দেশজুড়ে

ভেজাল মধু সরবরাহের অভিযোগে ২ ভাইকে বেঁধে নির্যাতন

পাবনার ঈশ্বরদীতে ভেজাল মধু সরবরাহের অপবাদে মাথার চুল কেটে বৈদ্যুতিক খুঁটিতে বেঁধে দুই ভাইকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান ‘ভিলেজ ফ্রেশ ফুড অ্যান্ড এগ্রো কোম্পানি’র মালিকদের একজন জিসান হোসেনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

Advertisement

শনিবার (১ মে) দুপুরে আদালতের মাধ্যমে তাকে জেলা কারাগারে পাঠান হয়েছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার (২৯ এপ্রিল) ঈশ্বরদী উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের আওতাপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে । মধু কারিগরদের বেঁধে রাখার এ ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি শুক্রবার (৩০ এপ্রিল) জানাজানি হয়।

মধু বিক্রেতা এই দুই ভাই হলেন উপজেলার দাশুড়িয়া ইউনিয়নের দাঁদপুর গ্রামের আলম সরদারের ছেলে আল-আমিন (২৪) ও তার ছোট ভাই আলাল সরদার (১৮)।

Advertisement

‘ফ্রেশ ফুড অ্যান্ড এগ্রো কোম্পানি’র মালিকদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা খাঁটি জিনিস ভোক্তাদের সরবরাহ করে থাকেন। আল-আমিন এবং আলাল সরদার নামের দুই মধু বিক্রেতা খাঁটি মধু সরবরাহ করবেন বলে চুক্তিবদ্ধ ছিলেন। তারা প্রায় ৩০০ কেজি মধু সরবরাহ করেছেন। এরমধ্যে ভেজালের কারণে ১২০ কেজি মধু এখনো অবিক্রীত রয়েছে।

নির্যাতনের শিকার ওই দুই যুবকের বাবা আলম সরদার জানান, তার ছেলেরা ভেজাল মধু সরবরাহ করেনি। কিন্তু এরপরও তার দুই ছেলেকে বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রেখে মারধর করা হয়। পরে তাদের চুল কেটে দেয়া হয়। এ ঘটনায় তিনি থানায় মামলা করেন।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত জিসান হোসেন জানান, চুক্তি ছিল তারা খাঁটি মধু সরবরাহ করবেন। কিন্তু চুক্তির শর্ত ভেঙে সম্প্রতি দুই ভাই ৩০০ কেজি ভেজাল মধু সরবরাহ করেছেন। গ্রাহকেরা এই মধু নিয়ে অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগ পাওয়ার পর থেকে ১২০ কেজি মধু আর বিক্রি করা হয়নি। ফলে তারা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আর্থিক ক্ষতির শিকার হন। এছাড়া মধু কিনে প্রতারিত হওয়া এলাকার লোকজনই অনেকে মৌয়ালদের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন।

মৌয়ালদের কিছু সময় বেঁধে রাখলেও মারধর করা হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।

Advertisement

প্রতিষ্ঠানের অন্যতম পার্টনার রাসেল বিশ্বাস জানান জানান, ওই দুই মধুর কারিগর ভেজাল মধু দিয়ে তাদের এবং ভোক্তাদের প্রতারিত করেছেন। তার ধারণা, দুই তরুণ নিজেরা ভেজাল দ্রব্য দিয়ে ঘরে বসে মধু তৈরি করেছেন। এতে তাদের প্রতিষ্ঠানের সুনামহানি হয়েছে এবং তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

রাসেল আরও জানান, খাঁটি জিনিস সরবরাহের জন্যই তারা প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছেন। এক্ষেত্রে মৌয়ালদের অসততার কারণে তাদের প্রতিষ্ঠানটির সুনামহানি হয়েছে। ভেজাল মধুর ব্যাপারে তাদের জানানো হলেও তারা টালবাহানা করে আসছিল। বার বার অভিযোগ দেয়ার পরও তারা দীর্ঘদিন দোকানে আসেননি। এসব কারণে মালিকদের একজন ক্ষুব্ধ হয়ে তাৎক্ষণিক এমনটি করেছেন। তবে তিনি দোকানে উপস্থিত থাকলে এমনটি হতো না।

