আন্তর্জাতিক

ভ্যাকসিন কূটনীতি রাশিয়া ও চীনের বৈশ্বিক অবস্থানকে শক্তিশালী করবে

গত জানুয়ারিতে বিশ্বের বিভিন্ন ধনী দেশ যখন ভ্যাকসিন প্রয়োগ কর্মসূচি শুরু করে, তখন বিশ্বের অন্য দেশগুলো ভ্যাকসিন থেকে বঞ্চিত ছিল। সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার ভুচিচ তখন অভিযোগ করে বলেছিলেন, ‘আজ পারমাণবিক অস্ত্রের চেয়ে ভ্যাকসিন জোগাড় করা বেশি কঠিন।’ ভুচিচ এই পরিস্থিতিকে টাইটানিকের সঙ্গে তুলনা করেন যখন প্রত্যেকে একটি লাইফবোট চাচ্ছিল শুধুমাত্র নিজেদের জন্য।

Advertisement

ভ্যাকসিন প্রয়োগের প্রতিযোগিতায় এখন ইউরোপীয় অনেক প্রতিবেশীর চেয়ে এগিয়ে গেছে সার্বিয়া। এর মূল কারণ দেশটি রুশ ও চীনা ভ্যাকসিন সহজে জোগাড় করতে পেরেছে এবং নিজেরা সেই ভ্যাকসিন উৎপাদনের জন্য চুক্তি করেছে।

তবে অনেক দেশ এখনও হাতে ভ্যাকসিন পেতে হুড়োহুড়ি করছে। বিশেষ করে বিশ্বের দরিদ্র অংশের জন্য এটি বেশি সত্য। বার্তা সংস্থা এএফপির এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সারা বিশ্বে এখন পর্যন্ত একশ কোটির বেশি করোনা ভ্যাকসিন ডোজ মানুষের দেহে প্রয়োগ করা হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র দশমিক ২ শতাংশ প্রয়োগ করা হয়েছে নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে।

সহযোগিতা পেতে অনেক দেশ চীন ও রাশিয়ার দিকে ঘুরেছে। গত ২৮ এপ্রিল ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিটের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, কীভাবে এই দুটি দেশ দরিদ্র অর্থনীতির দেশগুলোকে ডোজ দেয়ার মাধ্যমে ‘ভ্যাকসিনের শূন্যতা’ পূরণ করছে। দীর্ঘ সারির পেছনে আটকে থাকা উন্নয়নশীল দেশগুলোকে তারা লাখ লাখ ডোজ পাঠিয়েছে।

Advertisement

বৈশ্বিক অবস্থান শক্তিশালী করতে, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করতে এবং কৌশলগত অনুপ্রেরণা অর্জনের জন্য দেশ দুটি এই ভ্যাকসিন কূটনীতির নকশা করেছে। ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্সের অনুমান, রুশ সরকার বিশ্বের ৭০টি দেশে ভ্যাকসিন পাঠাতে চায়, এগুলোর মধ্যে অধিকাংশই এশিয়া, পূর্ব ইউরোপ ও লাতিন আমেরিকার দেশ। ২২ এপ্রিলের মধ্যে চীন ৯০টি দেশে ভ্যাকসিন সরবরাহ করেছে অথবা সরবরাহের পরিকল্পনা করেছে।

অন্যদিকে, ধনী বিশ্ব, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন অনেক কম ভ্যাকসিন সরবরাহ করছে। এছাড়া বৈশ্বিকভাবে ভ্যাকসিন ছড়িয়ে দেয়ার কর্মসূচি কোভ্যাক্সও ভ্যাকসিন রফতানিতে ভারতের নতুন নিষেধাজ্ঞার ফলে বিঘ্নিত হচ্ছে।

পশ্চিমা বিশ্ব যেখানে তেমন কিছু করতে পারছে না, সেখানে নিজেদের আসন পোক্ত করতে চীন ও রাশিয়া উভয়েই বিভিন্ন দেশে ভ্যাকসিন উৎপাদনের কারখানা প্রতিষ্ঠা করছে এবং স্থানীয় কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। দেশ দুটি একটি দীর্ঘ খেলা খেলছে। কিন্তু, বৈশ্বিকভাবে নিজেদের মর্যাদা বৃদ্ধির পাশাপাশি, তারা অনুগত বন্ধুদের পুরস্কৃত করতে বা নির্দিষ্ট পছন্দদের সুরক্ষিত করতে ভ্যাকসিন ব্যবহার করতে পারে।

ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্সের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, রাশিয়ায় স্থানীয়ভাবে উত্পাদিত স্পুতনিক ৫ ভ্যাকসিনের একটি ব্যাচ সরবরাহ করার পরপরই রুশ কর্মকর্তারা বলিভিয়ার দুষ্প্রাপ্য খনিজের খনিতে ও পারমাণবিক প্রকল্পে প্রবেশের বিষয়ে দেশটির সরকারের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন। আর কম্বোডিয়া এবং লাওসের প্রতি চীনের উদারতাকে দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের অবস্থানের ক্ষেত্রে দেশ দুটির সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা হিসেবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।

Advertisement

তবে এসব কূটনৈতিক সাফল্যের কারণে চীন এবং রাশিয়া নিজেদের দেশে খুব বেশি সাফল্য দেখাতে পারেনি। বিশাল জনসংখ্যার কারণে চীনের ভ্যাকসিন প্রয়োগ কর্মসূচি বিঘ্নিত হতে পারে। চীনের সিনোভ্যাক ভ্যাকসিন ব্রাজিলের তিন ধাপের ট্রায়ালে মাত্র ৫০.৭ শতাংশ কার্যকারিতা দেখিয়েছে যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেয়া ৫০ শতাংশ কার্যকারিতার মানদণ্ডের চেয়ে একটুখানি বেশি।

অন্যদিকে রাশিয়ার ভ্যাকসিন প্রয়োগ কর্মসূচি খুব ধীর গতিতে আগাচ্ছে। এর কারণ, স্থানীয়দের মধ্যে ভ্যাকসিন নিতে দ্বিধা ও ভ্যাকসিন উৎপাদনে সমস্যা। দুটি দেশই প্রতিদিন প্রতি একশ জনের মধ্যে মাত্র দশমিক ২টি ডোজ প্রয়োগ করেছে। ব্রিটেন ও ফ্রান্সে ভ্যাকসিন প্রয়োগের এই হার তিনগুণ এবং যুক্তরাষ্ট্রে পাঁচগুণ।

ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিটের ধারণা, রাশিয়া ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে ব্যাপকভাবে ভ্যাকসিন প্রয়োগ অর্জন করবে এবং চীন একই বছরের শেষ নাগাদের আগে তা অর্জন করতে পারবে না।

সূত্র : দ্য ইকোনমিস্ট

এমকে/জেআইএম