চলমান লকডাউন স্বত্ত্বেও আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দোকানপাট এবং শপিং মল খুলে দেওয়া হয়েছে। এ সময় অনেকেই নিশ্চয়ই ঈদের কেনাকাটার জন্য কোন শপিং মলে বা মার্কেটে যাবেন, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন! তবে ঈদের খুশিতে করোনাকে উপেক্ষা করা ঠিক হবে না!
Advertisement
দেশে করোনা আক্রান্তদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এ সময় বাইরে বের হয়ে বিভিন্ন মার্কেট বা শপিং মল ঘুরে কেনাকাটা করা বেশ ঝুঁকির বিষয়। সামান্য অসচেনতায় আপনি করোনায় সংক্রমিত হয়ে পড়তে পারেন।
শুধু করোনা আক্রান্তদের সংস্পর্শে এলেই নয় বরং বাতাসে ছড়িয়ে থাকা করোনার এয়ারোসোলের মাধ্যমেও কিন্তু আপনি সংক্রমিত হতে পারেন, বলছেন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি করোনার লক্ষণ বা উপসর্গ ছাড়া আক্রান্তরা যেখানেই যাবেন; সেখানেই অন্যদের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা আছে।
তবুও যদি আপনি ঈদের কানাকাটায় শপিং মলে যেতে চান; তাহলে বেশ কয়েকটি বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। জেনে নিন সেগুলো-
Advertisement
সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন
করোনাকালে কেনাকাটা করা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। কারণ আপনি সব স্থানে ঘুরে দেখবেন এবং দোকানীদের সঙ্গে কথা বলবেন। তবে মনে রাখবেন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলার। এমনকি আপনি যদি কারও সঙ্গে কথা বলেন, অন্তত ৩ ফুট দূর দাঁড়িয়ে কথা বলবেন। নিজে থেকেই দূরত্ব বজায় রেখে চলার চেষ্টা করবেন।
কোনো পৃষ্ঠকে স্পর্শ কররবেন না
স্বভাবতই আমরা লিফটের বাটনে, সিড়ির হাতলে কিংবা বিভিন্ন দোকানের দরজায় হাত রেখে প্রবেশ করি। করোনাকালে এ বিষয়গুলোর প্রতি নজর রাখতে হবে। সুরক্ষার জন্য শপিং মলে কোনো কিছু স্পর্শ করবেন না।
Advertisement
পাবলিক স্পেসের সারফেসগুলো সবাই ব্যবহার করার কারণে, করোনার জীবাণু থাকতে পারে। যদি ভুলবশত কোনো সারফেসে হাত দিয়ে থাকেন; তাহলে দ্রুত সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিন কিংবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন।
ট্রায়াল রুম ব্যবহার করবেন না
বিভিন্ন শো-রুমে ঝুলানো পোশাকগুলোতে অনেক ক্রেতারা স্পর্শ করে থাকেন। যা করোনা ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এ ছাড়াও ট্রায়াল রুমগুলো খুবই ছোট হওয়ায় সেগুলোতে বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা থাকে না।
বাতাসে ভেসে থাকা করোনার জীবাণু ট্রায়াল রুমে থাকতে পারে। তাই ট্রায়াল রুম ব্যবহার করবেন না। প্রয়োজনে পোশাকের মাপ ঠিক আছে কি-না তা মেপে পরীক্ষা করতে সঙ্গে মেজারমেন্ট টেপ রাখুন।
এক মুহূর্তও মাস্ক ছাড়া নয়
এক মুহূর্তের জন্যও মুখ থেকে মাস্ক খুলবেন না। স্বাস্থ্য সংস্থার পাশাপাশি সরকারও মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক করেছে। সুতরাং আপনারও তা মেনে চলা উচিত।
বরং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ মোতাবেক এখনিএকসঙ্গে দুইটি বা তিনটি মাস্ক ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কারণ করোনার জীবাণু এতোটাই সূক্ষ্ম যে, তা খারাপ মানের মাস্ক দিয়েও সহজে প্রবেশ করতে পারে।
সঙ্গে ব্যাগ নিয়ে যান
শপিংব্যাগেও করোনার জীবাণু থাকতে পারে। তাই কেনাকাটার সময় সঙ্গে করে একটি ব্যাগ নিয়ে যেতে পারেন। এতে সুরক্ষিত থাকবেন।
বিভিন্ন দোকান ঘুরে কেনাকাটার সময় যখন তারা আপনাকে শপিংব্যাগ দেবে; তখন তাতে থাকা করোনার জীবাণু আপনাকে সংক্রমিত করতে পারে। তাই সঙ্গে নিজেদের ব্যাগ রাখুন।
লিফটের পরিবর্তে এসকেলেটার
লিফট ছোট হওয়ার কারণে; সেখানে অনেক মানুষই একসঙ্গে প্রবেশ করে। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এ ছাড়াও লিফটের মধ্যে বায়ু চলাচলেরও কোনো ব্যবস্থা থাকে না। তাই করোনাকালে লিফট ব্যবহার বন্ধ করুন।
যদি লিফট ব্যবহার করতেই হয়; তাহলে দুই বা তিনজনের বেশি লোক প্রবেশ করবেন না। সবচেয়ে ভালো হয় এসকেলেটর ব্যবহার করা। এতে করে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলা যায়। তবে এর হাতলে হাত রাখবেন না।
শরীর খারাপ থাকলে বের হবেন না
যদি আপনি সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত থাকেন বা অসুস্থবোধ করেন; তাহলে ঘর থেকে বের হবেন না। হয়তো আপনি করোনায় আক্রান্ত হতেও পারেন। তাই শরীর খারাপ থাকলে বাইরে বের হয়ে অন্যদেরকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলবেন না।
গ্লাভস পরুন
মার্কেট, শপিং মল, সুপারমার্কেট বা সবজির দোকান যেখানেই যান না কেন, হাতে গ্লাভস ব্যবহার করুন। এতে করে আপনি যেসব জিনিসে হাত রাখবেন সেগুলো সুরক্ষিত থাকবে। শুধু গ্লাভস পরলেই কিন্তু আপনি নিরপদ নন, পাশাপাশি হ্যান্ড স্যানিটাইজারও ব্যবহার করতে হবে।
হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন
কোনো জিনিসে বা সারফেসে হাত রাখার পরপরই হাত স্যানিটাইজ করে নিন। এই করোনাকালে মাস্ক এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার হলো আপনার বন্ধু। প্রতি ১৫-২০ মিনিট অন্তর হাতে স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন। স্যানিটাইজারে ৬০-৯০ শতাংশ অ্যালকোহল আছে কি-না তা লক্ষ্য রাখবেন।
বাড়িতে পৌঁছেই গোসল করুন
শপিং মল বা মার্কেট থেকে বাসায় ফিরে দ্রুত বাথরুমে চলে যান। তারপর সব পোশাক ডিটারজেন্টে ভিজিয়ে ভালো করে সাবান-পানি দিয়ে গোসল করে নিন। ঘরে প্রবেশের সময় জুতা বাইরে খোলা স্থানে রাখুন।
ব্যবহৃত পোশাকগুলো ভালো করে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে নিন। শপিং মল থেকে কিনে আনা পোশাকের ব্যাগটি একটি স্থানে অন্তত ৭২ ঘণ্টা রেখে দিন। তাহলে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যাবে।
জেএমএস/এএসএম