জাতীয়

বাংলাদেশের উদ্যোগে ‘পানিতে ডুবে মৃত্যুরোধ’ দিবস হলো ২৫ জুলাই

২৫ জুলাইকে ‘পানিতে ডুবে মৃত্যুরোধ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে জাতিসংঘ। স্থানীয় সময় বুধবার (২৮ এপ্রিল) ঐতিহাসিক এই রেজুলেশন সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ।

Advertisement

রেজুলেশনটি উত্থাপন করেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা। জাতিসংঘের ৭৫ বছরের ইতিহাসে এ ধরনের রেজুলেশন এটাই প্রথম।

রেজুলেশনটিতে পানিতে ডুবে মৃত্যুকে একটি ‘নীরব মহামারি’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়।

নীরব এই বৈশ্বিক মহামারির বিষয়টিকে আন্তর্জাতিক প্লাটফর্মে নিয়ে আসতে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন ২০১৮ সালে থেকে কাজ করে যাচ্ছে। দীর্ঘ পথ পরিক্রমার পর রেজুলেশনটি পাস হয়। 

Advertisement

বাংলাদেশের পাশাপাশি রেজুলেশনটিতে সহ-নেতৃত্ব দেয় আয়ারল্যান্ড। আর এতে সহ-পৃষ্ঠপোষকতা করে ৮১টি দেশ।

পানিতে ডুবে মৃত্যু বিশ্বের প্রতিটি জাতিকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে মর্মে উল্লেখ করা হয়েছে রেজুলেশনটিতে। পাশাপাশি অগ্রহণযোগ্য উচ্চহারের এই মৃত্যু প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে একটি কর্ম কাঠামোও প্রদান করা হয়।

রেজুলেশনটিতে বলা হয়, পানিতে ডুবে বিভিন্ন দেশে শিশু ও কিশোর-কিশোরীরা অকালে প্রাণ হারাচ্ছে। এই মৃত্যু প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টি, জাতীয় পদক্ষেপকে উৎসাহিত করা এবং এ বিষয়ক সর্বোত্তম অনুশীলন ও সমাধানসমূহ পারষ্পরিকভাবে ভাগ করে নেয়ার লক্ষ্যে ২৫ জুলাইকে ‘বিশ্ব পানিতে ডুবে মৃত্যুরোধ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা দেয় সাধারণ পরিষদ।

রাষ্ট্রদূত ফাতিমা তার বক্তব্যে বলেন, ‘পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে বৃহত্তর বৈশ্বিক রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি আদায়ের লক্ষ্যে জাতিসংঘে একটি রেজুলেশন গ্রহণের তাগিদ অনুভব করেছিল বাংলাদেশ। আর সে কারণেই এই প্রচেষ্টায় জাতিসংঘে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিতে পেরে সম্মানিত বোধ করছে।’

Advertisement

তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘আমরা বিশ্বব্যাপী শিশু মৃত্যুর হার হ্রাস করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা যদি পানিতে ডুবে মৃত্যু হারকে শূন্যের কোটায় না আনতে পারি, তবে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় আমাদের সাফল্য অর্থাৎ এসডিজি-৩ অর্জন অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।’

রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, ‘পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণের মতো ঘটনার ৯০ ভাগ সংঘটিত হচ্ছে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে। এশিয়াতে এই সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। পানিতে ডুবে মৃত্যু কেবল দুর্ঘটনা নয়, এটি একটি বৈষম্য।’

জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী এই প্রতিনিধি বলেন, ‘যেহেতু পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা দরিদ্র পরিবারকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করছে, তাই এটি প্রতিরোধে গৃহীত পদক্ষেপ এসডিজি-১ সহ আরও কয়েকটি এসডিজি অর্জনেও ভূমিকা রাখতে পারে।’

বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ১৮ হাজার মানুষ পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণ করছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আর যাতে কোনো মূল্যবান জীবন পানিতে ডুবে শেষ না হয় সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে শেখ হাসিনা সরকার। ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে শিক্ষা, নারী ও শিশু, সমাজকল্যাণ, যুব ও ক্রীড়া এবং ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সসহ ১২টি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে গঠিত একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। এই টাক্সফোর্স পানিতে ডুবে মৃত্যু হ্রাস সংক্রান্ত জাতীয় কৌশল প্রণয়নে কাজ করে যাচ্ছে।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী বিশ্বে প্রতিবছর ২ লাখ ৩৫ হাজার মানুষ পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণ করছে। বেশ কয়েকটি দেশে পানিতে ডুবে মৃত্যু, বিশেষ করে ৫ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ।

রেজুলেশনটিতে পানিতে ডুবে মৃত্যুরোধ পদক্ষেপটির সঙ্গে টেকসই উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস সম্পর্কিত বৈশ্বিক কাঠামোগুলোর সংযোগের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

বলা হয়েছে, জাতিসংঘ গৃহীত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার বেশ কয়েকটির অর্জনকে এগিয়ে নেয়ার জন্য এটি তাৎপর্যপূর্ণ সুযোগ সৃষ্টি করেছে।

রেজুলেশনটির অপারেটিভ অনুচ্ছেদে পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধে জাতীয় ফোকাল পয়েন্ট নিয়োগ, জাতীয় প্রতিরোধ পরিকল্পনা ও কর্মসূচি উন্নয়ন, জাতীয় পর্যায়ে আইন প্রণয়ন, সচেতনতা তৈরি করা, আন্তর্জাতিক পদক্ষেপকে সহযোগিতা করা এবং এ বিষয়ক গবেষণা ও উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে সদস্য দেশসমূহকে উৎসাহিত করা হয়েছে।

জেডএইচ/এমকেএইচ