মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানের তালতলা বাজার সংলগ্ন ইছামতি নদীতে ভাসমান নৌকায় জাহানারা বেগমের বসবাস। বিগত ২৫ বছর ধরে আশপাশের গ্রামের বাড়ি বাড়ি ঘুরে প্লেট-বাটি বিক্রি করেন। যা আয় হয় তা দিয়ে কোনোমতে সংসার চালাতে পারতেন। করোনার কারণে এখন আর আগের মত ক্রেতারা বাড়িতে আর ঢুকতে দেন না। লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় দূর-দূরান্তে যাওয়াও সম্ভব হচ্ছে না। ফলে আয় নেই তার পরিবারে।
Advertisement
রোববার (২ মে) দুপুরে বেদে বসতিতে কথা হয় জাহানারা বেগমের সঙ্গে। জাগো নিউজকে তিনি জানান, লকডাউনে কোথাও যাইতে পারি না-আইতে পারিনা। ২০-২৫ বছর ধরে গ্রামে গ্রামে গিয়ে প্লেট-বাটি বিক্রি করছি, চলতে পারছি। অহন আমাগোতে কষ্ট খাইতে-লইতে। গরীবের দিকে আর কেউ চায়ও না বাবা।
শুধু জাহানারা নয় এ বসতির অর্ধশতাধিক পরিবার আছে যারা ভ্রাম্যমাণ প্লেট-বাটি ও চুড়ি-ফিতা বিক্রি করেন। সবারই একই অবস্থা। করোনা আর লকডাউনে এসব নিম্ন আয়ের বিক্রেতারা দিশেহারা। গ্রামে গ্রামে যাদের ‘রাখবেন নি প্লেট-বাটি-চুড়ি-ফিতা’ ডাক শুনা যেতো তাদের প্রত্যেকেরই চোখে মুখে এখন অসহায়ত্বের ছাপ।
শিউলি বেগম নামের আরেক নারী জানান, আগে একেক দিনে ২-৩ হাজার টাকাও বিক্রি করতে পারতাম। প্রতি হাজারে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা লাভ থাকতো। এই টাকা দিয়ে সংসার চালানো যেতো। এখনতো বের হতেও পারি না। কাছে কোথাও গেলে সারাদিন ঘুরে হাজার টাকাও বিক্রি করতে পারিনা। এই বিক্রিতে লাভ হয়না। খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছি।
Advertisement
পিংকি বেগম বলেন, করোনার জন্য আমরা আগের চেয়ে অনেক কষ্টে আছি। আগে যেমন বেচা-কেনা হইছে এখন আর হয়না। যারা প্লেট-বাটি বিক্রি করে তাদের অনেকই সমস্যা। বাড়িতে ঢুকতে দেয় না করোনার জন্য।
ভ্রাম্যমাণ চুড়ি-ফিতা বিক্রেতা মো. হাকিম জানান, এই বসতির মেয়ে-ছেলেরা দুইটা কাজই করি। কেউ মাছ ধরে আর কেউ প্লেট-বাটি, চুড়ি-ফিতা বিক্রি করে। নদীতে আগের মত মাছ নাই। আর এখনতো করোনার আর লকডাউনের কারণে প্লেট-বাটি নিয়া কোথাও যেতেও পারিনা। ঢাকা থেকে মালপত্র আনতে পারিনা। খুবই অসহায় অবস্থায় আছি। ৪৫ বছর ধরে ব্যবসা করি, এমন দিন কখনও দেখি নাই।
ষাটোর্ধ বিল্লাল মিয়া বলেন, আমাগো প্রত্যেক নৌকার একজন-দুজন করে সিরামিকের জিনিসপত্র, মেলামাইন ও লেইস-ফিতা বিক্রি করে। গাড়ি চলে না ফলে ব্যবসা একবারেই নেই। তারা কোনো রকমে এখন দিন পার হচ্ছে। মাঝে মাঝে কিছু সরকারি সহায়তা আসে, তয় এই দিয়ে চলে না বাপু। সরকার আমাদের যদি একটু ভালো ভাবে দেখতো তাইলে কষ্টে আর দিন পার হইতো না।
এ বিষয়ে সিরাজদিখান উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ ফয়জুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, বেদে পরিবারের বিষয়টি আমরা অবহিত আছি। ইতোমধ্যে সেখানে ৩৮ পরিবারকে সরকারি সহায়তা হিসাবে ভিজিএফ ভাতা ৫শ’ করে টাকা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি তাদের মাঝে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাবার বিতরণ করা হবে।
Advertisement
আরাফাত রায়হান সাকিব/আরএইচ/জিকেএস