আন্তর্জাতিক

দিল্লিতে মিলছে না আগুন, লাশ ছিঁড়ে খাচ্ছে কুকুর

ভারতের দিল্লি এখন এক মৃত্যুপুরী। মানুষের মৃত্যুর সারি এখানে এতই দীর্ঘ হচ্ছে যে, তাদের দাহ করতে পেতে হচ্ছে বেগ। শহরের শ্মশানগুলো এখন আর খালি নেই। সেখানে মরদেহের দীর্ঘ লাইন।

Advertisement

দীর্ঘ সময় মরদেহ বাইরে রাখায় কোথাও কোথাও দেখা গেছে রাস্তার কুকুর সেগুলো ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাচ্ছে। এমনই এক ঘটনা ঘটেছে গাজিয়াবাদ জেলায়।

আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়, সেখানে করোনায় মারা যাওয়া আদালতের এক কর্মীকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল হিন্দোন শ্মশানে।

মৃত ব্যক্তির সহকর্মী ত্রিলোকী সিংহ জানান, তারা সকাল ৮টায় পৌঁছানোর পর টোকেন দেয়া হয় বেলা ১০টার। কারণ লম্বা লাইন ছিল। পরে সেই টোকেন বদলে নতুন সময় দেয়া হয় সন্ধ্যা ৬টায়। এ সময় তারা একটু দূরে গিয়ে অপেক্ষা করছিলেন।

Advertisement

হঠাৎ এক ব্যক্তি এসে তাদের খবর দেন, রাস্তার কুকুর এসে তাদের মরদেহ টেনেছিঁড়ে দিচ্ছে। তারা দৌড়ে যান। সেই ছবি এবং সংবাদ বিড়ম্বনায় ফেলেছে দিল্লি সরকারকে।

শুধু একটি শ্মশানেই এমন অবস্থা নয়। দিল্লির সব শ্মশানে একই অবস্থা। এই যেমন সুভাষনগরের শ্মশানে করোনায় মৃত বাবার দেহ নিয়ে গিয়েছিলেন মনমীত সিংহ। কিন্তু তিনি সেখানে বাবাকে দাহ করতে পারেননি।

সংবাদমাধ্যমে তিনি জানিয়েছেন, বাবার মরদেহ নিয়ে শ্মশানে ঢুকতে যাবেন, তার আগেই রাস্তা আটকালেন এক কর্মী। জানিয়ে দিলেন, আর দেহ নেয়া যাবে না। কারণ দাহ করার জায়গা এবং কাঠ নেই।

মনমীত বলেন, 'সরকার হাসপাতালে অক্সিজেন দিতে পারছে না। অন্তত শ্মশানে জায়গা তো দিক, যাতে পৃথিবী থেকে বিদায়টা ঠিকমতো হয়।'

Advertisement

বিবিসির খবরে বলা হয়, দিল্লির অবস্থা এতটাই খারাপ যে, খোলা মাঠ, পার্ক এমনকি গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গাতেও অস্থায়ী শ্মশান তৈরির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তারপরেও মরদেহ নিয়ে তীব্র গরম আর চিতার আগুণের হলকার মধ্যে পিপিইতে মোড়া স্বজনদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দিল্লির সারাই কালে খান শ্মশানের ভেতর খালি জায়গায় গত কদিনে নতুন ২৭টি দাহ করার বেদি তৈরি করা হয়েছে। শ্মশানটির লাগোয়া পার্কে আরও ৮০টি বেদি তৈরি হয়েছে।

এদিকে যমুনা নদীর তীর ঘেঁষা এলাকাগুলোতে অস্থায়ী শ্মশান তৈরির জন্য জায়গা খুঁজছে দিল্লি পৌর কর্তৃপক্ষ।

দিল্লিতে বিবিসি হিন্দি ভাষা বিভাগের সংবাদদাতা জুবায়ের আহমেদ তিনটি শশ্মান ঘুরে এসে জানান, জীবনে একসঙ্গে এত চিতা জ্বলতে তিনি দেখেননি। শবদেহগুলো সবই কোভিড রোগীদের।

এদিকে ভারতে বৃহস্পতিবার (২৯ এপ্রিল) করোনায় মৃত্যু ও শনাক্তে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন করে মারা গেছেন তিন হাজার ৬৪৫ জন। আক্রান্ত হয়েছেন তিন লাখ ৭৯ হাজারের বেশি মানুষ। এর ফলে দেশটিতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ২ লাখ ৪ হাজার ৭৩২ জনে।

জেডএইচ/জিকেএস