জাতীয়

গণপরিবহন ছাড়া সবকিছু স্বাভাবিক

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ দু’দফা শেষে তৃতীয় দফায় চলছে। তৃতীয় দফার বিধিনিষেধ চলবে আগামী ৫ মে পর্যন্ত। বিধিনিষেধের শুরুর দিকে জনসমাগম ও গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণে পুলিশের যে সরব ভূমিকা ছিল, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা নিষ্প্রভ হয়ে গেছে। অন্যদিকে তৃতীয় দফায় লকডাউন শুরু থেকেই রাজধানীতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। দোকানপাট ও শপিংমল খোলার সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই সড়কে যানবাহনের পাশাপাশি বেড়েছে মানুষের উপস্থিতি। কঠোর বিধিনিষেধের দু’দিন বাকি থাকলেও রাজধানীতে যেন স্বাভাবিক হতে চলেছে সবকিছুই।

Advertisement

এ কারণে রাজধানীর মার্কেট-কেন্দ্রিক গত কয়েকদিনে সড়কগুলোতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোনো গণপরিবহন না চললেও ঈদকে সামনে রেখে গণপরিবহন চালুর কথা সরকার ভাবছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

এদিকে চেকপোস্টগুলোতে শুরুর দিকে পুলিশের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো থাকলেও এখন তেমনটি দেখা যাচ্ছে না। ‘মুভমেন্ট পাস’ নিয়ে বিধিনিষেধের শুরুতে যে কড়াকড়ি ছিল তা এখন আলোচনা থেকে বহু দূরে। এখন ‘মুভমেন্ট পাস’ চেক করতে দেখা যাচ্ছে না পুলিশকে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এখনও চলছে ‘মুভমেন্ট পাস’ চেকিং। কিন্তু পিক-আওয়ারে সব গাড়িকে একসঙ্গে ধরে চেক করা সম্ভব হচ্ছে না। রোজার সময় মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে যানজট ছাড়া যাতায়াত করতে পারে সে লক্ষ্যে সড়কে কাজ করছে পুলিশ।

সোমবার (৩ মে) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে।

Advertisement

রাজধানীর কল্যাণপুর, শ্যামলী, আসাদগেট, মোহাম্মদপুর, ঢাকা উদ্যান, ধানমন্ডি, বাংলামোটর, শাহবাগ, সায়েন্স ল্যাব, কাকরাইল, মিরপুর, গাবতলী, পল্টন, মতিঝিল, গুলিস্তান, গুলশান, বনানী, গুলশান ও মহাখালী ঘুরে দেখা যায়, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, রিকশা ও প্রাইভেটকারের অবাধ চলাচল। এছাড়াও ফুটপাত ও অলি-গলিতে মানুষের উপস্থিতিও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে।

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন শাওন আহমেদ। তিনি প্রতিদিন মোহাম্মদপুর থেকে মতিঝিলে যাতায়াত করেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ কেমন লকডাউন? আমাদের মতো মধ্যবিত্তরা শেষ হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। মোহাম্মদপুর থেকে মতিঝিল অফিসে যাতায়াত করতে রিকশায় লাগে প্রায় আড়াইশ টাকা। এভাবে টানা কতদিন দেয়া সম্ভব? অন্ততপক্ষে বাস চললে আমাদের খরচটা কমত।’

শান্তা আনোয়ার বসুন্ধরা সিটি শপিংমলে যাওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন শ্যামলী ফুটওভার ব্রিজের নিচে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রাত ত্রিশ মিনিট হলো দাঁড়িয়ে রয়েছি। সিএনজি পেলেও শ্যামলী থেকে বসুন্ধরা সিটির ভাড়া চাচ্ছে সাড়ে তিনশ টাকা। যেখানে ভাড়া আসে দেড়শ থেকে একশ আশি টাকার মতো। দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে গিয়ে আবার আসা, সব মিলিয়ে মার্কেটে যেতেই তো প্রায় হাজার টাকা খরচ।

ফার্মগেট মোড়ে রাইড শেয়ারিং মোটরসাইকেলের জন্য অপেক্ষা করছিলেন রায়হানুল ইসলাম। তিনি যাবেন মুগদা মেডিকেল হাসপাতালে। তিনি বলেন, বাবা হাসপাতালে ভর্তি। তার জন্য খাবার ও কিছু ওষুধপত্র নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছি। উবার-পাঠাও রিকোয়েস্ট দিলেই রিকোয়েস্ট বাতিল করে দেয়। রাইড শেয়ারিংয়ের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ভাড়ায় চালিত বাইকে যাচ্ছি তিনশ টাকা ভাড়া দিয়ে।

Advertisement

গতকাল রোববার মহাখালী বাস টার্মিনালে সমাবেশে ফেডারেশনের সহ-সভাপতি ছাদিকুর রহমান হীরু বলেন, শ্রমিক কর্মচারী ও মালিকদের জীবনের সঙ্গে জীবিকার কথাও আমাদের ভাবতে হবে। শুধু গণপরিবহন ছাড়া আর সবই চলছে। আমরা চাই সরকার পরিবহন শ্রমিকদের কথা চিন্তা করে অতি দ্রুত গণপরিবহন চালু করুক। অন্যথায় ৪ তারিখে জেলায় জেলায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি আমাদের রয়েছে।

এদিকে আগামী ৫ মে লকডাউনের মেয়াদ শেষে ঈদের আগে কর্মদিবস পাওয়া যাবে ৬ (বৃহস্পতিবার), ৯ (রোববার) ও ১১ মে (মঙ্গলবার)। এর মধ্যে ৭ ও ৮ মে হচ্ছে সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার। এরপর ১০ মে (সোমবার) হচ্ছে শবে কদরের ছুটি।

আগামী ১২ মে (বুধবার) থেকে শুরু হচ্ছে ঈদের ছুটি। রমজান মাস যদি ২৯ দিনে শেষ হয় তবে ঈদুল ফিতর হবে ১৩ মে। এক্ষেত্রে ১৩ ও ১৪ মে’ও (বৃহস্পতি ও শুক্রবার) ঈদের ছুটি থাকবে। তবে রমজান মাসের ৩০ দিন পূর্ণ হলে ঈদের ছুটি আরও একদিন বাড়বে, সেক্ষেত্রে ১৫ মে’ও (শনিবার) ছুটি থাকবে।

সব মিলিয়ে ঈদের আগে কর্মদিবস পাওয়া যাবে তিনটি। সেক্ষেত্রে লকডাউনের বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত কী হবে- জানতে চাইলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, এখনও এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি। পরিস্থিতি বুঝে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এ বিষয়ের ওপর আমাদের চিন্তা-ভাবনা চলছে যে, আমরা কী করব।

তিনি বলেন, ৫ তারিখের পর বিধিনিষেধের কী হবে সেটা এখনও চিন্তা-ভাবনার পর্যায়ে রয়েছে। আমরা ৫ তারিখের আগেই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেব।

টিটি/এআরএ/এমকেএইচ