আজ রমিজ সাহেবের সাথে ইফতার করতে তার বাসায় এসেছি। প্রচলিত দেশি ইফতার নিয়ে এসেছি তাঁদের জন্য।
Advertisement
রমিজ সাহেব কিছুদিন আগে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে বাসায় এসেছেন।বার্ধক্যজনিত অনেকগুলো রোদে ভুগছেন তিনি।এর মাঝে কোভিডেও ভুগেছেন।
হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলাম তাকে। তিনি আমাকে চিনতে পারেননি।তবে ভাণ করলেন চিনতে পেরেছেন। আমি ও ভাণ করলাম আমি সেটা বুঝতে পারছি না। পুরোটা সময় তার মুখে হাসি।
নার্স রুমে ঢুকতেই একটানে ডাক্তার আর নার্সদের সুনাম করা শুরু করলেন তিনি। তারপর নার্সের কাছে কিছু ব্লু বেরি চাইলেন তিনি।নার্সটা হেসে কিছু ব্লু বেরি আনতে গেলো।
Advertisement
রমিজ সাহেবের বয়সি মানুষগুলোর যখন স্মৃতিভ্রংশ বা ডিমেনশিয়া হয় তখন তাদের মাঝে দুধরনের পরিবর্তন দেখি।
কেউ কেউ খুব খিটমিটে বিরক্তিকর হয়ে যান। আবার কেউ কেউ খুব সুখকর শান্ত শিষ্ট হয়ে যান। রমিজ সাহেব খুর শান্ত শিষ্ট হয়ে গেছেন।
রমিজ সাহেব একজন প্রকৌশলী ছিলেন। জন্ম পাকিস্তানের লাহোরে। জীবনের অনেক সময় কাটিয়েছেন ঢাকায়। মোহাম্মদপুরে।বাংলা বলেন অবিরত। তার স্ত্রী রাবেয়া বেগমের বাড়ি ছিল বিক্রমপুরে।
আমাদের আঠারো বছরের পরিচয়। আমাদের সাথে একটা চমৎকার হৃদ্যতা হয়ে গিয়েছে।
Advertisement
রমিজ সাহেবের বাড়ির চারদিকে সাজানো বাগানের বড় বেসামাল অবস্থা।রমিজ সাহেব অনেক সময় কাটাতেন সেখানে। তার অনুপস্থিতি সেখানে বড় প্রকট।
সব সময় ক্লিন শেভ করা মানুষটির মুখ ভর্তি দাঁড়ি। জামার এখানে সেখানে ভাঁজ।
কড়া ইস্ত্রী করা কাপড় ছাড়া তাকে দেখেছি বলে মনে পড়ে না।
আমাদের দেশি ইফতার খেয়ে অনর্গল বাংলাদেশের কথা বলা শুরু করলেন। বেশি খেতে পারেন না বলে দু:খ করলেন।
তারপর তার একমাত্র ছেলের গল্প শুরু করলেন। সে হার্ভাডের অধ্যাপক ছিল। অল্প বয়সে ব্রেন টিউমারে মারা যায় সে।
তারপর হুইল চেয়ারের দিকে তাকিয়ে চুপ করে রইলেন।
চোখ দিয়ে তার পানি পড়া শুরু করলো।আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, বাবা, তোমাকে তো চিনতে পারলাম না।
এইচআর/এএসএম