প্রাণঘাতি মহামারি করোনাভাইরাসের তাণ্ডবে সারা বিশ্ব যখন টালমাটাল ঠিক এমনি একটি সময়ে এই রোগের প্রতিষেধক হিসেবে ভেষজ উদ্ভিদের সন্ধান দিয়েছেন কৃষিবিজ্ঞানী ড. মো. এনায়েত আলী প্রামাণিক। তিনি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সরেজমিন গবেষণা বিভাগের বরেন্দ্র কেন্দ্রে কর্মরত ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা।
Advertisement
এ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা দাবি করছেন, কোভিড-১৯ ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় একটি ভেষজ উদ্ভিদের পাতার রস ব্যবহার করে তিনি অভূতপূর্ব সফলতা পেয়েছেন। এই পাতার রস অ্যাজমা, নিউমোনিয়া ও ব্রঙ্কাইটিস রোগের প্রতিষেধক হিসাবে কাজ করে। বিশেষ করে কোভিড-১৯ জনিত নিউমোনিয়া নিরাময়ে এই পাতার জুড়ি নেই।
বাংলায় ‘মনসাসিজ’ নামে পরিচিত এই উদ্ভিদের বৈজ্ঞানিক নাম Euphorbia nerifolia Linn। এর ইংরেজি নাম Indian spurge tree এবং এটি Euphorbiaceae পরিবারের অর্ন্তভূক্ত একটি উদ্ভিদ। Euphorbia nerifolia গাছটি দেখতে ক্যাকটাসের মতো এবং কাটাযুক্ত কাণ্ড ট্রাঙ্ক এবং শাখা-প্রশাখা রুপান্তরে মাধ্যমে অনিয়মিত (৪-৫টি ধার) আকার ধারণ করে। সাধারণত গাছের অনুজ অংশ থেকে পাতা বের হয়। পাতা মাংশল প্রকৃতির এবং চিরসবুজ।
ড. প্রামাণিক E. nerifolia উদ্ভিদের পাতার রসের কার্যকারীতা সম্পর্কে বলেন, করোনাভাইরাসের ‘এস’ প্রোটিন ফুসফুসের কোষের এনজিওটেনসিং হিউমান কনভার্টিং এনজাইম রিসেপটর-২ এর মাধ্যমে ভি-ফিউশন পদ্ধতিতে কোষে প্রবেশ করে। এরপর মেসেঞ্জার আরএনএ (mRNA) এর দু’টি সাব-ইউনিট ৪০s এবং ৬০s এর মধ্যে ৪০s সাব-ইউনিটের সঙ্গে কমপ্লেক্স তৈরি করে জেনোমিক ভাইরাল আরএনএ সিনথেসিস শুরু করে।
Advertisement
তিনি জানান, এ অবস্থায় আক্রান্ত রোগী যদি E. nerifolia এর পাতার রস খাওয়া শুরু করেন, তাহলে এটি প্রত্যক্ষভাবে ভাইরাল প্রোটিন সিনথেসিসে বাধা প্রদান করে। এই উদ্ভিদে রয়েছে প্রায় ২৩ প্রকারের ডাই-টারফিনয়েড এবং এক ধরনের গ্লাইকোসাইড। এর মধ্যে তিন বেটা ফ্রাইডেনাশল সবচেয়ে বেশি কার্যকরি এবং এই টারফিনয়েডের রয়েছে দারুণ অ্যান্টিভাইরাল কার্যকারীতা।
গবেষণায় দেখা গেছে, এর কিছু টারফিনয়েড HIV NL4 ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত কোষের প্রতিকারে সাফল্যজনকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। কোভিড-১৯ ভাইরাসে প্রায় ২৭টি রিকাম্বিন্যান্ট আর এনএ থাকার কারণে প্রতিনিয়ত এর প্রতিটি ষ্ট্রেইন মিউটেশনের মাধ্যমে পরিবর্তিত হচ্ছে। কোভিড-১৯ ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত ব্যক্তির ফুসফুস অতি দ্রুত নিউমোনিয়া দ্বারা আক্তান্ত হয় এবং ফুসফুসের ভেতর দিয়ে যে রক্তকণিকা প্রবাহিত হয়, তা জমাট বাঁধার মাধ্যমে ক্ষুদ্র দলার সৃষ্টি করে এবং বিভিন্ন অঙ্গে রক্ত প্রবাহকে বাধাগ্রস্থ করে হঠাৎ স্ট্রোক ঘটায়। যার ফলে দ্রুত মানুষের মৃত্যু ঘটছে।
এই বিজ্ঞানীর দাবি, প্রায় ২০০০ জন করোনা পজেটিভ রোগী এই পাতার রস সেবন করে সুস্থ হয়েছেন। প্রবাহমান পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে পরিস্কার পাতা রোগের মাত্রানুযায়ী দৈনিক ২-৩টি পাতা চিবিয়ে রস খেয়ে অবশিষ্টাংশ ফেলে দিতে হবে। এভাবে প্রতিদিন ২-৩ বার E. nerifolia এর পাতার রস খেতে হবে পুরোপুরি আরোগ্য হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত। তবে এ ক্ষেত্রে অবশ্যই মনে রাখতে হবে Euphorbiaceae পরিবারের অধিকাংশ উদ্ভিদ খুবই বিষাক্ত। তবে E. nerifolia এর পাতা সরাসারি চিবিয়ে খাওয়া যায়।
তিনি বলেন, এই উদ্ভিদটির সনাক্তকরণের সতর্কতার সঙ্গে করতে হবে। এটি চেনার উপায় হচ্ছে পাতাটি ডিম্বাকৃতির এবং পাতার বোটার নিচে কাণ্ডের সঙ্গে দু’টি কাঁটা থাকবে। শ্বাসকষ্টজনিত বিভিন্ন রোগ যেমন- অ্যাজমা, ব্রঙ্কাইটিস ও চেস্ট কনজেশন রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসায় এই উদ্ভিদের ব্যবহার বহুকাল থেকেই প্রচলিত।
Advertisement
ড. মো. এনায়েত আলী প্রামাণিকসহ Euphorbia nerifolia উদ্ভিদের জার্মপ্লাজমটি গাজীপুরের বিএআরআই উদ্ভিদ কৌলিসম্পদ কেন্দ্র থেকে ইতোমধ্যে সংগ্রহ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে বিশদ গবেষণার জন্য এই জার্মপ্লাজমটি ওই কেন্দ্রে সংরক্ষণ করা হচ্ছে।
এনএইচ/এএএইচ/জেআইএম