মেলিন্ডা গেটসের সঙ্গে দীর্ঘ ২৭ বছরের দাম্পত্য জীবনের ইতি টানতে যাচ্ছেন মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস। তাদের দুজনের রয়েছে বিপুল পরিমাণ যৌথ সম্পত্তি। এছাড়াও তারা বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানীয় দাতব্য সংস্থা ‘বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন’-এরও প্রতিষ্ঠাতা। তাই তাদের বিচ্ছেদের খবর ছিল এই সংস্থার জন্য হুমকিস্বরূপ। তবে, ফাউন্ডেশনের ওপর এই বিচ্ছেদের কোনো প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছেন উভয়েই।
Advertisement
পরে এক বিবৃতিতে ফাউন্ডেশনও জানায়, বিল ও মেলিন্ডা উভয়েই ফাউন্ডেশনের কো–চেয়ারম্যান এবং ট্রাস্টি হিসেবে থাকবেন। অর্থাৎ বৈবাহিক বিচ্ছেদ হলেও আপাতত ফাউন্ডেশনে তারা এক থাকছেন। ফাউন্ডেশনের কৌশলগত বিষয়ের অনুমোদন, সব আইনি ইস্যু এবং সংস্থার সামগ্রিক দিকনির্দেশনা নির্ধারণে একত্রে কাজ করে যাবেন বিল গেটস ও মেলিন্ডা।
তবে তাদের বিপুল পরিমাণ অন্যান্য সম্পত্তির হিসাব–নিকাশ হয়তো এতটা সহজ হবে না।
বিল-মেলিন্ডার যৌথ সম্পদের পরিমাণ
Advertisement
বিল-মেলিন্ডার পক্ষ থেকে ফাউন্ডেশনের ভবিষ্যতের ব্যাপারে আশ্বস্ত করা হলেও তাদের যৌথ মালিকানাধীন সম্পত্তি কীভাবে ভাগ হবে বা বিচ্ছেদের চুক্তি কী হচ্ছে, সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষের কাছ থেকেই কিছু জানা যায়নি। সংশ্লিষ্ট আদালতের কাছে বৈবাহিক সম্পর্ক মিটিয়ে ফেলার আবেদনের পাশাপাশি বিচ্ছেদ চুক্তি অনুযায়ী ব্যবসায়িক স্বার্থ, দায়বদ্ধতা এবং যৌথ মালিকানাধীন সম্পত্তিও ভাগ করার জন্য আবেদন জানিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী বিল গেটস নিজ দেশ যুক্তরাষ্ট্রে বেসরকারিভাবে সবচেয়ে বেশি কৃষিজমির মালিক। তার মালিকানায় রয়েছে ২ লাখ ৪২ হাজার একর কৃষিজমি। তবে দেশটির ১৮টি অঙ্গরাজ্যে ছড়িয়ে থাকা এসব কৃষিজমিতে যৌথ মালিকানা রয়েছে মেলিন্ডারও। এর মধ্যে লুইজিয়ানায় ৬৯ হাজার ৭১ একর, আরকানসাসে ৪৭ হাজার ৯২৭ একর ও নেব্রাস্কায় ২০ হাজার ৫৮৮ একর কৃষিজমি রয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে, তাদের বিচ্ছেদের পর এখন এই সম্পত্তি ভাগের বিষয়টি জটিল আকার ধারণ করবে। এছাড়া গেটস পরিবারের সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার। তাই বিল গেটসের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের আপস-রফা হিসেবে মেলিন্ডা কী পাবেন, সে বিষয়ে চলছে জল্পনা।
বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন
Advertisement
প্রোডাক্ট ম্যানেজার হিসেবে ১৯৮৭ সালে মাইক্রোসফটে যোগ দিয়েছিলেন মেলিন্ডা। তখন থেকে দুজনের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বন্ধুত্ব গড়ায় প্রেম পর্যন্ত। ১৯৯৪ সালে বিয়ে করেন গেটস ও মেলিন্ডা। বিয়ের ছয় বছর পর তারা যৌথভাবে গড়ে তোলেন দাতব্য প্রতিষ্ঠান ‘বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন’।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই ফাউন্ডেশনের রয়েছে নানামুখী কর্মকাণ্ড। বিশ্বজুড়ে সংক্রামক ব্যাধির বিরুদ্ধে লড়াই ও শিশুদের টিকাদানে উৎসাহিত করতে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৪ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে এ ফাউন্ডেশন। ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, সচেতন, শিক্ষিত ও স্বাস্থ্যবান একটি বিশ্ব গড়ে তোলা এ সংস্থার প্রধান উদ্দেশ্য। স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে প্রতিবছর প্রায় পাঁচ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন।
২০০৮ সালে পোলিও প্রতিরোধের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে ৬৮ কোটি ২৩ লাখ ডলার অনুদান দেন বিল গেটস। এটি ছিল তখন পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পাওয়া সর্বোচ্চ পরিমাণ অনুদান। চলমান করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে ১৫ কোটি ডলারের আর্থিক সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে এই ফাউন্ডেশন। প্রয়োজনে তা ২৫ কোটি ডলারের উন্নীত করারও আশ্বাস দিয়েছেন বিল গেটস।
এই ফাউন্ডেশনের অন্যতম দাতা আরেক ধনকুবের ওয়ারেন বাফেট। গত বছর তার প্রতিষ্ঠান বার্কশায়ার হ্যাথওয়ের ২০০ কোটি ডলারের স্টক অনুদান দিয়েছেন তিনি। ১৯৯৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এই ফাউন্ডেশনে ৩ হাজার ৬০০ কোটি ডলার দিয়েছেন গেটস ও মেলিন্ডা দম্পতি। ২০১৯ সালের শেষ পর্যন্ত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই ফাউন্ডেশনের আকার ৪ হাজার ৩৩০ কোটি ডলার। এই আকার ৫ হাজার কোটি ডলারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য বিল গেটস ও মেলিন্ডার।
এর আগে ২০১৯ সালে ২৫ বছরের দাম্পত্য জীবনের ইতি টানেন আরেক মার্কিন ধনকুবের ই–কমার্স জায়ান্ট আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস। সে সময় বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিবাহবিচ্ছেদের শর্তের ব্যাপারে একমত হন ম্যাকেঞ্জি বেজোস। জেফ বেজোসের সঙ্গে ডিভোর্সের পর তিনি পান ৩ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের সম্পদ। গেটস দম্পতির বিচ্ছেদ চুক্তি কি এই পরিমাণকেও ছাড়িয়ে যাবে? তা নিয়ে এখনও কিছু খোলাসা করেননি তারা।
এসএস/জিকেএস