জাগো জবস

নিজের প্রেরণায় বিসিএস ক্যাডার হয়েছেন ফিরোজ শাহ

ড. ডি এম ফিরোজ শাহ। বাবা ডা. মমিন উদ্দিন আহমেদ ও মা রহিমা বেগম। তিনি ১৯৬৯ সালের ০১ আগস্ট মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কুতুবপুর বাজার গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮৪ সালে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর ভাগ্যকুল হরেন্দ্রলাল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। এছাড়া মুন্সী কাদিরপুর উচ্চ বিদ্যালয়, নাওডোবা আমজাদিয়া একাডেমি ও শিবচর নন্দকুমার ইনস্টিটিউশনে পড়াশোনা করেছেন।

Advertisement

১৯৯৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূগোল বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৯৫ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে বিএড অর্জন করেন। ২০১০ সালে ফিলিপাইনের ম্যানিলার একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএড লাভ করেন। ২০১২ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি লাভ করেন। ২০১৩ সালে সুইডেনের স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করেন।

ফিরোজ শাহ ১৭তম বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারের মাধ্যমে শিক্ষকতা শুরু করেন। বর্তমানে ঢাকার সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজে ভূগোল বিষয়ে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। সম্প্রতি তার বিসিএস জয়, ভবিষ্যৎ স্বপ্ন ও সফলতার গল্প শুনিয়েছেন জাগো নিউজকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাংবাদিক ও কথাশিল্পী সালাহ উদ্দিন মাহমুদ—

জাগো নিউজ: আপনার ছোটবেলা কেমন কেটেছে?ফিরোজ শাহ: নাওডোবা ও কুতুবপুর বাজারে খুব দুরন্তভাবে কেটেছে। ১১ ভাই-বোন, মা-বাবা, গৃহকর্মী, আত্মীয়-স্বজন নিয়ে বিরাট পরিবার। কুতুবপুর বাজারে সপ্তাহে দুই দিন বিকেলে হাট বসত। দশ পয়সার বাতাসা-আইসক্রিম পেলে ধন্য হতাম। প্রাইমারি স্কুল থেকে ফিরে নদীতে সাঁতার কাটতাম। খালে-বিলে-পুকুরে মাছ ধরতাম। গাছে চড়ে আম-জাম-পেঁপে পাড়তাম। বিকেলে গোল্লাছুট, দাঁড়িয়াবান্ধা, ডাংগুলি, হা-ডু-ডু খেলে সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে কুপি বা হারিকেনের আলোয় পড়তে বসতাম। সকালে মসজিদে যেতাম আরবি পড়তে। এভাবেই আনন্দময় সময় কেটেছে ছোটবেলায়।

Advertisement

জাগো নিউজ: পড়াশেনায় কোন প্রতিবন্ধকতা ছিল কি?ফিরোজ শাহ: পড়াশোনার পুরোটাই প্রতিবন্ধকতায় ভরা। বাবা চাকরি না করা সত্ত্বেও প্রাইমারি পার হতে ৩টি স্কুলে যেতে হয়েছে। ৬ষ্ঠ শ্রেণি মুন্সী কাদিরপুর হাই স্কুলে শুরু হলেও ৮ম শ্রেণিতে ভর্তি হই শিবচর নন্দকুমার ইনস্টিটিউটে। এখানে ৩ দিন ক্লাস করে ২য় সাময়িক পরীক্ষা দিয়ে চলে আসি। ৯ম শ্রেণিতে নাওডোবা আমজাদিয়া একাডেমিতে পড়ে ১০ম শ্রেণিতে ভর্তি হই মুন্সীগঞ্জের ভাগ্যকুল হরেন্দ্রলাল হাই স্কুলে। এরপরে সরকারি জগন্নাথ কলেজ (নাইট শিফট), সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজ হয়ে বরহামগঞ্জ কলেজ থেকে ১৯৮৬ সালে এইচএসসি পাস করি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতায় ভর্তি হতে না পেরে সরকারি জগন্নাথ কলেজে গণিতে অনার্সে ভর্তি হয়ে পরে পাস কোর্স থেকে বিএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূগোল বিভাগে ভর্তি হই। এখানে প্রিভিয়াস পরীক্ষা দেওয়ার আগেই একটি প্রকল্পে চাকরি নিয়ে রাজশাহী চলে যাই। ওই সময় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো ছিল না। রাজশাহী-ঢাকা দুই বছর দৌড়াদৌড়ি করে বিনা বেতনে ছুটি নিয়ে এমএসসি শেষ করি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ১৯৯৪-৯৫ সেশনে সরকারি টিচার্স কলেজ, রাজশাহী থেকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে বিএড ডিগ্রি অর্জন করি।

