‘জীবন বাঁচানোর চেয়ে আর বড় কোনো কাজই গুরুত্বপূর্ণ নয় এই মুহূর্তে’- এভাবেই টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলছিলেন ভারতীয় জাতীয় দল এবং সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বাঁ-হাতি পেসার খলিল আহমেদ। আইপিএল স্থগিত ঘোষণার পর রাজস্থানের জেলা শহর টঙ্ক-এ যাওয়ার জন্য বিমানবন্দর থেকে একটি ট্যাক্সি রিজার্ভ করছিলেন খলিল। ওই সময়ই টাইমস ইন্ডিয়ার মুখোমুখি হন তিনি।
Advertisement
আইপিএল স্থগিত হওয়ার সময়টার বর্ণনা দিয়ে খলিল আহমেদ বলেন, ‘আমি ওই সময় দিল্লিতে একটি হোটেলে অবস্থান করছিলাম। সানরাইজার্স হায়দরাবাদ টিম ম্যানেজমেন্টের এক সদস্য দরজায় নক করলেন। বললেন, পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত রুমের ভেতরে অবস্থান করতে। এর কিছুক্ষণ পর আবারও নক করলেন তিনি। এবার বললেন, দ্রুত ব্যাগ-ব্যাগেজ গুছিয়ে নাও। এখনই বাড়ি ফিরে যেতে হবে।’
ওই একই দিন সানরাইজার্স হায়দরাবাদের ক্রিকেটার ঋদ্ধিমান সাহার কোভিড-১৯ পজিটিভ রেজাল্ট আসে। দিল্লিতে সানরাইজার্সের ম্যাচ খেলার কথা ছিল মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে।
খলিল আহমেদ বলেন, ‘আমি আমার রুমে অবস্থান করছিলাম। একজন জানালো, আমাদের দলের নাকি কার করোনা পজিটিভ রেজাল্ট এসেছে। বিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, আমাদের সবাই যেন নিজ নিজ রুমের মধ্যে অবস্থান করি। কিছুক্ষণ পরই বিসিসিআইয়ের নির্দেশনার তালিকা এসে পৌঁছায়। বলা হয়, ব্যাগ-ব্যাগেজ গুছিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে যেতে হবে। বিসিসিআই এবং ফ্রাঞ্জাইজি আমাদের জানিয়েছে, নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে দেবে। আপাতত নির্দেশনা এ পর্যন্তই। বাকি নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করবো।’
Advertisement
বেশ কিছু ক্রিকেটার এবং সাপোর্ট স্টাফ করোনা পজিটিভ রেজাল্ট আসার পর গত মঙ্গলবারই অনির্দিষ্টকালের জন্য আইপিএল স্থগিতের ঘোষণা দেয় ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)। টাইমস অব ইন্ডিয়ার আগের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, কলকাতা নাইট রাইডার্সের ক্যাম্প থেকেই করোনাভাইরাস প্রবেশ করে দিল্লি ক্যাপিটালসের ক্যাম্পে।
কেকেআরের বরুন চক্রবর্তী বায়ো-বাবল ত্যাগ করে হাসতাপালে গিয়েছিলেন স্ক্যান করার জন্য। সেখান থেকে তিনি ভাইরাস বহন করে নিয়ে আসেন। তার কাছ থেকে আক্রান্ত হন সন্দিপ ওয়ারিয়র। আবার দিল্লি এবং কেকেআরের প্র্যাকটিস সিডিউল ছিল একই সময়ে। যেখানে ওয়ারিয়রের সঙ্গে দেখা হয় দিল্লি ক্যাপিটালসের অমিত মিশ্রের। পরে দেখা গেলো অমিত মিশ্রও কোভিড-১৯ আক্রান্ত।
তবে সানরাইজার্সের ঋদ্ধিমান সাহা কিভাবে কোভিড-১৯ পজিটিভ হলেন, এটা এখনও কেউ নিশ্চিত হতে পারেননি। তার সতীর্থ খলিল আহমেদও মনে করছেন, এটা একটা রহস্য।
খলিল বলেন, ‘আমরা সবাই তো বায়ো-বাবলের মধ্যেই ছিলাম। যে সব কঠোর নিয়ামবলী আমাদের দেয়া হয়েছিল, সেগুলোও আমরা অনুসরণ করছিলাম। করোনা আক্রান্ত কারো সংস্পর্শে আসার কোনো সুযোগ ছিল না। আমি সত্যিই অবাক হয়ে গেছি, যখন করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসলো। প্রটোকল অনুসারে আমাদের সবাইকেই নিজ নিজ রুমে অবস্থান করতে হচ্ছিল। নিখুঁত হ্যান্ডওয়াশ, সেনিটাইজেশন এবং মাস্কছাড়া কারো সঙ্গেই দেখা করা, কথা বলা নিষেধ ছিল। খাওয়ার সময় কিংবা কোচ ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার সময় আমাদের সারাক্ষণই মাস্ক পরে থাকতে হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, ধর্মীয়ভাবেও তো আমরা সারাক্ষণ প্রটোকলের মধ্যে থাকি, বায়ো-বাবল পালন করি। এখানে কোনো ভুল ছিল না।’
Advertisement
করোনার কারণে প্রথম দুটি ম্যাচ বাতিল করা হয়। কেকেআরের দু’জন এবং চেন্নাইয়ের দু’জন করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর। এরপর দিল্লি ও সানরাইজার্সের যখন দুই ক্রিকেটার করোনা আক্রান্ত হলেন, তখনই আর কাল বিলম্ব না করে আইপিএল স্থগিতের সিদ্ধান্ত দেয় বিসিসিআই।
খলিল বলেন, ‘জীবন বাঁচানোর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ এখন আর কিছুই নেই। আইপিএল স্থগিত করে দেয়ার যে সিদ্ধান্ত বিসিসিআই নিয়েছে, আমি সেটাকে স্বাগত জানাই। এখন কয়েকজন খেলোয়াড় আক্রান্ত। তারা হয়তো পুরো দলকেই আক্রান্ত করে দিতো। সুতরাং, বিসিসিআই সঠিক সিদ্ধান্তটিই নিয়েছে যে, তারা নিরাপদে আমাদেরকে বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছে।’
বিদেশি খেলোয়াড়দের সম্পর্কেও একইভাবে বিসিসিআই কাজ করছে বলে জানান খলিল। তিনি বলেন, ‘বিসিসিআই আমাদের জন্য সব কিছুই অ্যারেঞ্জ করে দিয়েছে। এমনকি বিদেশি ক্রিকেটারদের জন্যও। তারা আমাদের স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার পুরো দায়িত্ব পালন করছে কোনো সমস্যা ছাড়াই।
আইএইচএস/