।
নোটিশে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ, গণপূর্ত বিভাগের চিফ ইঞ্জিনিয়ার মো. শামিম আখতার এবং চিফ আর্কিটেক্ট অব বাংলাদেশ মীর মনজুর রহমানকে বিবাদী করা হয়েছে। নোটিশ পাঠানোর বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
এফএইচ/এমআরআর