দেশজুড়ে

দৈনিক অবিক্রিত ৮ লাখ ডিম নিয়ে বিপাকে সিরাজগঞ্জের খামারিরা

করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার ঘোষিত ‘সর্বাত্মক লকডাউনে’ শহরগুলোতে দোকানপাট বন্ধ থাকায় সিরাজগঞ্জের পোল্ট্রি খামারিরা উৎপাদিত ডিম নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। দূরপাল্লার যান চলাচল না থাকায় বিক্রি করতে পারছে না বেশিরভাগ ডিম। টানা লসের কারণে অনেকেই এই পোল্ট্রি শিল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছেন। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে সম্ভাবনাময় এই শিল্পটি। প্রাণিসম্পদ বিভাগ ভ্রাম্যমাণ ভ্যানে ডিম বিক্রির ব্যবস্থা করলেও সাড়া নেই ক্রেতাদের।

Advertisement

ভুক্তভোগী খামারিরা বলছেন, গত ৯ এপ্রিল থেকে ‘মুজিববর্ষের অঙ্গীকার, নিরাপদ প্রাণিজ পুষ্টি হবে সবার’ এই প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে দেশে করোনা পরিস্থিতিতে সিরাজগঞ্জে ন্যায্যমূল্যে ভ্রাম্যমাণ ভ্যানে করে ডিম বিক্রির ব্যবস্থা শুরু করে জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস। কিন্তু সাধারণ মানুষের চলাচল আর দোকানপাট বন্ধ থাকায় ঠিকমতো ডিম বিক্রি হচ্ছে না।

সিরাজগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে পোল্ট্রি ফার্মের অবস্থা অনেকটাই নাজুক। জেলায় তিন হাজার ৭৭৭টি পোল্ট্রি খামার থেকে প্রতিদিন প্রায় ১০ লাখ ডিম উৎপাদন হচ্ছে। উৎপাদিত ডিম জেলার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানীসহ দেশের অনেক জেলাতে সরবরাহ করা হয়। তবে প্রতিদিন ১০ লাখ ডিম উৎপাদিত হলেও এই জেলার চাহিদা মাত্র দুই লাখ। বাকি ৮ লাখ ডিম কোনোভাবেই অন্যত্র পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না।

বর্তমানে লকডাউনের জন্য দূরপাল্লার যানবাহন না থাকায় প্রতিদিনকার ডিম ঠিকমতো বিক্রি করতে না পারায় চরম লোকসান গুনতে হচ্ছে খামারিদের। তারা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে পোল্ট্রি ফার্ম বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবে।

Advertisement

সদর উপজেলার শিয়ালকোল এলাকার পোল্ট্রি খামারি শাহীন রেজা। তার খামারে ২৮ হাজার মুরগি আছে। প্রতিদিন ১৪ হাজার ডিম উৎপাদন হয় এই খামারে। লকডাউনে প্রতিদিন প্রাণিসম্পদের ভ্রাম্যমাণ ভ্যান দুই হাজার করে ডিম নিচ্ছে। তার প্রশ্ন, ‘বাকি ১২ হাজার ডিম আমি কী করব?’

বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসেসিয়েশন সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি এসএম ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের পোল্ট্রি খামারিরা ভালো নেই। অথচ দেশের মানুষের পুষ্টির চাহিদা আমরাই পূরণ করে থাকি। গত বছরের লকডাউনের কারণে চরম লোকসান গুনতে হয়েছে আমাদের। সরকার হাতেগোনা কয়েকজন খামারিকে কিছু সহযোগিতা করলেও বেশিরভাগ খামারি কিছুই পাননি। এবছর লকডাউনে যা শুরু হয়েছে এতে করে আর এই শিল্প টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। প্রতিদিন গড়ে ৮ লাখ ডিম নিয়ে মহাবিপদে আছে আমাদের খামার মালিকরা।’

সিরাজগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আক্তারুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, ‘করোনাভাইরাসজনিত কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জেলার খামারিদের উৎপাদিত ডিম নিয়ে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সারাদেশের ন্যায় সিরাজগঞ্জ জেলা ও উপজেলা সদরগুলোতে মোট ৪৪টি ভ্রাম্যমাণ ভ্যানে বিক্রয় কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। এ কেন্দ্রগুলোতে ফার্মের মুরগির ডিম ২৬ টাকা হালি, সোনালী মুরগির মাংস প্রতি কেজি ২৫০ টাকা মূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে। এই ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কেন্দ্র চালুর ফলে খামারিরা তাদের উৎপাদিত ডিম ও মুরগি অতি সহজে বিক্রি করতে পারবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘অবশিষ্ট ডিম যাতে করে রাজধানীসহ অন্যত্র জেলাতে পাঠানো যায় সেজন্য জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। খামারীরা যাতে লোকসানে না পড়েন সেদিকে কঠোর নজরদারি রাখা হয়েছে।’

Advertisement

ইউসুফ দেওয়ান রাজু/এসআর/জেআইএম