করোনার প্রকোপে হাসপাতালগুলোতে রোগীর উপচেপড়া ভিড়। বেড খালি না থাকায় বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে রোগী ভর্তি করা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে বাধ্য হয়ে বাসায় থেকেই অনেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। পর্যাপ্ত অক্সিজেন ও আইসিইউ না থাকায় প্রতিদিন অনেক মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে আইসিইউ ও অক্সিজেন সঙ্কট মোকাবিলায় নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
Advertisement
সম্প্রতি বুয়েটের গবেষকরা ‘অক্সিজেট’ বা ‘জেটমিক্সিং’ নামের একটি ডিভাইস উদ্ভাবন করেছেন, যেটি বিদ্যুৎ ব্যবহার না করে স্বল্পমূল্যে করোনা রোগীদের উচ্চ প্রবাহের অক্সিজেন নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে। বুয়েটের বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তত্ত্বাবধানে ১০ মাস গবেষণা করে এটি তৈরি করা হয়েছে।
যন্ত্রটি অক্সিজেন সিলিন্ডার অথবা মেডিকেল অক্সিজেনের সঙ্গে সহজেই সংযুক্ত করে ব্যবহার করা যাবে। এটি বিদ্যুৎ ছাড়াই ১৫ লিটারের অক্সিজেনকে মেশিনের সাহায্যে বাইরে থেকে বাতাস টেনে ৬০ লিটার পর্যন্ত অক্সিজেন প্রবাহ করতে পারবে।
গবেষকরা বলছেন, যন্ত্রটি মূলত সরকারি প্রতিষ্ঠান আইইডিসির আইডিয়া প্রকল্পের অর্থায়নে সাধারণ কোভিড ওয়ার্ডের রোগীদের জন্যই তৈরি করা হয়েছে। এর ফলে রোগীদের আইসিইউতে পাঠানোর প্রয়োজন হ্রাস পাবে। যন্ত্রটি সহজেই প্রত্যন্ত অঞ্চলে সরবরাহ করা যাবে বলেও জানান তারা।
Advertisement
শুরুতে কয়েকটি ডিভাইস বানালেও বর্তমানে ৫০টি ডিভাইজ বানানোর কাজ শুরু করা হয়েছে। প্রতিটি ডিভাইস বানাতে দুই হাজার টাকা ব্যয় হয়ে থাকে। এটি তৈরি ও মেইনটেন্যান্সের জন্য হাফ ও ফুল টাইম ছয়জন চিকিৎসকসহ দুইজন শিক্ষক ও বুয়েটের বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে পাশ করা তিনজন শিক্ষার্থী রয়েছেন। এ দলের প্রধান হিসেবে ড. তৈফিক হাসান রয়েছেন।
তারা জানান, ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্যের মিডিসিনস অ্যান্ড হেলথকেয়ার প্রোডাক্টস রেগুলেটরি এজেন্সির নির্দেশিকা অনুযায়ী যন্ত্রটির পরীক্ষা চালিয়েছে বুয়েট। বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ বিএমআরসির অনুমোদন নিয়ে দুই ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শেষ হয়েছে। এখন তৃতীয় ধাপ শেষ করার চেষ্টা চলছে।
গবেষক দলের প্রধান ডা. তৌফিক হাসান বলেন, ‘হাসপাতালে আইডিইউ ও অক্সিজেনের ওপর চাপ কমাতে আমরা অক্সিজেট তৈরি করেছি। দ্বিতীয় ধাপে সফল হলে বর্তমানে এটি ঢাকা মেডিকেলে তৃতীয় ধাপে পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি মিনিটে ৪০ থেকে ১০০ শতাংশ অক্সিজেন প্রবাহ সরবরাহ করতে পারে। স্বাভাবিক অক্সিজেনের বোতলে ডিভাইসটি যুক্ত করতে হয়। এটি বাইরের বাতাস টেনে ১৫ লিটারের অক্সিজেন থেকে ৬০ লিটার পর্যন্ত তৈরি করে এর ঘনত্ব ৪০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত তৈরি করবে।’
তিনি বলেন, ‘সঠিকভাবে কার্যকর ডিভাইসটি ল্যাবে পরীক্ষা করেই সরকার অনুমোদন দিলে দেশজুড়ে এটি দ্রুত ব্যবহার করা যেত। বিদেশি গবেষকরা এ ধরণের পরামর্শ দিলেও আমাদের দেশে তেমন ব্যবস্থা না থাকায় ১০০ জনের ওপর পরীক্ষা করে তার ফলাফল সফল দেখাতে পারলে বাংলাদেশ মেডিকেল রিচার্জ কাউন্সিল (বিএমআরসি) অনুমোদন দেবে। এরপর এটি কারা বানাবে, কে এর মালিক হবে তা নিয়েও শঙ্কা রয়েছে।’
Advertisement
এই গবেষক বলেন, ‘চিকিৎসকরা যাতে ন্যূনতম প্রশিক্ষণ নিয়ে এই যন্ত্রটি ব্যবহার করতে পারেন, সেভাবেই তৈরি করা হয়েছে। এটি রোগীরা হাসপাতাল এবং বাড়ি উভয় জায়গাতেই ব্যবহার করতে পারবেন।’
বুয়েটের ভিসি প্রফেসর সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেন, ‘এই পদ্ধতি বাংলাদেশের চিকিৎসা খাতে সহায়ক হবে। এতে করে হাসপাতালে অক্সিজেন ও আইসিইউয়ের ওপর চাপ কমবে, রোগীর আর্থিক ব্যয়ও কমে যাবে। শুধু করোনা রোগীর জন্য নয়, হাসপাতালে এটি নিয়মিত ব্যবহার করা যাবে। এ ধরণের উদ্ভাবন কাজের জন্য বুয়েট কর্তৃপক্ষ সহযোগিতা করে থাকে।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে ডিভাইসটি তৃতীয় ধাপে পরীক্ষামূলকভাবে ঢাকা মেডিকেলে ব্যবহার করা হচ্ছে। পরীক্ষামূলকভাবে ভালো ফল পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। পরীক্ষায় সফল হলে বিএমআরসির অনুমোদনের পর ডিভাইসটি কারা বানাবে, কে মালিকানা পাবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এমএইচএম/ইএ/এমকেএইচ