জাগো নিউজ: বিসিএসের স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?ফিরোজ শাহ: প্রকল্পে চাকরি করার সময় বুঝতে পারলাম, একটি ক্যাডার চাকরি খুব জরুরি। জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে ভালো একটি চাকরি দরকার। আর ততদিনে এটা বুঝেছি, বিসিএসের মাধ্যমে চাকরি পাওয়া সহজ। কারণ একটি নির্দিষ্ট সিলেবাস ধরে ভালোমতো পড়াশোনা করলে সফল হওয়া যায়।

জাগো নিউজ: বিসিএস যাত্রার গল্প শুনতে চাই—ফিরোজ শাহ: বিসিএস যাত্রার গল্প খুবই আকর্ষণীয়। ১৫তম বিসিএস পরীক্ষায় আমি যে পছন্দক্রম দিয়েছিলাম; তাতে প্রথম পছন্দ ছিল পররাষ্ট্র ক্যাডার। প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষায় পাস করে ভাইভা বোর্ডে গিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়লাম। প্রথম পছন্দ পররাষ্ট্র ক্যাডার থাকায় তারা আমাকে ইংরেজিতে প্রশ্ন করে ইংরেজিতেই জবাব চান। কিন্তু ইংরেজিতে প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মতো অবস্থা আমার ছিল না। আমার ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা। ফলাফল ভালো হলো না। তবে আমি নিজেকে ভালোভাবে প্রস্তুত করার ব্রত নিলাম।

জাগো নিউজ: কততম বিসিএসের কোন ক্যাডারে আছেন?ফিরোজ শাহ: ১৯৯৮ সালে ১৭তম বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারের মাধ্যমে ভূগোল বিষয়ের প্রভাষক হিসেবে সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ রংপুরে যোগদান করি। ১৫তম বিসিএসের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করে ১৭তমে এসে সফল হই। এ সময় ভাইভার জন্য ব্যাপক প্রস্ততি নেই। ধার করে স্যুট বানাই। সাদা শার্ট, কালো প্যান্ট, কালো জুতা কিনি। ৭ দিন আগে চুল কেটে পরিপাটি হই। এভাবেই সফলতা আসে। এরপর বদলি হয়ে চাকরি করেছি সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ ফেনী ও বরিশালে।বর্তমানে ঢাকার সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে আছি।

Advertisement

জাগো নিউজ: কারো কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন কি?ফিরোজ শাহ: অনেকের কাছ থেকেই অনুপ্রেরণা পেয়েছি। তবে মূল প্রেরণা পেয়েছি নিজের কাছ থেকে। নিজের খুব জেদ ছিল, কোনো ক্যাডারে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবো। এ জন্য প্রচণ্ড পরিশ্রম করেছি। বাংলাদেশ পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের বর্তমান ডিআইজি হাবিবুর রহমান আমাকে অনুপ্রাণিত করেছেন। আমরা একত্রে প্রস্তুতি নিয়েছি এবং দু’জনই সফল হয়েছি।

জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?ফিরোজ শাহ: আমি যেহেতু একজন শিক্ষক প্রশিক্ষক; সেহেতু চাই শিক্ষক প্রশিক্ষণের বিস্তার। শিক্ষক হতে হলে সবার প্রশিক্ষক প্রয়োজন। সেটা প্রাইমারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য প্রযোজ্য। একজন বিশ্বমানের প্রশিক্ষক হয়ে দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে চাই। দেশের মাধ্যমিক স্তরের যেকোনো প্রতিষ্ঠান আমাকে আমন্ত্রণ জানালে তাদের শিক্ষকদের জন্য ১-২ দিনের ইনটেনসিভ টিচার মোটিভেশনাল প্রোগ্রাম করতে চাই। এটি ফেস টু ফেস বা অনলাইনে হতে পারে।

জাগো নিউজ: সাম্প্রতিক করোনা দুর্যোগে আপনার ভূমিকা কী?ফিরোজ শাহ: মহামারি করোনা দুর্যোগে খুব বড় ভূমিকা রেখেছি তা নয়—আবার কিছুই করিনি, তা-ও নয়। এসময় আমার পেশাগত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছি। অনলাইনে অনেক সেমিনারে অংশ নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সচেতন করেছি। করোনাকালীন শিক্ষা নিয়ে আন্তর্জাতিক সেমিনারে বাংলাদেশের হয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছি। এ ছাড়াও সাধ্যমত বিভিন্ন সংস্থাকে আর্থিক সহায়তা করেছি।

এসইউ/এএসএম