দেশজুড়ে

আমনে ব্যর্থ হলেও বোরোতে সফলতার আশা

গেল আমন মৌসুমে রংপুরে ন্যায্যমূল্যে সরকারি ধান-চাল সংগ্রহের অভিযান পুরোদমে ব্যর্থ হয়েছে। জেলায় ১০ হাজার ৩৮২ মেট্রিকটন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও অর্জন হয়েছিল মাত্র ২ মেট্রিক টন। ১৭ হাজার ৬৩৮ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত থাকলেও মিলাররা মাত্র ১ হাজার ৫৩৫ মেট্রিকটন চাল হস্তান্তর করেছেন।

Advertisement

গত বছরের আগস্ট থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ছিল আমন ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানের মেয়াদ। সরকারের পক্ষ থেকে ধানের ক্রয়মূল্য ছিল কেজি প্রতি ২৬ টাকা আর চালের মূল্য ছিল ৩৬ টাকা। এবার ধান ২৭ ও চালের ৪০ টাকা মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

আমনের ব্যর্থতা কাঁধে নিয়ে চলতি বোরো মৌসুমে সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে গত মঙ্গলবার ( ৪ মে) থেকে। রংপুর সদর খাদ্যগুদামে ওইদিন বিকেলে ফিতা কেটে বোরো ধান সংগ্রহ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মো. আসিব আহসান। তবে এবার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে বলে আশা করছে খাদ্য বিভাগ।

রংপুর খাদ্য বিভাগ থেকে জানা গেছে, রংপুর জেলায় গেল আমন মৌসুমে উপজেলা ওয়ারি ধান ও চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল রংপুর সদর উপজেলায় ১ হাজার ৭১ মেট্রিক টন। এর বিপরীতে এক কেজি ধানও কিনতে পারেনি খাদ্য বিভাগ। অন্যদিকে চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল দুই হাজার ৯৬৬ মেট্রিক টন। বিপরীতে কেনা হয়েছে মাত্র ২৬৭ মেট্রিক টন চাল।

Advertisement

বদরগঞ্জ উপজেলায় ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ৬ মেট্রিক টন। কেনা হয়নি এক কেজিও। চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ৮৪ মেট্রিক টন, কেনা হয়েছে মাত্র ২০ মেট্রিক টন।

মিঠাপুকুর উপজেলায় ধান কেনার কথা ছিল চার হাজার ১৯৮ মেট্রিক টন, কেনা হয়নি এক কেজিও। চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল তিন হাজার ৮৫৮ মেট্রিক টন, বিপরীতে কেনা হয়েছে মাত্র ৪১৯ মেট্রিক টন।

পীরগঞ্জ উপজেলায় ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ১৯৪ মেট্রিক টন, কেনা হয়েছে মাত্র দুই মেট্রিক টন। চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল তিন হাজার ৮০২ মেট্রিক টন, কেনা হয়েছে মাত্র ৬৭৯ মেট্রিক টন।

তারাগঞ্জ উপজেলায় ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫০২ মেট্রিক টন, কেনা হয়নি এক কেজিও। চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল দুই হাজার ৬৭৪ মেট্রিক টন, কেনা হয়নি এক কেজিও।

Advertisement

গঙ্গাচড়া উপজেলায় ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৫০ মেট্রিক টন, কেনা হয়নি এক কেজিও। চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৭৬ মেট্রিক টন, তবে এক ছটাক চালও কেনা যায়নি।

কাউনিয়া উপজেলায় ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৯৪ মেট্রিক টন। তবে ১ কেজি ধানও কেনা যায়নি। আর চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ২৯৪ মেট্রিক টন, সেখানে চাল কেনা হয়েছে মাত্র চার হাজার ৬০০ মেট্রিক টন।

পীরগাছা উপজেলায় ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৬৭ মেট্রিক টন, কেনা হয়নি এক কেজিও। অন্যদিকে চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ২৮৪ মেট্রিক টন, তবে এক ছটাক চালও কেনা সম্ভব হয়নি।

