আমি যখন ৫ম শ্রেণিতে পড়ি তখন আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বাবা-মা বিয়ে দেয়। বাল্যবিয়ে হওয়ার কারণে আমার পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। বিয়ের সময় স্বামীর পারিবারিক আর্থিক অবস্থা ভাল ছিল। কিন্তু সর্বনাশা তিস্তার ভাঙনে ৪ বছরে সর্বশান্ত হয়ে যায়। বিয়ের ৫ বছরের মধ্যে আমার শ্বশুর বাড়ির লোকজন আমাদের পৃথক (আলাদা) করে দেয়। এরই মধ্যে মেরিনার সংসারে একটি পুত্র সন্তান আসে।১৯৯০ সালে খগাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের ফজলার ছেলে গোলাম মোস্তফার সঙ্গে ডোমার উপজেলা পাঙ্গা মটুকপুর ইউনিয়নের তিনবট গ্রামের হাসান আলীর মেয়ে মেরিনার বিয়ে হয়। তিন সন্তানের জননী মেরিনা বেগম স্বামীর আয়ের উপর নির্ভর না করে নিজেই স্বাবলম্বী হওয়ার পথ খুঁজতে থাকেন। এমন এক সময়ে পল্লীশ্রী ঘাতসহনশীল কমিউনিটি গঠন করার লক্ষ্যে কাজ শুরু করে। মেরিনা জনসংগঠনের সঙ্গে জড়িত হয় এবং নিয়মিত মিটিং এ অংশগ্রহণ করতে থাকে। মিটিংয়ের বিভিন্ন বিষয় আলোচনার মাধ্যমে এবং বাজার সম্প্রসারণ পরিকল্পনার মাধ্যমে বিকল্প আয়ের পথ খুঁজে পায়। তখন থেকেই তিনি তার আয়ের উৎস খুঁজতে শুরু করে। মেরিনা সংগঠনের দুধ উৎপাদক দলের সদস্য হওয়ায় প্রকল্পের গাভী পালন ও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। প্রশিক্ষণ নেয়ার পর তিনি গাভী পালনের আধুনিক কলাকৌশলগুলো ভালভাবে বুঝতে পারেন। মেরিনা একটি উন্নত জাতের গরু পালন করার স্বপ্ন দেখতে শুরু করলো এবং তার মনের কথাগুলো সিবিওর মিটিংয়ে আলোচনা করে। এমন সময় পল্লীশ্রী রিকল প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১৪ সালে সিবিওর হতদরিদ্র সদস্য মেরিনাকে উন্নত জাতের গরু প্রদান করে। মেরিনা গরু পাওয়ার ৭ দিনের মাথায় একটি বকনা বাছুর হয়। এতেই ঘুরে দাঁড়ায় হতদরিদ্র মেরিনা।ডিমলা উপজেলার খগাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের ৪নং ব্লকের মেম্বারপাড়া গ্রামে মেরিনার বাড়ি। মেরিনা গাভী থকে প্রতিদিন ১২-১৫লিটার দুধ বাজারে বিক্রি করে প্রতিদিন আয় করছে ২শ ৪০-৩শ টাকা। নিজের পরিবারের পুষ্টির চাহিদা মিটিয়ে বাজারে দুধ বিক্রি করে হয়ে উঠেছে স্বাবলম্বী। দুই ছেলে মেয়ের লেখাপড়ার পাশাপাশি মেরিনা ২ বছরের মধ্যে ৫০ হাজার টাকায় ১ বিঘা জমি বন্ধক নিয়েছে। এলাকার অন্যান্য নারীরা মেরিনার কাছে এসে তার পরিবর্তনের গল্প শুনে নিজেদের জীবনের পরিবর্তন করতে চায়। মেরিনা সকল নারীদের আয় করার পাশাপাশি স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য উৎসাহিত করে। পল্লীশ্রী রিকল প্রকল্পের সমন্বয়কারী পুরান চন্দ্র বর্মন জাগো নিউজকে বলেন, স্থায়ীত্বশীল আয়ের পথ সৃষ্টি করা গেলেই পরিবারের দারিদ্রতা কমে আসবে। তারা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় সক্ষম হবে। এজন্য প্রয়োজন জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি, গাভীর খাবার নিশ্চিত করা, বাসস্থান উন্নয়ন, উন্নত জাতের ঘাস চাষ, নারী পুরুষের কাজের সমন্বয় সাধন, ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা, বাজারের সাথে যোগসূত্র স্থাপন, জাত উন্নয়ন, বিদেশি জাতের গাভী পালন, দানাদার খাবারের ব্যবস্থা করা, প্রশিক্ষণ প্রদান, ফ্রি চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রদান করা।একজন সফল গাভী পালনকারী সদস্য হিসেবে মেরিনা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, দুধের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করার জন্য তিনি কালেকশন সেন্টারে দুধ দিচ্ছেন। ভবিষ্যতে মেরিনা নিজেকে একজন মডেল খামারি হিসেবে দেখতে চায়। এসএস/পিআর
Advertisement