ফিচার

১০০ শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করে দুর্ধর্ষ এই সিরিয়াল কিলার

বিশ্ব ইতিহাসের দুর্ধর্ষ এক সিরিয়াল কিলার তিনি। তার সব ক্ষোভ ছিল শিশুদের উপর। একের পর এক শিশুকে ধর্ষণ ও নির্যাতন করে নির্মমভাবে খুন করেছেন তিনি।

Advertisement

আপনি জানলে আরও অবাক হবেন, এই সিরিয়াল কিলার না-কি মায়েদের কাঁদানোর জন্যই শিশুদেরকে হত্যা করতেন। তিনি চেয়েছিলেন, ১০০ মায়ের বুক খালি হবে এবং তারা সন্তানের জন্য সারাজীবন কাঁদবেন! কতটা নিকৃষ্ট মানুষ হলে এমনটি করতে পারে ভাবুন একবার!

নিষ্ঠুর এই হত্যাকারীর নাম জাভেদ ইকবাল। পাকিস্তানের নাগরিক তিনি। তিনি অত্যন্ত ঠান্ডা মাথার একজন খুনী ছিলেন। তাকে দেখে কেউ কোনোদিন ভাবতেও পারেনি, ভদ্রবেশে তিনি শিশুদেরকে ধর্ষণ ও হত্যা করতে পারেন!

শিশু হত্যার বাসনা

Advertisement

এই সিরিয়াল কিলার তার মনের বাসনা পূরণে ১০০ শিশুকে হত্যা করেন। তিনি তার অপরাধের বিষয়ে স্বীকারও করেন আদালতে। তিনি বলেন, ‘আমি চাইলে ৫০০ শিশুকেও হত্যা করতে পারতাম কিন্তু তা করিনি। এটা আমার জন্য কঠিন ছিল না। কারণ আমি চেয়েছিলাম ১০০ শিশু পর্যন্তই সীমাবদ্ধ রাখতে। আমার ইচ্ছাপূরণ হয়েছে।’

সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, ইকবাল শুধু ছেলে শিশুদেরকে ধর্ষণ করে হত্যা করতেন। তিনি কোনো কন্যাশিশুর ক্ষতি করেননি। তিনি বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখিয়ে ছেলে শিশুদেরকে কাছে ডাকতেন।

এজন্য তিনি একটি ভিডিও গেমসের দোকান চালু করেন শাদবাগ এলাকায়। সেখানে এটিই ছিল প্রথম গেমসের দোকান। খুব কম দামে গেমস খেলার টোকেন দেওয়া হতো শিশুদেরকে। সব ছেলে শিশুরাই জাভেদের দোকনে হুমড়ি খেয়ে পড়তো গেম খেলার আশায়। সেই সুযোগে শিশুদেরকে ধর্ষণ করতেন জাভেদ।

পরে অবশ্য গেমসের দোকানটি বন্ধ করে দিতে হয় জাভেদকে। কারণ এলাকাবাসীরা তাদের সন্তানদেরকে আর গেমসের দোকানে যেতে দেননি, এতে অনেক অর্থ খরচ হচ্ছিলো অবিভাবকদের। এরপর জাভেদ একটি অ্যাকুরিয়ামের দোকান ও জিমনেসিয়াম খুলেন। যদিও আর্থিকভাবে বেশ স্বচ্ছল ছিলেন জাভেদ।

Advertisement

জাভেদের জীবন

তার সম্পর্কে ইতিহাসে তেমন কোনো তথ্য নেই। ধারণা করা হয়, ১৯৫৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন জাভেদ ইকবাল। তিনি বাবা-মায়ের ছয় সন্তানের মধ্যে চতুর্থ ছিলেন। তার বাবা মোহাম্মদ আলী ছিলেন মুঘল আমলের একজন নামকরা ধনী ব্যবসায়ী এবং ধনী।

১৯৭৮ সালে তিনি ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন এবং কলেজে থাকাকালীন ব্যবসা শুরু করেন। তার বাবা একজোড়া ভিলা কিনেছিলেন, যেখানে জাভেদ ইকবাল তার স্টিল-রিস্টাটিং ব্যবসায পরিচালনা করতেন। ব্যাবসায়িক জীবনের শুরু থেকেই বিভিন্ন যৌন অপরাধে অভিযুক্ত হন তিনি। তবে আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে ঠিকই নিজেকে বের করে আনেন।

