দেশজুড়ে

প্রতিশ্রুতি আর আশ্বাসে জমে উঠেছে সাতক্ষীরা পৌর নির্বাচন

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতি আর আশ্বাসে জমে উঠেছে সাতক্ষীরা পৌরসভা নির্বাচন। মেয়র পদে লড়তে মাঠে নেমে প্রচার-প্রচারণা আর সভা-সমাবেশে ব্যস্ত সময় পার করছেন পাঁচ প্রার্থী। আর তিন প্রার্থী নামমাত্র নিজেকে মেয়র প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছেন।বর্তমান মেয়র আলহাজ এম এ জলিল (বিএনপি) আগামী দিনে প্রার্থী হচ্ছেন না বলে জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বয়সের ভারে তার পক্ষে আর নির্বাচন করা সম্ভব নয়। যার কারণে তিনি পৌর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন।এদিকে, কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আলহাজ শেখ আজহার হোসেন, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আবু সায়ীদ ও সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন, চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি নাসিম ফারুক খান মিঠু, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক তাসকিন আহম্মেদ চিশতি। যদিও দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগ এখনও কোনো প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি কাউকেই। তারপরও ঘোষণা দিয়ে পোস্টারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছেন জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি সাইফুল করিম সাবু। তবে সাবেক মেয়র শেখ আশরাফুল হক নির্বাচন করবেন বলে শোনা গেলেও নির্বাচনী কার্যক্রম খুব একটা চোখে পড়ার মতো নয়। অন্যদিকে, ৯টি ওয়ার্ডে একাধিক কাউন্সিলর প্রার্থীরাও মাঠ চষে বেড়াতে দেখা গেছে।অন্যদিকে, জাতীয় পার্টির একক প্রার্থী ও বিএনপি সমর্থিত দুই প্রার্থী থাকলেও একজন সতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রচার-প্রচারণা চালাতে দেখা গেছে। জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শেখ আজহার হোসেন ছাত্রজীবনে ছাত্র ইউনিয়ন পরবর্তীতে বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন, ভাসানী ন্যাপ, ইউনাইটেড পিপলস পার্টির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৮৪ সাল থেকে তিনি জাতীয় পার্টির রাজনীতি শুরু করেন। ২০১২ সাল থেকে জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। একজন ব্যবসায়ী নেতা হিসেবেও সুপরিচিত তিনি। জেলা চেম্বার অব কমার্সের চারবার নির্বাচিত হয়ে সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন তিনি। বিগত পৌরসভার নির্বাচনেও তিনি মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এ বারের নির্বাচনেও প্রার্থী হয়ে সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগ করে ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় উন্নীত করে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করবেন বলে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন।সাতক্ষীরা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আবু সায়ীদ শিক্ষাজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্য্য সেন হলের ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। দীর্ঘ সময় ঢাকায় অবস্থানের পর ২০০৮ সালে সাতক্ষীরায় ফিরে নতুন করে আওয়ামী লীগের রাজনীতি শুরু করেন। ২০১৪ সালের ২১ ডিসেম্বর সাতক্ষীরা পৌর আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হন তিনি। রেড ক্রিসেন্টের সাবেক সহ-সভাপতি দায়িত্বও পালন করেন তিনি। দুর্নীতিমুক্ত মডেল পৌরসভা গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে গণসংযোগ, সভা-সমাবেশ ও প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন আওয়ামী লীগের এ নেতা।সাতক্ষীরা পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন ছাত্রজীবন থেকে ছাত্রলীগ পরে যুবলীগ পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন। ২০১৪ সালের ২১ ডিসেম্বর সাতক্ষীরা পৌর আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের মাধ্যমে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। সাতক্ষীরা পৌরসভাকে একটি মডেল পৌরসভা গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে গণসংযোগ, সভা-সমাবেশ ও প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি।সাতক্ষীরা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি নাসিম ফারুক খান মিঠু এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় তৎকালীন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম ফারুকের হাত ধরে রাজনীতিতে আসেন। ১৯৯১ সালে জেলা যুবদলের সহ-সম্পাদক দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০০৪ সালে জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। ২০১৩ সালে কমিটি থেকে বাদ পড়ার পর যুবদলের রাজনীতি থেকে সরে আসেন তিনি। এরপর ২০১৩ সালে জেলা যুবদলের কাউন্সিলকে ঘিরে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে দুই গ্রুপের সংঘর্ষের পর মিঠু খানকে রাজনৈতিক কোনো কর্মসূচিতে দেখা যায়নি। পরবর্তীতে সাতক্ষীরা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি পদে দুইবার জয়ী হন। বর্তমানে তিনি মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। নাগরিক সেবা নিশ্চিতকল্পে বন্ধ পরিকর প্রতিশ্রুতি দিয়ে সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগ করেছেন তিনি। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রচার-প্রচারণা চলাচ্ছেন। জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক তাসকিন আহম্মেদ চিশতি ২০১৩ সালে জেলা যুবদলের কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে জেলা মৎস্যজীবী দলের সাধারণ সম্পাদক আমানউল্লাহ আমন নিহত হওয়ার পর কমিটিকে বিলুপ্ত করে কেন্দ্রীয় কমিটি। এরপর কেন্দ্র থেকে ঘোষিত সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির পকেট কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পান তিনি। কিছুদিন আগে তিনি নিজেকে পৌরসভার মেয়র প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে পৌরবাসীর নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠাকরণ, সমৃদ্ধশালী ও ধনী-গরীব বৈষম্যহীন পৌরসভা গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে গণসংযোগ করছেন।শেখ আশরাফুল হক জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি। এক সময়ে তিনি পৌরসভার মেয়র ছিলেন। খুব একটা তাকে প্রচার-প্রচারণা বা গণসংযোগ করতে দেখা যায়নি। জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি সাইফুল করিম সাবু ছাত্রজীবনে ছাত্র ইউনিয়ন পরবর্তীতে ভাসানী ন্যাপের সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৯৬ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরা জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতির দায়িত্ব পান। গত সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সাতক্ষীরা সদর আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তিনি। জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পোস্টার লাগিয়ে নিজেকে মেয়র প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করলেও নির্বাচনী সভা-সমাবেশে খুব একটা দেখা যায় না সাবেক ছাত্র নেতা ফাহিমুল হক কিসলু বর্তমানে সাতক্ষীরা জজ কোর্টের সহকারী পিপির দায়িত্ব পালন করছেন। জেলা ওয়ার্কাস পার্টির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তিনি। তবে খুব একটা প্রচারণা চোখে পড়েনি। জেলা নির্বাচন কমিশনার আবুল হোসেন জাগো নিউজকে জানান, সাতক্ষীরা সদর পৌর নির্বাচনের ভোটার সংখ্যা ৭৯ হাজার ৬৩৪ জন। এর মধ্যে ৩৯ হাজার ১১০জন পুরুষ ও ৪০ হাজার ৫২৪ জন নারী ভোটার রয়েছে। ৩০ ডিসেম্বর ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের জন্য আমাদের পক্ষ থেকে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।এআরএ/পিআর

Advertisement