অর্থনীতি

আসছে ক্রেতা, খুশি বিক্রেতা

মার্কেট খোলা রাখার সময় বাড়িয়ে রাত ৯টা পর্যন্ত করায় বেশ খুশি বিক্রেতারা। আর মার্কেট খোলার পরপরই অনেক ক্রেতা ঈদ উপলক্ষে কেনাকাটা শুরু করে দিয়েছেন। যদিও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় চলাচলের ক্ষেত্রে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার।

Advertisement

প্রথমে এই বিধিনিষেধের মধ্যে প্রথমে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে রোববার (২৫ এপ্রিল) থেকে মার্কেট খুলে দিয়েছে সরকার।

এ সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশনায় মার্কেট খোলার সময় নির্ধারণ করা হয় সকাল ১০ থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। তবে ব্যবসায়ীদের পক্ষে থেকে অন্তত রাত ৮টা পর্যন্ত মার্কেট খোলা রাখার দাবি জানানো হয়। এ নিয়ে গতকাল জাগো নিউজে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়

এরপর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে জানানো হয়, ঢাকার মার্কেট রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে। এ সিদ্ধান্তের ফলে বেশ খুশি ব্যবসায়ীরা। তারা আশা করছেন এবার ঈদ উপলক্ষে ভালো ব্যবসা হবে, যার মাধ্যমে গতবছরের ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নেয়া যাবে।

Advertisement

সোমবার রাজধানীর খিলগাঁও তালতলা সিটি কর্পোরেশন মার্কেট, শান্তিনগর টুইন টাওয়ার, মৌচাক মার্কেট, ফরচুন শপিংমল, টিকাটুলির রাজধানী সুপার মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, অনেকেই ঈদের পোশাক কেনা শুরু করেছেন।

তালতলা সিটি কর্পোরেশন মার্কেটের পোশাক ব্যবসায়ী হান্নান বলেন, ‘রাত ৯টা পর্যন্ত মার্কেট খোলা রাখার সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে। এতে আমরা খুশি। আশাকরি এখন কিছুটা বিক্রি বাড়বে। মার্কেট ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকলে বিক্রিই হত না। কারণ রোজায় ক্রেতারা মার্কেটে আসবেই ৫টার পর।’

বেচা-কেনা কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গতকাল প্রথম দিন ক্রেতা ছিল না। একপ্রকার দোকান গোছগাছ করেই আমরা সময় পার করে দিয়েছি। তবে আজ ক্রেতারা মোটামুটি আসছেন। আমাদের ধারণা, গণপরিবহন চলাচল শুরু হলে ক্রেতাও বাড়বে।’

মার্কেটটির আরেক ব্যবসায়ী মেহেদী বলেন, ‘রাত ৯টা পর্যন্ত মার্কেট খোলা রাখার সিদ্ধান্ত খুব ভালো সিদ্ধান্ত। আমরা আশা করছি এবারের ঈদ উপলক্ষে ভালো বিক্রি হবে। কারণ গতবছর মানুষ কেনাকাটা কম করেছে। এবার বাধ্য হয়েই অনেকে কেনাকাটা করবে।’

Advertisement

তিনি আরও বলেন, ‘গত বছর আমরা অনেক লোকসান গুনেছি। মাত্র ১৫ দিনের মতো মার্কেট খোলা ছিল। তার ওপর ক্রেতা ছিল না। এবার ভালো বিক্রির আশায় নতুন করে বিনিয়োগ করেছি। গত বছরের লোকসান পুরোপুরি মেকআপ করা যাবে না। তারপরও আমরা আশা করছি লোকসান কিছুটা হলেও কমিয়ে আনা যাবে।’

রাজধানী সুপার মার্কেটর ব্যবসায়ী মো. আরিফ বলেন, ‘গতকাল ক্রেতা খুব কম ছিল। সব মিলিয়ে ৩০ হাজার টাকাও বিক্রি হয়নি। তবে আজ সকাল থেকে কিছু ক্রেতা আসছে। আশা করছি সামনে ক্রেতা আরও বাড়বে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ধারণা এবার ঈদের যেন বিক্রি শুরু হবে ২০ রোজার পর। কারণ এখন বাস বন্ধ। আবার মাস শেষের দিকে। মানুষের হাতে টাকা কম। আগামী মাসে বেতনের টাকা পাওয়ার পর মানুষ মার্কেটে আসবে।’

প্রায় একই ধরনের কথা বলেন মৌচাক মার্কেটের ব্যবসায়ী ইয়াসিন। তিনি বলেন, ‘আমাদের দাবি ছিল অনন্ত রাত ৮টা পর্যন্ত মার্কেট খোলা রাখার। ডিএমপি রাত ৯টা পর্যন্ত মার্কেট খোলা রাখার সুযোগ দিয়েছে। এটা খুবই ভালো সিদ্ধান্ত।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিকেল ৫টা পর্যন্ত মার্কেট খোলা থাকলে আমরা আবার লোকসান করতাম। আবার ক্রেতাদের ও দুর্ভোগে পড়তে হত। রাত ৯টা পর্যন্ত মার্কেট খোলার সিদ্ধান্ত দেয়ায় ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই উপকৃত হবেন। আমরা আশা করি এবার ভালো বিক্রি হবে। তারপরও কোনো কিছু নিশ্চিত করে বলা যায় না। দেখা যাক সামনে কী হয়।’

মার্কেটটিতে কেনাকাটা করতে আসা নীলিমা নামে এক নারী বলেন, ‘ঈদের কেনাকাটা করতেই হবে। পরে এলে মার্কেটে ভিড় বেশি হবে। তাই কিছুটা নিরিবিলি পরিবেশে কেনাকাটা করতে আগে আগেই মার্কেটে চলে আসলাম।’

তালতলা সিটি কর্পোরেশন মার্কেটে সপরিবারে আসা সীমা আক্তার বলেন, ‘গত বছর ঈদের কেনাকাটা করতে পারিনি। ছেলে-মেয়ে ঈদের পোশাকের বায়না ধরেছে অনেক আগেই। মার্কেট বন্ধ থাকায় আসতে পারিনি। এখন মার্কেট খুলে দিয়েছে তাই সবাই মিলে চলে এলাম। প্রয়োজন হলে ঈদের আগে আবার আসব।’

রাজধানী সুপার মার্কেটে কথা হয় মিথিলা শারমিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘অনেকদিন পর মার্কেট খুলেছে। মার্কেটে নতুন কী এসেছে তা দেখার জন্য এসেছি। কিছু পছন্দ হলে কিনব। না হলে কয়েকদিন পর এসে কিনবে। মূলত আজ এসেছি মার্কেটের অবস্থা দেখার জন্য।’

এমএএস/এসএস/জেআইএম