রংপুর জেলা খাদ্য কর্মকর্তার দফতর সূত্রে জানা গেছে, রংপুর জেলায় খাদ্য বিভাগের নিবন্ধিত অটোরাইস মিলসহ হাসকিং মিলার রয়েছেন ৮৮০ জন। এরমধ্যে চাল দেয়ার জন্য ৮১ জন চুক্তিবদ্ধ হলেও চাল দিয়েছেন মাত্র ৩০ জন মিলার।

রংপুর খাদ্য বিভাগের অজুহাত, বাজারে ধানের দাম বেশি আর সরকার নির্ধারণ করে দিয়েছে প্রতি মণ ধানের দাম ১০৪০ টাকা। সেই অনুযায়ী এক মণ ধানে চাল হয় ২৬ কেজি। সরকারের নির্ধারিত দাম অনুযায়ী প্রতি কেজি চালের দাম পড়ে ৩৬ টাকা। আর বাজারে চালের সর্বনিম্ন মূল্য ৪০ টাকা। ফলে চুক্তি করেও মিলাররা লোকসানের ভয়ে চাল দেয়নি। সে কারণেই সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয়েছেন তারা।

নাম না প্রকাশ শর্তে রংপুর খাদ্য বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, গত বছর বোরো মৌসুমেও রংপুর জেলায় ধান-চাল ক্রয় অভিযান ব্যর্থ হয়।

নিয়ম অনুযায়ী যেসব মিলারের লাইসেন্স আছে তাদেরকে চাল সরবরাহ করতে চুক্তিবদ্ধ করতে হবে। এবং যারা চাল দেয়ার জন্য চুক্তি করেন তারা যদি চাল না দেন তাহলে তাদের জামানত বাজেয়াপ্তসহ চুক্তি বাতিল করা হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে সে নির্দেশনা গেল দুই মৌসুম থেকে বাস্তবায়ন হয় না। ফলে চাল সংগ্রহ করতে পারেনি খাদ্য বিভাগ।

রংপুর জেলা মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সামছুল আলম বাবু জানান, সরকার আমনের মোটা চালের রেট দিয়েছে ৩৬ টাকা আর বাজারে সেটা বিক্রি হচ্ছে ৪২ টাকায়। তাহলে কী করে তারা চাল দেবে। সে কারণেই তারা চাল দেয়নি। এ জন্য ধানের সঙ্গে চালের দাম নির্ধারণের বিষয়টি সামঞ্জস্যপূর্ণ রাখা উচিত।

এদিকে, রংপুরে কৃষক অ্যাপসের মাধ্যমে শুরু হয়েছে অভ্যন্তরীণ বোরো ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযান। এ জন্য চালের সংগ্রহ মূল্য প্রতিকেজি ৪০ টাকা এবং ধানের ২৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার বিকেলে জেলা প্রশাসক মো. আসিব আহসান বলেন, ‘খাদ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পরিপত্র অনুযায়ী রংপুর সদর, মিঠাপুকুর ও তারাগঞ্জে কৃষক অ্যাপসের মাধ্যমে লটারি করে ধান ক্রয় করা হবে। এবার রংপুর জেলায় ২৭ টাকা কেজি দরে ১৭ হাজার ৪০৩ মেট্রিক টন ধান ও ৪০ টাকা কেজি দরে ২৮ হাজার মেট্রিক টন চাল ক্রয় করবে খাদ্য বিভাগ।’

রংপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. আব্দুল কাদের বলেন, ‘মূলত বাজারে ধান এবং চালের দাম বেশি হওয়ায় আমন মৌসুমে নির্ধারিত দামে আমরা ধান চাল সংগ্রহ করতে পারিনি। তবে বোরো মৌসুমে ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে বলে আশা করি। আর যারা চুক্তি করেও চাল সরবরাহ করেনি তাদের বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে।’

জীতু কবির/এসজে/এএসএম