এদিকে ঈশ্বরদীতে বেশ কিছু লোকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখন সরিষা ফুলও নেই। আবার লিচুর ফুলের মৌসুমও শেষ। তাছাড়া এবার ঈশ্বরদীতে লিচু গাছে অন্যবারের তুলনায় এক পঞ্চমাংশ গাছে ফুল ধরেছিল। তাই দুজন মৌয়ালের পক্ষে এত খাঁটি মধু সরবরাহ করা অনেকটা অসম্ভব।

স্থানীয় বাসিন্দা আওতাপাড়ার ডিলু মল্লিক জানান, প্রায় ৮ মণ খাঁটি মধু সংগ্রহ করা কম কথা নয়। তারা হয়তো সেটি পারেনি, এ জন্য নিজেরাই মধু তৈরি করেছে।

তিনি আরও জানান, এ দোকান থেকে তিনিও সরিষার খাঁটি তেল ও মধু সংগ্রহ করেন। সে বিশ্বস্ত দোকানের সঙ্গে প্রতারণা করার কারণেই সম্ভবত দোকানিদের কেউ কেউ খুব ক্ষুব্ধ ছিলেন।

মধু কিনে প্রতারিত হওয়া মোহাম্মদ আশরাফ, আলমগীর হোসেন, মো. রাসেল, মো. সজীব জানান, তারা এ দোকান থেকে নিশ্চিন্তে দ্রব্যাদি কেনেন। সেখানে কেউ ভেজাল মধু সরবরাহ করায় তারাও আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত বলে জানান।

এ দোকানের নিয়মিত গ্রাহক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ জানান, তিনি মনে করেন ভেজালকারীদের শাস্তি হওয়া দরকার। তবে আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া হয়তো ঠিক হয়নি।

তবে তিনি জানান, আবেগের বশে যদি সবাই ভেজালকারীদের পক্ষ নিতে থাকেন তাহলে ভেজালকারীরা পশ্রয় পেয়ে যাবেন। ভোক্তারা খাঁটি জিনিস বিশেষ করে খাঁটি মধু পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবেন। এজন্য ভেজালকারীদেরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনার দরকার।

আলী জিন্নাহ জানান, দোকানদার হয়তো প্রকাশ্যে দুজনকে শাস্তি দিয়েছেন। কিন্তু ভেজালকারীরা কয়েকশ’ লোককে লোকচক্ষুর আড়ালে ক্ষতি করেছেন। সেটারও শাস্তি হওয়া দরকার।

এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকার অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক আব্দুস সালাম জানান, দুই মৌয়ালকে বেঁধে রাখার বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দেখবেন। তবে তারা যদি সত্যিই ভেজাল মধু দিয়ে থাকেন এবং পরীক্ষার মাধ্যমে তা প্রমাণিত হয় তবে সেটাও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

তিনি আরও জানান, তার কাছে ওই মধুর নমুনা যথাযথভাবে দিলে তিনি সেটি পরীক্ষা করিয়ে জানাতে পারবেন। এক্ষেত্রে যদি ভেজালের প্রমাণ পাওয়া যায় তবে তারাও শাস্তি পাবেন।

ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান জানান, খবর পেয়ে ওই গ্রামে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। এ ঘটনায় দুই মৌয়ালের বাবা শুক্রবার (৩০ এপ্রিল) থানায় মামলা করেছেন। পুলিশ শুক্রবার বিকেলে অভিযুক্ত জিসানকে গ্রেফতার করেছে। তাকে শনিবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

ওসি আরও জানান, মধু ভেজাল কিনা সেটা পরীক্ষার পর জানা যাবে। মধু ভেজাল প্রমাণিত হলে মৌয়ালদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আমিন ইসলাম/এসজে/এএসএম