দেশজুড়ে

অনাহারে-অর্ধাহারে চলছে নড়াইলের মৃৎশিল্পীদের জীবন

করোনায় আর্থিকভাবে ভালো নেই নড়াইলের পালপাড়ার মৃৎশিল্পীরা। বাংলা নববর্ষ ও চৈত্র সংক্রান্তি মেলাও হয়নি এবার। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস বাঙালির এ উৎসবে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে স্থানীয় মৃৎশিল্পীদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে।

Advertisement

জেলা সদরের শাহাবাদ ইউনিয়নের আতশপাড়া গ্রামের রমেন চন্দ্র পাল বলেন, ‘লকডাউনে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ। অনাহারে-অর্ধাহারে চলছে আমাদের জীবন। ভালো নেই আমরা।’

সংশ্লিষ্টরা জানান, এ সম্প্রদায়ের লোকজন বেঁচে থাকেন বাংলা নববর্ষকে ঘিরে। পয়লা বৈশাখের দিন থেকে পুরো বৈশাখজুড়েই দেশের বিভিন্ন স্থানের মত এ জেলায়ও মাসব্যাপী বৈশাখী মেলা হয়ে থাকে। কিন্তু হঠাৎ করে করোনা সংক্রমণে দেশের মানুষ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ফলে ওই পেশার মানুষের মাথায় হাত পড়েছে। লকডাউনের মাঝে পেরিয়ে গেছে বৈশাখী উৎসব। আবার আগে থেকে বায়না দিয়ে রাখা স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও শেষ মুহূর্তে অর্ডার বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে। ফলে মাটির তৈরি জিনিসপত্র নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কুমাররা।

রতডাঙ্গা গ্রামের মৃৎশিল্পী শঙ্কর চন্দ্র পাল বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে হাট-বাজারসহ সব ধরনের যাতায়াত বন্ধ থাকায় কর্মহীন হয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন চলছে। বৈশাখের রোজগার করা টাকা দিয়ে বছরের বাকি ১১ মাস সংসার চলে। বৈশাখকে ঘিরে এখনো টিকে আছে পালপাড়ার কুমাররা। লকডাউনের কারণে চরম সমস্যায় পড়েছি আমরা।’

Advertisement

তিনি আরও বলেন, ‘বৈশাখে মাটির পুতুল, হাতি, ঘোড়া, গণেশের মূর্তি, পান্তা-ইলিশ খেতে মাটির থালার বিকল্প নেই। হাজার হাজার মাটির তৈরি তৈজসপত্র রয়েছে কারখানায়। মাটির থালাও রয়েছে প্রচুর। ফলে এই সম্প্রদায়ের মানুষের রুজি-রোজগার প্রায় বন্ধের পথে।’

জেলার কালিয়া উপজেলার কুলশুর পালপাড়া গ্রামের করুনা কান্ত পাল বলেন, ‘মাটি কিনে এনে ওইসব জিনিসপত্র বানাতে হয়। এবার মাটি কিনে হাঁড়ি, পাতিল, পেয়ালা, ফুলদানি তৈরি করা হলেও তা বিক্রি হয়নি। ফলে করোনায় কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি হয়ে গেল। এ অবস্থায় এখানকার প্রায় দুইশ পরিবার চরম বিপাকে পড়েছেন। তাই সরকারি প্রণোদনার দাবি জানাই।’

নড়াইল সমাজ সেবা অধিদফতরের উপ-পরিচালক রতন হালদার বলেন, ‘অর্থনৈতিক উন্নয়নে তারা ব্যাপক অবদান রাখেন। সরকারিভাবে তাদের সহযোগিতার অনেক সুযোগ আছে। তবে এককভাবে কাউকে সহযোগিতার সুযোগ নেই। সংগঠিত হয়ে সমিতির মাধ্যমে আসতে হবে। তাহলে তাদের জন্য আর্থিক সুবিধা দেয়া যেতে পারে।

হাফিজুল নিলু/আরএইচ/এমএস

Advertisement