ফাঁদে ফেলতেন শিশুদের

জাভেদ এতোটাই চতুর ছিলেন যে, পাকিস্তানের প্রশাসনের নজর এড়িয়ে যৌন নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছিলেন। একবার ধরা পড়ে জেল খাটেন। এরপর নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করে বেরিয়ে আসতেও দেরি করেননি। কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েই তিনি শিশু হত্যার এক তীব্র আকাঙ্ক্ষা গড়ে তোলেন মনে মনে।

তিনি যখন কারাগারে বন্দী ছিলেন; তখন তার মারা যান। জাভেদ তার মাকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন। মায়ের মৃত্যুতে শোকাগ্রস্ত জাভেদের মনে ক্রোধের আগুন জ্বলে ওঠে। এরপরই তিনি নিজের সঙ্গেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন যে, ১০০ শিশুকে হত্যা করবেন ও তাদের মায়েদের কাঁদাবেন।

জাভেদ ইকবালের টার্গেট ছিল ৬-১৬ বছর বয়সী শিশুদের উপর। কোনো শিশুকে একলা পেলেই তাকে প্রলোভন দেখিয়ে ভিলায় নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করতেন জাভেদ। এমনকি তিনি লাহোরের রাস্তায় ঘোরাফেরা করা দরিদ্র ছেলেদেরকেও একের পর এক ধরে এনে একইভাবে হত্যা করেন।

জাভেদের দোষ স্বীকার

১৯৯৯ সালের ডিসেম্বরে জাভেদ ইকবাল তার কৃতকর্মের কথা স্বীকার করে বিষদ আকারে একটি চিঠি লিখেন। এরপর চিঠিটি তিনি পুলিশ এবং স্থানীয় সংবাদপত্রে প্রেরণ করেন। তিনি নিজের পরিচয় গোপন করার চেষ্টা করেননি। ৩০ শে ডিসেম্বর জাভেদ ইকবালকে পুলিশ গ্রেফতার করে।

এরপর জাভেদ ইকবাল ভরা আদালতে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেন। এমনকি তিনি কোন শিশুদেরকে হত্যা করেছেন সে বিষয়েও তালিকা করে রাখেন। সব প্রমাণ এবং স্বীকারোক্তি আদালতে জানান ইকবাল।

হত্যার পর মৃতদেহগুলোতে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড ব্যবহার করে দ্রবীভূত করে ফেলতেন জাভেদ। আমেরিকান সিরিয়াল কিলার জেফ্রি ডাহারও এই অ্যাসিডের ব্যবহার করে মৃতদেহ নষ্ট করতেন। জাভেদের দেওয়া তথ্য অনুসারে খোঁজ নিয়ে পুলিশ মাত্র দুইটি মৃতদেহের কঙ্কাল উদ্ধার করে।

বিচারের রায়

১৭ বছরের সাজিদ আহমেদ ছিলেন জাভেদ ইকবালের প্রধান সহযোগী। আরও দুই যুবককেও সহযোগী হিসেবে রেখেছিলেন জাভেদ। সবাইকেই পুলিশ পরবর্তীতে গ্রেফতার করেন ১০০ শিশুকে হত্যার দায়ে। শরিয়াহ আইন মেনে বিচারক রায় দেন, ভুক্তভোগীদেরকে তিনি যেভাবে হত্যা করেছেন; তাকেও ঠিক সেভাবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে।

যে চেইন দিয়ে শ্বাসরোধে ১০০ শিশুকে হত্যা করেছেন জাভেদ; সেটি দিয়েই তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে। এরপর তার দেহকে ১০০ টুকরো কেটে মৃত ছেলেদের অভিভাবকের সামনে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডে ডুবিয়ে দেওয়া হবে।

বিচারকের এ রায়ের পর, ২০০৮ সালের ৮ অক্টোবর জাভেদ ইকবাল এবং তার প্রধান সহযোগী সাজিদ আহমেদ জেলখানায় আত্মহত্যা করেন। এভাবেই শেষ হয় ভয়ঙ্কর সিরিয়াল কিলার জাভেদের গল্প!

সূত্র: লিস্টভার্স/ব্রিটানিকা

জেএমএস/এমএস