ধর্ম

ইতেকাফে আল্লাহর নৈকট্য লাভ

আল্লাহ তাআলার অশেষ কৃপায় পবিত্র মাহে রমজান সুস্থতার সঙ্গে অতিবাহিত করার সৌভাগ্য পাচ্ছি, আলহামদুলিল্লাহ। রমজানকে বিদায় দিতে গিয়ে আমাদের প্রিয় নবি মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এমনটি হয়ে থাকতো যে, আধ্যাত্মিক বসন্ত নিজের চমক দেখিয়ে যখন বিদায় নেয়ার ক্ষণে পৌঁছে যেত তখন তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোমর বেঁধে নিতেন আর রমজানের কল্যাণরাজিতে নিজ ডালি ভরে নিতে কোনো ত্রুটি করতেন না।

Advertisement

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শেষ দশকের ইবাদত সম্পর্কে হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণিত একটি হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি- রমজানের শেষ দশকে প্রবেশ করলে তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিভাবে রাতগুলো ইবাদতের মাধ্যমে জীবিত করতেন এবং তার পরিবার পরিজনকেও জাগাতেন।’ (বুখারি)

শেষ দশকে বিশ্বনবির আমলশেষ দশকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইতেকাফে বসতেন এবং লাইলাতুল কদরের অন্বেষণে রাতগুলো ইবাদতের মাধ্যমে জাগিয়ে রাখতেন। আর ইতেকাফের অর্থই হলো কোনো স্থানে আবদ্ধ হয়ে যাওয়া বা অবস্থান করা। ইসলামি পরিভাষায় ‘ইবাদতের সংকল্প নিয়ে রোজা রেখে মসজিদে অবস্থান করার নামই ‘ইতেকাফ।’ (হিদায়া) রমজান মাসের শেষ দশকে ইতেকাফে বসা সুন্নত। হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত এক হাদিস থেকে জানা যায়, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মৃত্যুর পর তার পবিত্র স্ত্রীগণও এ সুন্নতের অনুসরণ করতেন।’ (মুসলিম)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজান মাসে ১০ দিনই ইতেকাফে বসতেন। উল্লেখ্য, তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনের শেষ রমজানে ২০ দিন ইতেকাফ করেছিলেন।

Advertisement

ইতেকাফের উপযুক্ত স্থানরমজানের শেষ দশকে জামে মসজিদ ইতেকাফ করতে হয়। ২০শে রমজান ফজরের নামাজের পর ইতিকাফ আরম্ভ করা উচিত। এ জন্য ১৯ রমজান বাদ মাগরিব ইতেকাফস্থলে উপস্থিত হওয়াই অনেকে ভাল মনে করে থাকেন।

ইতেকাফে বসে মুতাকিফরা (ইতেকাফকারীরা) একাগ্রচিত্তে ব্যক্তিগত দোয়া ছাড়াও সবার জন্য সময়োপযোগী দোয়া করেন। আর এ ইবাদতের জন্য জন্য উপযুক্ত স্থান হলো জামে মসজিদ। কুরআনুল কারিমে এসেছে-‘তোমরা মসজিদে ইতেকাফ কর।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৭)

ইতেকাফে সম্পর্কে হাদিসেও নির্দেশ এসেছে, হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জামে মসজিদ ছাড়া ইতেকাফ নেই।’ (আবু দাউদ)

ইমামগণ এ বিষয়ে ঐকমত্য সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, তবে বিভিন্ন অসুবিধার কারণে ইতেকাফ যে কোনো মসজিদে বা একান্ত অপারগতার কারণে মসজিদের বাইরেও ইতেকাফ হতে পারে। নারীরা ঘরে নামাজের জন্য একটি বিশেষ স্থান নির্ধারণ করে সেখানে ইতেকাফে বসা তাদের জন্য উত্তম।’ (হিদায়া)

Advertisement

ইতেকাফকারীরা দুনিয়াবি বিষয়দাদী থেকে সম্পূর্ণ পৃথক হয়ে আল্লাহর দিকে ঝুঁকে পড়বে। যেন তারা আল্লাহ তাআলা ইবাদত-বন্দেগিল মাধ্যমে নিজেদের মনোবাসনা পূর্ণ করেই ইতেকাফ থেকে উঠতে পারেন। এটা কঠিন সাধানার বিষয়।

তাই মুতাকিফকে এমন কোন কাজকর্ম বা আচার আচরণ করা উচিত নয়, যাতে তার ইবাদত-বন্দেগির এ সাধনায় ব্যঘাত ঘটে, প্রশ্নবিদ্ধ হয় কিংবা ক্রুটিপূর্ণ হয়ে যায়। যার ফলে ইতেকাফকারীর মনোবাসনাও অপূর্ণ থেকে যায়। আর একজন তাপস সাধনের ন্যায় একাগ্রতা ঐকান্তিকতা, শৃঙ্খলা ও পবিত্রতার লাগাম যেন হাত ছাড়া হতে না দেন।

রমজানের এই শেষ দশকের একটি রাতে এসে থাকে লাইলাতুল কদর। লাইলাতুল কদর বা সৌভাগ্যের রাত পাওয়া মুমিন রোজাদারের জন্য সবচেয়ে বড় পাওয়া। সারা জীবন কঠোর সাধনা, ত্যাগ ও তিতিক্ষার মাধ্যমে শয়তানী প্রবৃত্তিরূপে দৈত্যকে নিধন করার পর মুমিনের কাছে আসে সেই মুহূর্তটি। সেই পাওয়ার মুহূর্তটি, যা আল-কুরআনের সুরা কদরে ‘লাইলাতুল কদর’ নামে নাজিল হয়েছে। লাইলাতুল কদরের এ মুহূর্তটি হাজার মাসের চেয়েও উত্তম একটি মুহূর্ত।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে ক্ষমা করুন আর লাইলাতুল কদর পাওয়ার সৌভাগ্য দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এমকেএইচ