জাতীয়

‘আমাদের কষ্ট কেউ বুঝবে না’

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত লকডাউনে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিংয়ের চালকরা। অ্যাপ বন্ধ, তাই ভাড়ায় বা খ্যাপে গাড়ি চালিয়ে তারা রোজগারের চেষ্টা করছেন। ট্রাফিক পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন অলিগলি ঘুরে যাত্রীদের পৌঁছে দিচ্ছেন তারা।

Advertisement

তবে ট্রাফিক পুলিশ রাস্তায় ধরে জরিমানা করছে— এমন অভিযোগ করে চালকরা বলছেন, জীবন বাঁচাতে জীবিকা প্রয়োজন। পুলিশের সঙ্গে এমন ‘ইঁদুর-বিড়াল খেলা’ বন্ধ করে দ্রুতই আগের মতো রাইড শেয়ারিং করতে চান তারা।

ঠিক কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, কবে আবার তারা গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামতে পারবেন— এ নিয়ে স্পষ্ট ধারণা নেই কারোরই। চালকরা বলছেন, রাইড শেয়ারিং এখন অনিশ্চিত পেশা হয়ে গেছে। এমন বাস্তবতায় অনেকে ভিন্ন পেশা খুঁজছেন তারা।

রোববার (২৫ এপ্রিল) মিরপুর ১০ নম্বর গোল চক্করে দাড়াতেঁই কয়েকজনকে মোটরসাইকেল নিয়ে এগিয়ে আসতে দেখা যায়। তারা জিজ্ঞেস করেন, ‘কোথায় যাবেন?’ একজন আবার বললেন, ‘চলেন, ভেতর দিয়ে নিয়ে যাবো’।

Advertisement

চালক শামসুদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখন সারাদিনে চারশ থেকে পাঁচশ টাকার ভাড়া পাওয়া যায়। রাস্তায় যাত্রী কম, তার ওপর পুলিশের মামলা আছে।

তিনি আরও বলেন, ‘কখনও এরকম অবস্থায় পড়িনি। এক বছর হলো, গাড়ি চলে আবার বন্ধ হয়। কী করব তাও বুঝে উঠতে পারছি না। পরিবার নিয়ে অনেক দিন অনাহারে থাকতে হয়েছে। আমাদের কষ্ট কেউ বুঝবে না।’

আরেক চালক মো. জয়নাল আবেদিন। তিন সন্তান আর স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন শান্তিনগরে। হার্ডওয়্যারের ব্যবসায় লোকসানের পর তিন বছর ধরে রাইড শেয়ারিং করছেন জয়নাল আবেদিন।

তিনি বলেন, ‘আমরা যারা রাইড শেয়ারিং করি, তাদের দিনে দিন খেতে হয়। এটা পুলিশ সদস্যরা বোঝেন না। তারা পিছনে একজন লোক দেখলে মামলা দেন। তারপরও আমরা যতটা পারি স্যাক্রিফাইস (ছাড়) করার চেষ্টা করি।’

Advertisement

জয়নাল আবেদিন বলেন, ‘আমরা সবাই সমস্যার মধ্যে আছি। এই রাইড শেয়ারিং করেই আমাদের চলতে হবে। লকডাউন শুরুর পরে থেকে স্বাভাবিক ভাবেই সবারই কষ্ট হচ্ছে। অনেকে যেভাবেই হোক বের হইছে। পুলিশি ঝামেলা সত্ত্বেও অনেকে বের হইছে। সংসার চালাতে হলে বের হতে হবেই।’

মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ারিং করেন আবির হোসেন সাগর। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘এই মাসের চার তারিখের পর যতদিন লকডাউন চলছে, ততদিনই বাসায় ছিলাম। ঘরে যখন চাল-ডাল ফুরিয়ে গেছে, তখন ভাড়ায় গাড়ি চালিয়েছি। রাস্তা-ঘাটে পুলিশি হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। ৩ থেকে ৫ হাজার টাকার মামলা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা আর ইনকাম করি কয় টাকা? সর্বোচ্চ সাতশ থেকে আটশ টাকা। কীভাবে মামলার টাকা দেবো, আর কীভাবে সংসার চালাবো? আমরা যারা এই পেশায় আছি, খুব কষ্টে আছি বলা যায়। আমাদের দেখার কেউ নেই!’

প্রায় তিন বছর ধরে রাইড শেয়ারিং করছেন আবির। স্ত্রী ও বাবা-মাকে নিয়ে থাকেন কামরাঙ্গিরচর। রাইড শেয়ারিং করে প্রত্যেক মাসে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা উপার্জন করা গেলেও এখন আর সেটা সম্ভব হচ্ছে না।

আগামী দিনে লকডাউন খুলে দিতে পারে। এমনটা জেনেও খুব বেশি খুশি নন তিনি। আবির বলেন, ‘লকডাউন যদি খুলে দেয় তাহলে পুলিশ আমাদের ধরবে। আমাদের বলবে রাইড শেয়ারিংয়ের জন্য অনমুতি দেয় নাই, আপনারা কেন নামলেন? তখন হয়তো একটা মামলা দেবে। খুব বেশি হলে এখন পাঁচশ থেকে সাতশ টাকা আয় হয়। এই টাকা দিয়ে সংসার চালানো সম্ভব না।’

অযথা মামলা দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে মিরপুর ১০ নম্বরে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ বিকাসুজ্জামান বলেন, ‘লকডাউনের নিয়মকানুন যারা ভঙ্গ করছে তাদের শাস্তি দেয়ার চেষ্টা করছি। লকডাউন না মেনে যারা বিনা প্রয়োজনে বের হচ্ছেন তাদের ঘরে পাঠিয়ে দিচ্ছি।’

এসএম/এমএসএইচ/এমকেএইচ