পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু নন্দীগ্রামের ভোট নিয়ে চরম নাটকীয়তা তৈরি হয়েছে। ১৭ রাউন্ড ভোট গণনার পর খবর আসে, সেখানে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা ব্যানার্জি জয়ী হয়েছেন। কিন্তু সন্ধ্যা গড়াতেই মমতার জয় নিয়ে বিভ্রান্তি শুরু হয়। সার্ভারে সমস্যার কারণে সঠিকভাবে কিছু জানাও যাচ্ছে না। তারপরই খবর আসে, নন্দীগ্রামে ১ হাজার ৬২২ ভোটে বিজেপির প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী জয়ী হয়েছেন।
Advertisement
কলকাতাভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফলাফলের বিষয়ে শুভেন্দু জানিয়েছেন, ‘১ হাজার ৬২২ ভোটে আমি জিতেছি।’
যদিও পোস্টাল ব্যালট ছাড়া মমতার সঙ্গে শুভেন্দুর জয়ের ব্যবধান ৯ হাজার ৭৮৭ ভোটের। তারপরও সংবাদ সম্মেলনে নন্দীগ্রামে হেরে গেছেন জানিয়ে মমতা বলেছেন, ‘নন্দীগ্রাম যা রায় দেবে, মাথা পেতে নেব।’
এদিকে নিজে হারলেও দলের জয়ের জন্য বাংলার মানুষকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘বাংলার জয়ের জন্য সকলকে অভিনন্দন। বাংলার জয়, মানুষের জয়।’
Advertisement
সেই সঙ্গে ফলাফল নিয়ে এই বিভ্রান্তির বিরুদ্ধে আদালতে যাবেন বলে জানিয়েছেন মমতা। তিনি অভিযোগ করে বলেছেন, ‘আমার কাছে অভিযোগ রয়েছে, রায় ঘোষণার পর কারচুপি হয়েছে।’
এর আগে সংবাদ সংস্থা এএনআই জানিয়েছিল, ১ হাজার ২০২ ভোটে নন্দীগ্রামে মমতা জয়ী হয়েছেন। সার্ভারের ত্রুটির কারণে দুপুরে এমনিতেই ৪০ মিনিট ভোট গণনা বন্ধ ছিল। তারপর মমতার জয়ের খবর সামনে আসার পরও কোন তথ্য প্রকাশ করতে পারেনি কমিশন। এর পরই জানা যায়, বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু জয়ী হয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত এ নিয়ে কোনো বিবৃতি প্রকাশ করেনি নির্বাচন কমিশন।
হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে সারাদিন ধরে অনিশ্চয়তা ছিল, জয়টা তৃণমূল ছেড়ে যাওয়া শুভেন্দু পাবেন নাকি দলনেত্রী মমতা। একবার শুভেন্দু এগিয়ে যাচ্ছিলেন, পরক্ষণই আবার খবর আসছিল মমতার এগিয়ে যাচ্ছেন।
গত বছর ডিসেম্বরের মাঝামাঝি তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দেন শুভেন্দু। তারপর তিনি লাগাতার মমতা ও তার ভাইয়ের ছেলে অভিষেক ব্যানার্জির বিরুদ্ধে আক্রমণ চালিয়ে যান। সেই তুলনায় তৃণমূল অনেকটাই স্তিমিত ছিল। তবে অধিকারীদের সঙ্গে সম্পর্কের শেষ পেরেক পোতেন মমতাই। নন্দীগ্রামে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করেন, সেখান থেকেই ভোটে লড়বেন তিনি।
Advertisement
তারপরই নন্দীগ্রামের লড়াইয়ে রাজনীতির যাবতীয় সমীকরণ উল্টে যায়। ১০ মাস আনুষ্ঠানিক ভাবে নন্দীগ্রামের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দেন মমতা। ওই দিনই তিনি নন্দীগ্রামে আক্রান্ত হন। আঘাত পান পায়ে। তা নিয়ে তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে ঝগড়া চরমে ওঠে।
এর দুই দিন পর, ১২ মার্চ নন্দীগ্রাম থেকে বিজেপির হয়ে মনোনয়ন জমা দেন শুভেন্দু। তারপর থেকে বিজেপির হেভিওয়েট নেতারা শুভেন্দুর হয়ে সেখানে সভা করে এসেছেন। সেই তুলনায় নন্দীগ্রামে তৃণমূলের সভা ছিল মমতাসর্বস্বই। তবে সেখানে জেতা নিয়ে শুরু থেকেই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন মমতা। এমনকি ১ এপ্রিল নন্দীগ্রামে যে দিন ভোটগ্রহণ, সেদিন সেখানে থাকলেও, শুভেন্দুর মতো সকাল থেকে তাকে বুথে বুথে ঘুরতে দেখা যায়নি। শুধু দুপুরে বয়াল এলাকায় ঝামেলার খবর পেয়ে প্রথম বাইরে বের হন মমতা। গ্রামবাসীরা তাকে জানান, বিজেপি ভোট লুট করছে।
এমএসএইচ/জেআইএম